খুব খারাপ কাজ হয়েছে: শেখ হাসিনা
১৮ ডিসেম্বর ২০১৯ ১৮:৪৩
ঢাকা: মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয় থেকে ঘোষিত রাজাকারদের তালিকায় ভুল-ভ্রান্তি প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, কীভাবে রাজাকারদের তালিকায় মুক্তিযোদ্ধাদের নাম চলে এলো তা রহস্যজনক। তালিকা প্রকাশ করতে গিয়ে মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয় গোলমাল করে ফেলেছে। এই তালিকাটি নিয়ে ভুল বোঝাবুঝি তৈরি হয়েছে। এটি খুব খারাপ কাজ হয়েছে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘এটি খুব কষ্টের বিষয়। যার পরিবার সদস্যরা শহীদ হয়েছেন, যুদ্ধ করেছেন। তাদের যদি রাজাকার শব্দটি শুনতে হয় তাহলে খারাপ লাগারই কথা। আমি বলব, যারা দুঃখ পেয়েছেন তারা শান্ত হোন। যারা মুক্তিযোদ্ধা তারা কোনোদিনও রাজাকারের তালিকায় থাকতে পারে না। এটি হতে পারে না।’
আরও পড়ুন- এই ভুলে প্রধানমন্ত্রীও আহত হয়েছেন: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
গণভবনে আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের সভায় আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বুধবার (১৮ ডিসেম্বর) এ কথা বলেন।
আওয়ামী লীগ সভাপতি আরও বলেন, ‘আমি মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রীকে বলেছিলাম, তালিকাগুলো নিয়ে ভালোভাবে যাচাই-বাছাই করতে হবে। এত তাড়াতাড়ি এটি প্রকাশ করার কথা না। তাও বিজয় দিবসের আগে। এত সুন্দর বিজয় দিবস উদযাপন করলাম, কিন্তু শহীদ পরিবার, মুক্তিযোদ্ধা পরিবার এতে কষ্ট পেয়েছে। তালিকাটি সময় নিয়ে প্রকাশ করা দরকার ছিল। আসলে আমিও ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলাম সবদিক সময়মতো খেয়াল রাখতে পারিনি।’
আরও পড়ুন- রাজাকারের বিতর্কিত তালিকা স্থগিত
শেখ হাসিনা বলেন, ‘রাজাকারদের তালিকা করতে গিয়ে, স্বাধীনতার পর যাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছিল তাদের তালিকাও ঢুকে পড়েছে। ১৯৭১ সালে যারা মুক্তিযুদ্ধে গিয়েছিল তাদের অনেককেই পাকিস্তান দুর্বৃত্ত-সন্ত্রাসী হিসেবে চিহ্নিত করে মামলা দিয়েছিল। জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় এসে আওয়ামী লীগের নেতাদের তালিকা ধরে ধরে কষ্ট দিয়েছে। এরশাদের সময়ও এটি ব্যবহার করা হয়েছে। কিশোরগঞ্জে ১ নম্বর সন্ত্রাসীর তালিকায় নাম ছিল জিল্লুর রহমানের। আমরা ক্ষমতায় এসে এটি অমিট করতে বলেছিলাম।’
আওয়ামী লীগ সভাপতি আরও বলেন, ‘তালিকা করতে গিয়ে এখানে ভুল হয়েছে। সবমিলিয়ে মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয় একটা গোলমাল করে ফেলেছে। যারা মুক্তিযোদ্ধা এ রকম একহাজার জনের মতো নাম দেওয়া হয়েছে। সেটি কীভাবে ওই তালিকায় চলে গেল এটি একটি রহস্য। রাজাকারদের তালিকা তার তো গেজেট করা আছে। আলবদর, আলশামস এদের গেজেট করা আছে। আমরা যখন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল করলাম ওই গেজেট থেকে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। কাজেই যে তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে তা কোনোমতেই রাজাকারের তালিকা নয়। যাদের ওই সময়ে জন্ম হয়নি এমন অনেকেরই নামই তালিকায় ঢুকে গেছে।’
আরও পড়ুন- ‘কারচুপি করে তালিকায় মুক্তিযোদ্ধাদের নাম লেখা হতে পারে’
সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আরও বলেন, ‘ভালো কাজ করলে সবার সহযোগিতা পাওয়া যায়। সবার সহযোগিতায় উন্নয়নের চাকা ধরে রাখা সম্ভব হয়েছে। যার ফলাফল জনগণ পাচ্ছে।’
‘আমরা যে উন্নয়ন করেছিলাম ২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় এসে নষ্ট করে দিয়েছিল। ২০০৯ সালে আমরা ক্ষমতায় এসে আবার উন্নয়নগুলো নতুন করে শুরু করলাম। কাজেই বাংলাদেশের যে উন্নয়ন শুরু হয়েছে তার অগ্রযাত্রা কেউ থামিয়ে রাখতে পারবে না। সরকারের ধারাবাহিকতা বজায় থাকলে বাংলাদেশ অভীষ্ট লক্ষ্যে এগিয়ে যাবে’ বলেন শেখ হাসিনা।
আরও পড়ুন- রাজাকারের তালিকা আরও আগে হলে ভালো হতো: পররাষ্ট্রমন্ত্রী
শেখ হাসিনা আরও বলেন, ‘আমরা দারিদ্রের হার ১৬/১৭ তে নামিয়ে আনতে সক্ষম হবো। আমরা উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছি। উন্নয়নশীল দেশের ধারাবাহিকতা অক্ষুণ্ন রাখার জন্য যে তিনটি ক্রাইটেরিয়া দরকার তা আমরা এরইমধ্যে অর্জন করে দেখিয়েছি। ক্রাইটেরিয়াগুলো আমরা সামনে আর অর্জন না করলেও উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে আমরা তালিকায় থাকব। তারপরও আমরা আমাদের লক্ষ্যগুলো পূরণ করতে চাই।’
আরও পড়ুন-
রাজাকারের তালিকায় মুক্তিযোদ্ধার নাম
১০ হাজার ৭৮৯ জন রাজাকারের তালিকা প্রকাশ
রাজাকারের তালিকা নিয়ে বিজ্ঞপ্তিতে ‘ব্যাখ্যা’ দিলেন মন্ত্রী
৪৮ বছর পর রাজাকারের তালিকা কেন?— প্রশ্ন বিএনপির
রাজাকারের তালিকায় মুক্তিযোদ্ধার নাম, মন্ত্রীর দুঃখপ্রকাশ
‘রাজাকারের তালিকা সংশোধন করে প্রকাশের নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর’
‘রাজাকারের তালিকায় ভুল অমার্জনীয়, দোষীদের ক্ষমা চাওয়া উচিত’
রাজাকারের তালিকা থেকে নাম প্রত্যাহারে গোলাম আরিফ টিপুর আবেদন
‘রাজাকারের তালিকা থেকে কিছু নাম বাদ দিতে বলেছিলাম, সেটা আসেনি’