গণঅভ্যুত্থান ছাড়া খালেদা জিয়ার মুক্তি অসম্ভব: বিএনপি
২৪ নভেম্বর ২০১৯ ১৭:১২
ঢাকা: গণঅভ্যুত্থান ছাড়া খালেদা জিয়ার মুক্তি সম্ভব না বলে মনে করেন দলটির শীর্ষ নেতারা। তারা বলেছেন, ‘শেখ হাসিনা ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় খালেদা জিয়ার মুক্তি সম্ভব নয়। তাই গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে সরকারের পতন ঘটাতে হবে এবং খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে হবে। আর এ জন্য সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে প্রস্তুতি নিতে হবে।’
রোববার (২৪ নভেম্বর) বিকেলে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে আয়োজিত সমাবেশে দলটির শীর্ষ নেতারা এসব কথা বলেন। খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে ঢাকা মহানগর বিএনপি এ সমাবেশ আয়োজন করে।
ঢাকা মহানগর (দক্ষিণ) বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কাজী আবুল বাশারের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য দেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, গয়েশ্বরচন্দ্র রায়, মির্জা আব্বাস, ড. মঈন খান, সেলিমা রহমান, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান, নিতাই রায় চৌধুরী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম প্রমুখ।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ’১৬ কোটি মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতীক, স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বের প্রতীক দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য একটি গণঅভ্যুত্থান প্রয়োজন। সেই লক্ষ্যেই আমরা সমবেত হয়েছি।’
তিনি বলেন, ‘সম্পূর্ণ অন্যায় ও বেআইনিভাবে প্রায় ত্রিশ মাস ধরে তাকে আটক রাখা হয়েছে। আমরা জানি, কোনো কিছুতে জড়িত না থেকেও শুধুমাত্র প্রতিহিংসার কারণে তিনি এই সাজা পেয়েছেন। অথচ ওয়ান/ইলেভেনের সময় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে যেসব মামলা দেওয়া হয়েছিল, সেগুলো তুলে নেওয়া হয়েছে।’
‘আমাদের নেত্রীর বিরুদ্ধে মামলা ছিল মাত্র চারটি; সেখান থেকে আজ হয়েছে ৩৭টি। আর প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে মামলা ছিল ১৫টি; সেগুলো সব তুলে নেওয়া হয়েছে’— বলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেন, ‘এই সরকার জনগণের সরকার নয়। জনগণের কোনো ম্যান্ডেট তাদের নেই। তারা সম্পূর্ণ অবৈধভাবে, জোর করে ক্ষমতা দখল করে বসে আছে। আমরা খুব স্পষ্ট করে বলতে চাই, ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধ করেছিলাম স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্রের জন্য। মুক্তিযুদ্ধ করেছিলাম একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের জন্য। সেই গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থা ও স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব অক্ষুন্ন রাখার জন্য প্রয়োজনে আবারও রক্ত দেব।’
সরকার সব দিক দিয়ে ব্যর্থ হয়েছে অভিযোগ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘তারা বাংলাদেশ রাষ্ট্রের সমস্ত প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করে দিয়েছে। ফেইল স্ট্রেট বলে কাকে? যখন রাষ্ট্রের কোনো প্রতিষ্ঠান ঠিক মতো কাজ করে না। তারা হাজার হাজার পুলিশ নিয়োগ দিচ্ছে। অথচ ছিনতাই, হত্যা, রাহাজানি, ধর্ষণ— কোনো কিছুই কমছে না।’
‘তারা আইন করছেন সড়কে নিরাপত্তার জন্য। অথচ সড়কে প্রতিদিন হাজার হাজার লোক মরছে, আহত হচ্ছে, পঙ্গু হচ্ছে। আজ ব্যাংকগুলো ফাঁকা হয়ে গেছে। শেয়ারমার্কেট লুট হয়ে গেছে। ব্যাংকগুলো চলছে না। সমস্ত প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রণ নিজেদের হাতে নিয়ে তারা দেশ চালাতে চায়’— বলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেন, ‘এই সরকার আমাদের ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়েছে, কথা বলার অধিকার কেড়ে নিয়েছে। আজকের এই সমাবেশের অনুমতি দিয়েছে সকাল দশটার পরে। এর পরে আমরা আর অনুমতি নেব না। আমাদের যখন প্রয়োজন হবে, তখন সমাবেশ করব। কারণ, সমাবেশ আমাদের গণতান্ত্রিক অধিকার।’
সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘সমস্ত দল ও মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। সেই গণআন্দোলনের মধ্য দিয়ে তাদেরকে উৎখাত করতে হবে। কোনো বিভক্তি নয়, এক সাথে এক হয়ে গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে আমরা দেশনেত্রী মুক্ত করব।’
স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘আমাদের পররাষ্ট্রনীতি নতজানু, আমাদের ব্যাংকগুলো লুট হয়ে গেছে, শেয়ারমার্কেট লুট হয়েছে। এই সরকারের মাথা থেকে পা পর্যন্ত পচন ধরেছে। এই পচন থেকে যদি বাংলাদেশকে রক্ষা করতে হয়, তাহলে এই সরকারকে হঠাতে হবে। আর সেটা সম্ভব কেবল শেখ হাসিনার পতনের মাধ্যমে। শেখ হাসিনা ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় আমাদের নেত্রীর মুক্তি সম্ভব না। তাই এই সরকারের পতন ঘটিয়ে আমাদের নেত্রীকে মুক্ত করতে হবে।’
সরকারের পতনঘণ্টা বেজে গেছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘কয়েকদিন আগে কলকাতায় গিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘণ্টা বাজিয়ে ক্রিকেট ম্যাচ উদ্বোধন করেছেন। আমরা বলতে চাই, তার নিজের পতনঘণ্টা বেজে গেছে। আপনারা যদি জনগণকে সঙ্গে নিয়ে স্পাতকঠিন ঐক্য তৈরি করে একটা ধাক্কা দিতে পারেন, তাহলে এই সরকার আর টিকে থাকতে পারবে না।’