এমপি মান্নানকে স্মরণ করে সংসদে শোকাতুর শেখ হাসিনা
১৯ জানুয়ারি ২০২০ ২১:১৮
সংসদ ভবন থেকে: বগুড়া-১ আসনের সদ্যপ্রয়াত সংসদ সদস্য (এমপি) আব্দুল মান্নানকে স্মরণ করে সংসদে শোকাতুর হয়ে পড়েন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দুঃখ ভারাক্রান্ত কণ্ঠে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের দুঃসময়ে, বিশেষ করে পঁচাত্তরের পর যেসব ছাত্রনেতারা বিরাট অবদান রেখে গেছেন, সেসব ছাত্রনেতারা চলে (মারা) যাচ্ছেন। আমার হাতে গড়া ছাত্রনেতারা এভাবে চলে যাচ্ছে, এটা সত্যি দুঃখজনক।
রোববার (১৯ জানুয়ারি) স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে একাদশ জাতীয় সংসদের ষষ্ঠ অধিবেশনে আব্দুল মান্নানের মৃত্যুতে আনীত শোক প্রস্তাবের আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এ কথা বলেন।
আরও পড়ুন- মারা গেলেন বগুড়ার এমপি আব্দুল মান্নান
আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুল মান্নানের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। তিনি বলেন, এটা খুব দুঃখজনক। ছাত্রজীবন থেকেই সরকারবিরোধী আন্দোলন, এরশাদবিরোধী আন্দোলন, খালেদাবিরোধী আন্দোলনে বলিষ্ঠ ভূমিকা রেখেছে। সে আমাদের বিভিন্ন সংগঠনে যুক্ত ছিল। অত্যন্ত দক্ষ ও মেধাবী ছিল। আমাদের প্রচার সম্পাদক থাকার সময় প্রতিদিন লিফলেট বিবৃতি লেখাতাম তাকে দিয়ে। সে চমৎকারভাবে সেগুলো লিখত। যখন যে কাজ দিয়েছি, খুবই দক্ষতার সঙ্গে সে কাজগুলো করতে পেরেছে।
শেখ হাসিনা বলেন, পরপর তিনজন সংসদ সদস্য চলে গেলেন। এরকম সবাই যদি চোখের সামনে চলে যায়, সেটা সত্যিই দুঃখজনক। এভাবে বিভিন্ন নেতার প্রয়াণ দেশের জন্য ক্ষতিকর, যদিও মৃত্যু অবধারিত। জন্মিলে মরতে হবে। সে এভাবে চলে যাবে, সত্যিই খুব কষ্টকর। আজ তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি। আল্লাহর কাছে দোয়া করি, ওকে যেন বেহেশত নসিব করেন।
আরও পড়ুন- এমপি আব্দুল মান্নানের মৃত্যুতে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর শোক
আব্দুল মান্নানের অসুস্থতার প্রসঙ্গ টেনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মৃত্যুর ঠিক দু’দিন আগেই তার সঙ্গে আমার অনেক কথা হয়েছে। কেন্দ্রীয় কমিটিতে আসতে না পারায় তার মনে একটু দুঃখ ছিল। আমি বলেছিলাম, তুমি আমাদের দলে আছ এবং থাকবে। তোমাকে তো আমি মনোনয়ন দিয়েছি। তুমি সংসদ সদস্য হয়েছ। আমি বললাম, তোমার শরীরটা মনে হয় খারাপ। তুমি চিকিৎসা নাও। হাসপাতালে ভর্তি হও। ঠিক তার পরপরই সে হাসপাতালে ভর্তি হলো। যেদিন সে মারা গেল, আগের রাতেও আমি ডাক্তারের সঙ্গে কথা বললাম। ডাক্তার আপা আমাকে বললেন, ওর অবস্থা কিন্তু ভালো না। আমরা কিছু করতে পারব না। দেশের বাইরে যদি পাঠাতে পারি…। কিন্তু অবস্থা এমন হয়ে গেছে যে বাইরে পাঠানোর মতোও নেই। পরদিন সকালবেলায় তার মৃত্যুর খবর পেলাম।
শেখ হাসিনা বলেন, সে বগুড়ায় একট বৈরী পরিবেশে রাজনীতি করেছে। বিশেষ করে বগুড়ায় নির্বাচনে জেতা কঠিন ছিল। যে কারণে আমি বারবার ওই এলাকায় গিয়েছি। নদী ভাঙন থেকে শুরু করে রাস্তাঘাটের অনেক উন্নয়নের কাজ এলাকায় করা হয়েছে। আমরা যখন উন্নয়ন করি, তখন সব জায়গায় সমানভাবেই করি। জায়গার সঙ্গে আমাদের কোনো বৈরিতা নেই। সে যখনই যে কাজ নিয়ে এসেছে, সে কাজ করে দিয়েছি।
আরও পড়ুন- যুক্তরাষ্ট্র থেকে মেয়ে ফিরলে এমপি মান্নানের দাফন
রাজনীতির ধারাবাহিকতার কথা তুলে ধরে সংসদ নেতা বলেন, আমাদের হাতে গড়া ছাত্রনেতাদের অনেকেই মারা যাচ্ছে। আবার আমাদের হাতে গড়া ছাত্রনেতারাই ভবিষ্যতে নেতৃত্ব দেবে। আমরা যখন থাকব না, তখন দেশ ও দলকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।
শোক প্রস্তাবে আলোচনায় আরও অংশ নেন সরকারি দলের শেখ ফজলুল করিম সেলিম, তোফায়েল আহমেদ, মো. নাসিম, বেগম মতিয়া চৌধুরী, কৃষিমন্ত্রী আবদুর রাজ্জাক, শাহজাহান খান, গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম, পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমদ পলক, জাতীয় পার্টির মশিউ রহমান রাঙ্গা, পীর ফজলুর রহমান, ঐক্যফ্রন্টের সুলতান মোহাম্মদ মনসুর, সরকারি দলের মহিউদ্দিন খান আলমগীর, উপাধ্যক্ষ আব্দুস শহীদ, মৃণাল কান্তি দাস, মোসলেম উদ্দিন, নজরুল ইসলাম বাবু, আনোয়ার আবেদীন খান, তাজুল ইসলামসহ অন্যরা।
আলোচনার পর সর্বসম্মতভাবে শোক প্রস্তাবটি গৃহীত হয়। এরপর দাঁড়িয়ে এক মিনিট নিরবতার পর মরহুমের রুহের মাগফিরাত কামনা করে দোয়া ও মোনাজাত করা হয়। এরপর চলতি সংসদের এমপি আবদুল মান্নানের মৃত্যুতে রেওয়াজ অনুযায়ী সংসদের অধিবেশন মুলতবি করা হয়।
অধিবেশন মুলতবি এমপি আব্দুল মান্নান শোক প্রস্তাব সংসদ অধিবেশন সংসদে শেখ হাসিনা