Friday 27 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বিদেশে বিরোধের শোধ নিতে দেশে যুবককে আটকে নির্যাতন


২৩ জানুয়ারি ২০২০ ১৮:২০

চট্টগ্রাম ব্যুরো: সাত বছর আগে মধ্যপ্রাচ্যে থাকার সময় পুলিশে ধরিয়ে দেওয়ার প্রতিশোধ নিতে চট্টগ্রাম নগরীতে এক যুবককে প্রায় ১২ ঘণ্টা জিম্মি করে নির্যাতনের অভিযোগ পাওয়া গেছে। পুলিশ ১২ ঘণ্টা পর নির্যাতনের শিকার ওই যুবককে উদ্ধারের পাশাপাশি অভিযুক্ত হিসেবে তার বন্ধু ও তিন সহযোগীকে গ্রেফতার করেছে।

বুধবার (২২ জানুয়ারি) দিবাগত রাত সাড়ে তিনটার দিকে নগরীর পাহাড়তলী থানার ঈদগাহ কাঁচা রাস্তার মোড়ে একটি ফ্ল্যাটে জিম্মি অবস্থা থেকে ওই যুবককে উদ্ধার করা হয় বলে জানিয়েছেন কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মহসীন।

বিজ্ঞাপন

নির্যাতনের শিকার যুবক মো. জিহান উদ্দিন (২৯) চট্টগ্রাম নগরীর চকবাজার থানার চট্টেশ্বরী সার্কেলের রাহাত গার্নেট নামে একটি ভবনে দ্বিতীয় তলায় থাকেন।

গ্রেফতার চারজন হলেন- রুবেল আহম্মেদ টিটু (৩০), মো. আরিফ (৩১), ইয়াছিন আরাফাত (৩০) এবং মিনহাজ আলম (৩০)।

ওসি মহসীন সারাবাংলাকে বলেন, ‘গ্রেফতার চারজনই অভিজাত পরিবারের সন্তান এবং শিক্ষিত। ইয়াছিন ও মিনহাজ প্রতিষ্ঠিত কোম্পানিতে উচ্চপদে চাকরি করেন। কিন্তু চারজনই নগরীর ঈদগাহ কাঁচারাস্তার মোড়ে সুবসতি নামে একটি ভবনের সপ্তম তলার টিটুর ফ্ল্যাটকে মাদক সেবনের আস্তানা বানিয়েছিল। সেখানে বসে তারা নিয়মিত মদ-ইয়াবা সেবন করত। অভিযানের সময় ওই বাসায় ইয়াবা সেবনের সরঞ্জামও পাওয়া গেছে।’

জিহান উদ্দিন সারাবাংলাকে জানান, ‘তার বাবা আবুধাবিতে ব্যবসা করতেন। ২০০৭ সালে বাবার সঙ্গে জিহানও আবুধাবি চলে যান। গ্রেফতার রুবেল আহম্মেদ টিটুও আবুধাবি থাকতেন। পাশাপাশি বাসা হওয়ায় জিহানের সঙ্গে রুবেলের ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্ব হয়। ২০১৬ সালের মার্চে জিহান আবুধাবি থেকে ওমানে চলে যান। ২০১৭ সালে আবুধাবিতে এক সড়ক দুর্ঘটনায় তার বাবা মারা যান। ২০১৯ সালের এপ্রিলে ওমান থেকে দেশে ফেরত আসেন জিহান।

বিজ্ঞাপন

জিহানের দাবি, টিটু আবুধাবিতে থাকার সময় মাদকাসক্ত হয়ে পড়ে। বাংলাদেশ থেকে বিভিন্নজনের মাধ্যমে ইয়াবা নিয়ে সেবন করতেন। জিহান আবুধাবি পুলিশের সঙ্গে দোভাষী হিসেবে কাজ করতেন। সে ইয়াবা আসক্ত টিটুকে ২০১৩ সালে পুলিশে ধরিয়ে দেন। জেল থেকে ছাড়া পেয়ে ২০১৪ সালে টিটু দেশে ফিরে আসেন। গত বছর জিহান দেশে ফেরার পর টিটুর সঙ্গে আবার যোগাযোগ হয়। বুধবার বিকেলে টিটু জিহানকে ফোন করে তার ঈদগাহের বাসায় যেতে বলে। টিটু জানায়, সে কাতার চলে যাবে, এজন্য তার কিছু পরামর্শ লাগবে। বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে চট্টেশ্বরী মোড় থেকে জিহানকে নিয়ে টিটু ওই ফ্ল্যাটে যায়।’

‘ফ্ল্যাটে নেওয়ার পর প্রথমে আমার সঙ্গে খুব ভালো আচরণ করে। সেখানে আগে থেকে আরিফ ছিল। সম্ভবত দুজন মিলে ইয়াবা সেবন করেছিল। হঠাৎ টিটুর আচরণ চেইঞ্জ হয়ে যায়। সে বলে- ২০১৩ সাল আমাকে ফিরিয়ে দে, তোর জন্য আমার কোটি কোটি টাকা নষ্ট হয়েছে, আমাকে দেশে ফিরে আসতে হয়েছে, আমার সেই সময়গুলো ফেরত দে। এসব বলতে বলতে আমাকে হাতুড়ি দিয়ে পেটাতে থাকে। মাথা ধরে দেওয়ালের সঙ্গে আছড়াতে থাকে। এক পর্যায়ে আমি অজ্ঞান হয়ে পড়ি। এরপর ছুরি এনে আমাকে মেরে ফেলার হুমকি দেয়। তখন আরিফ তাকে বাধা দেয়।’- বলছিলেন জিহান।

জিহান আরও বলেন, ‘মারধরের আগে আমার মোবাইল কেড়ে নিয়েছিল। পরে মোবাইল ফেরত দিয়ে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করে বিকাশে ৫০ হাজার টাকা পাঠানোর জন্য চাপ দেয়। বিকাশ অ্যাকাউন্ট থাকা দুটি মোবাইল নম্বরও দেওয়া হয়। আমি আমার মাকে ফোন করে বলি- আমাকে অপহরণ করা হয়েছে, বিকাশে যেন টাকা পাঠানো হয়। অপহরণ করা হয়েছে বলায় টিটু আবারও আমাকে মারধর শুরু করে। বিকাশে দেড় হাজার টাকা পাঠানোর পর মারধর বন্ধ করে। রাত ১০টার দিকে ইয়াছিন ও মিনহাজ ওই বাসায় যায়। আমাকে এক রুমে আটকে রেখে তারা চারজন মিলে সেখানে বসে মাদক সেবন করে। টিটু তাদের বলে, পুলিশকে খবর দাও, জিহানকে ইয়াবা দিয়ে ধরিয়ে দাও। সে আমার জীবন নষ্ট করে দিয়েছে।’

অভিযানে নেতৃত্ব দেওয়া নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) পংকজ বড়ুয়া সারাবাংলাকে বলেন, ‘জিহানের বোন গত (বুধবার) রাতে থানায় এসে তার ভাইকে অপহরণ করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন। আমরা বিকাশ নম্বর অনুসরণ করে অভিযানে নেমে প্রথমে নগরীর ও আর নিজাম রোড থেকে ইয়াছিন ও মিনহাজকে গ্রেফতার করি। এরপর তাদের নিয়ে রাত সাড়ে তিনটায় টিটুর ফ্ল্যাটে অভিযান চালিয়ে জিহানকে উদ্ধার করি এবং টিটুকে গ্রেফতার করি।’

গ্রেফতার রুবেল আহম্মেদ টিটু সারাবাংলাকে বলেন, ‘জিহানের বক্তব্য সত্য নয়। আবুধাবিতে আমাকে গ্রেফতার করা হয়েছিল ভিসা সংক্রান্ত কারণে, ইয়াবা সেবনের জন্য নয়। আমি তার কাছ থেকে ৩ লাখ ৬০ হাজার টাকা পাই। হ্যান্ড ক্যাশ পাই আরও প্রায় ৬০ হাজার টাকা। সেই টাকা উদ্ধারের জন্য আমি তাকে বাসায় নিয়েছিলাম। সেখানে আমি তাকে মারধর করেছি। এটা উচিত হয়নি।’

তবে জিহানের দাবি- টিটু তার কাছে কোনো টাকা পাবে না। বরং টিটুর কাছে তিনি ৫০০ দিরহাম পান। আবুধাবিতে তাকে পুলিশের কাছে দেওয়ার প্রতিশোধ নিতে টিটু এই কাজ করেছে।

এই ঘটনায় জিহানের বড় বোন বাদি হয়ে চারজনের বিরুদ্ধে কোতোয়ালি থানায় মামলা দায়ের করেছেন।

টপ নিউজ দেশ নির্যাতন বিদেশ যুবক

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর