Monday 25 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

সাড়ে ৭শ কোটি টাকায় নিরাপদ চ্যানেল হবে মোংলা বন্দরে


২৭ ডিসেম্বর ২০১৯ ০৯:৪৫

ঢাকা: বাংলাদেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে মোংলা বন্দরের ভূমিকা বিবেচনায় রেখে এই বন্দরের নানামুখী উন্নয়নে বিভিন্ন কার্যক্রম হাতে নিয়েছে সরকার। এরই ধারাবাহিকতায় সমুদ্রগামী জাহাজ সুষ্ঠুভাবে হ্যান্ডলিংয়ের সক্ষমতা অর্জনের লক্ষ্যে এবার মোংলা বন্দরে নিরাপদ চ্যানেল তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। ৭৬৭ কোটি ২৫ লাখ টাকার একটি প্রকল্পের মাধ্যমে এ উদ্যোগ বাস্তবায়িত হলে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়াতে জরুরি উদ্ধার কাজও পরিচালন করা সম্ভব হবে।

বিজ্ঞাপন

পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা গেছে, ‘মোংলা বন্দরের জন্য সহায়ক জলযান সংগ্রহ’ নামের প্রকল্পটি হাতে নিচ্ছে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়। প্রকল্পটি এরই মধ্যে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় উপস্থাপনের উপযোগীও করা হয়েছে। একনেকে অনুমোদন পেলে ২০২২ সালের ৩০ জুনের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ।

পরিকল্পনা কমিশনের একাধিক কর্মকর্তা সারাবাংলাকে বলেন, প্রকল্পটির প্রস্তাব পাওয়ার পর চলতি বছরের জুলাইয়ে প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় প্রকল্পের জন্য বেশকিছু সুপারিশ দেওয়া হয়। সেসব সুপারিশ বাস্তবায়ন করে উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) পুর্নগঠন করা হয়েছে। ফলে প্রকল্পটি এবার একনেক সভায় উপস্থাপন করা হবে।

প্রকল্পটির দায়িত্বপ্রাপ্ত পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য শামীমা নার্গিস সারাবাংলাকে বলেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়নের মাধ্যমে মোংলা বন্দরে আগত প্রত্যাগমনকারী জাহাজগুলোর সুষ্ঠু হ্যান্ডলিং, দ্রুত পাইলটিং ও পাইলটদের নিরাপদ অবস্থান নিশ্চিত করা যাবে। একইসঙ্গে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় জরুরি উদ্ধার কাজ পরিচালনা করাও সম্ভব হবে।

নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে বড় অবদান রেখে আসছে মোংলা বন্দর। সক্ষমতা ও ব্যবহার বাড়লে বন্দরটি দেশের অর্থনীতিতে আরও বেশি ভূমিকা রাখতে পারবে। সে কারণেই বন্দরটি ঘিরে বেশকিছু উন্নয়ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন শুরু করেছে সরকার। খুলনা-মোংলা রেললাইন স্থাপন, খানজাহান আলী বিমানবন্দর নির্মাণ, রামপালে কয়লাভিত্তিক ১৩২০ মেগাওয়াট সক্ষমতার বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ, মোংলা বন্দর এলাকায় বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপন ও মোংলা ইপিজেড সংরক্ষণ প্রভৃতি প্রকল্প এগিয়ে চলছে দ্রুতগতিতে। এছাড়া পদ্মাসেতুর নির্মাণ কাজ শেষ হলে সেটিও মোংলা বন্দরের ব্যবহারে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। সরকার আশা করছে, ২০২০-২১ সালের মধ্যে এসব উন্নয়ন কার্যক্রম শেষ হবে।

বিজ্ঞাপন

নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় বলছে, পদ্মাসেতুর নির্মাণ কাজ শেষ হলে ঢাকা ও ঢাকার আশপাশের আমদানি-রফতানি পণ্য, বিশেষ করে তৈরি পোশাক মোংলা বন্দরের মাধ্যমে রফতানি হওয়ায় সহজ সুযোগ তৈরি হবে। ভারত-বাংলাদেশ যৌথ উদ্যোগে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলা হলেও মোংলা বন্দরে নতুন নতুন পণ্য আমদানি-রফতানির দ্বার উন্মোচিত হবে। এছাড়া বাংলাদেশের সীমান্ত সংলগ্ন ভারত, নেপাল ও ভুটানের ট্রানজিট পণ্য এ বন্দরের মাধ্যমে রফতানি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ফলে আগামী দিনগুলোতে মোংলা বন্দরের ব্যবহার বহুগুণে বাড়বে।

মোংলা বন্দর ঘিরে গৃহীত প্রকল্পের সমীক্ষা প্রতিবেদন থেকে দেখা যায়, মোংলা বন্দরে ২০২৫ সালে ৮ লাখ ৭২ হাজার টিইউজে কন্টেইনার এবং ২০৪৯ সালে ৪৫ লাখ ৩২ হাজার টিইউজে কন্টেইনার এবং ৩০ হাজারেরও বেশি গাড়ি হ্যান্ডলিংয়ের সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়া রামপালে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের পর বার্ষিক ৪৫ লাখ মেট্রিক টন কয়লা কাঁচামাল হিসেবে আমদানি করতে হবে। সে হিসাবে ২০১৮-১৯ সালের পর এই বন্দরে প্রতিদিন জাহাজের আগমন-নির্গমণ বাড়বে। এই সমুদ্রগামী জাহাজগুলো বন্দরে আনা-নেওয়া, তীরে ভেড়ানোর জন্য বাড়তি সক্ষমতার প্রয়োজন হবে।

মন্ত্রণালয় বলছে, মোংলা বন্দরে জাহাজের আসা-যাওয়া বাড়লে সার্বিক সেবা নিশ্চিত করতে বন্দরের ১৪৫ কিলোমিটার চ্যানেলে নিয়মিত সার্ভের মাধ্যমে নাব্য নিশ্চিত করতে হবে, পাশাপাশি বন্দরে যাতায়াতকারী জাহাজগুলোর সুষ্ঠু হ্যান্ডলিং ও দ্রুত পাইলটিং পরিবহন এবং পাইলটদের নিরাপদ অবস্থান নিশ্চিত করতে হবে। দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় জরুরি উদ্ধার কাজ পরিচালনার সক্ষমতাও থাকতে হবে। এর জন্য নিরাপদ চ্যানেল তৈরি জরুরি। আর এই নিরাপদ চ্যানেল তৈরিতেই বয়া ও অন্যান্য নৌসহায়ক যন্ত্রপাতি স্থাপনের কাজ পরিচালনার জন্য একটি পাইলট মাদার ভেসেল, দুইটি টাগ বোট, একটি সার্চ অ্যান্ড রেসকিউ ভেসেল, একটি সার্ভে অ্যান্ড রিসার্চ ভেসেল ও একটি বয়া লেইং ভেসেল সংগ্রহের প্রস্তাব করা হয়েছে প্রকল্পে।

জাহাজ হ্যান্ডলিং নিরাপদ চ্যানেল মোংলা বন্দর

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর