চীন থেকে আসা বাংলাদেশিদের জন্য প্রস্তুত আশকোনা হজ্জ ক্যাম্প
৩১ জানুয়ারি ২০২০ ১৭:১২
ঢাকা: চীনের হুবেই শহর থেকে দেশে আনা হচ্ছে ৩৬১ জন বাংলাদেশিকে। শনিবার (১ ফেব্রুয়ারি) ভোরে বাংলাদেশে পৌঁছাবেন তারা। এর পরবর্তী ১৪ দিন নিবিড় পর্যবেক্ষণের জন্য তাদের রাখা হবে আশাকোনার হজ ক্যাম্পে স্থাপিত ‘আইসোলেশন ইউনিটে’। এরই মধ্যে ‘আইসোলেশন ইউনিটে’ প্রায় সব প্রস্তুতি নিয়ে রাখা হয়েছে।
দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে জানা গেছে, হাজী ক্যাম্পের ৩ তলার ৪টি ডরমেটরিতে ৩৬১ জনকে রাখা হবে। প্রতিটি ডরমেটরিতে ১০০ জনের থাকার ব্যবস্থা করা হবে। সেখানে বিছানা, চাদর, বালিশ, মশারি, মেডিসিন, পানি, লাইট, টয়লেট থাকবে। সকাল ও বিকেলের নাস্তাসহ ৫ বেলা খাবারের ব্যবস্থা থাকবে। শিশু ও নারীদের জন্যও থাকবে আলাদা খাবার ও থাকার ব্যবস্থা।
তারা যেন বাইরে বের না হোন সেজন্য তৃতীয় তলার সিড়ির প্রবেশ পথে কলাপসিবল গেইট লাগিয়ে দেওয়া হবে। যাতে ১৪ দিনের মধ্যে কেউ বাইরে যেতে না পারেন। আর যারা সেবা দেবেন তাদেরকেও বিশেষভাবে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিয়ে তারা ৩৬১ জনকে সেবা দেবেন। এছাড়া হজ ক্যাম্পে একটি অফিস থাকবে যার মাধ্যমে সবকিছু পরিচালিত হবে।
পুরো প্রকিয়ার মধ্যে নিরাপত্তার জন্য পুলিশ, সেনাবাহিনী ও বিজিবি থাকবে। এছাড়া ইমিগ্রেশনসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিনিধিরাও দায়িত্ব পালন করবেন। আর হজ্জ ক্যাম্পে থাকা অবস্থায় কেউ অসুস্থ হলে তাদের কুর্মিটোলা হাসপাতাল, সিএমএইচ বা কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে নেওয়া হবে। সেখানে যথাযথ চিকিৎসা সেবা দেওয়া হবে।
উহানে যাচ্ছে বিমানের বিশেষ ফ্লাইট, ফিরবে ৩৬১ বাংলাদেশি
চীনে ২১৩ মৃত, বিশ্বজুড়ে জরুরি অবস্থা ঘোষণা
চীনের উহান থেকে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের ফিরিয়ে আনা হচ্ছে
‘করোনাভাইরাস ঠেকাতে চীন থেকে আসা যাত্রীদের স্ক্যানিং করা হচ্ছে’
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, চীন থেকে ৩৬১ জনকে আনতে বিশেষ বিমানটি ছেড়ে গেছে বিকেল ৫টায়। বিমানটিতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও সেনাবাহিনীর ৪ থেকে ৫ জন ডাক্তার আছেন। বিমানে থাকবে মাস্ক, গাউন, মেডিসিনসহ যাবতীয় সুরক্ষা ব্যবস্থা। ঢাকায় আসার পর তাদেরকে বিশেষ ব্যবস্থায় বিমানবন্দর থেকে হজ্জ ক্যাম্পে রাখা হবে। সেজন্য একটি কোর টিমও তৈরি করা হয়েছে। যার মাধ্যমে কাজটি করা হবে।
চীনের উহান শহরে থাকা বাংলাদেশিদের মধ্যে যারা আগ্রহী এবং যারা রেজিস্ট্রেশন করেছেন আপাতত তাদেরই আনা হচ্ছে। এর মধ্যে ১৯টি পরিবার, ২০ জন শিশু। এরমধ্যে দুটি শিশুর বয়স ২ বছরের নিচে।
চীনের উহান প্রদেশের ২২টি সিটিতে বাংলাদেশের নাগরিক থাকে। এরমধ্যে বাংলাদেশ এখন শুধুমাত্র উহানে যারা আছে তাদের ফিরিয়ে আনবে। বাকি শহরগুলোতে থাকা কোনো নাগরিককে এখন দেশে আনা হবে না।
উহান শহরে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার পর চীন সরকার কাউকেই দেশের বাইরের যাওয়ার অনুমতি দেয়নি। পরে বাংলাদেশের ৩৬১ জনকে ফেরত পাঠাতে চায় চীন সরকার। এরপরই প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে জরুরিভাবে তাদেরকে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
চীনের উহান থেকে বাংলাদেশিদের ফিরিয়ে আনতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার পরেই পররাষ্ট্র, স্বাস্থ্য ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় বিষয়টি নিয়ে তোড়জোড় শুরু করেন। এরপরেই শুক্রবার সংবাদ সম্মেলনে বিস্তারিত তথ্যগুলো জানিয়ে দেওয়া হয়।
এ বিষয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক সারাবাংলাকে বলেন, ‘যারা দেশে আসবেন তাদের আত্মীয় স্বজনরা দেখা করার জন্য ব্যাকুল থাকবেন সেটাই। তবে তাদের তাড়াহুড়ো করল চলবে না। আমরাই তাদের সময়মত খবর দেব। আমরা চাই তারা আসার পর হজক্যাম্পে যেন কোনো বিশৃঙ্খলা তৈরি না হয়। আমরা যেমন নাগরিকদের আনতে প্রস্তুত। তবেও এটাও দেখার দায়িত্ব যে কেউ সংক্রামিত হলে সেটা যেন ছড়িয়ে না পড়ে। দেশের নিরাপত্তা সবচেয়ে আগে।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. আব্দুল মোমেন বলেন, আমরা এখন শুধু উহান সিটিতে যারা থাকে তাদেরকে দেশে ফিরিয়ে আনার কাজ করছি। বাকি শহরগুলোতে যারা আছে তাদেরকে আপাতত ফিরিয়ে আনার কোনো পরিকল্পনা নেই।
দুর্যোগ ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ড. এনামুর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, আমরা আমাদের কাজ করে যাচ্ছি। চেষ্টার কোনো কমতি নেই। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে আমরা যাবতীয় কাজ করতে দ্রুত নির্দেশ দিয়েছি। এজন্য ৪টি কমিটি গঠন করে দেওয়া হয়েছে। সেই কমিটির সদস্যরা ২৪ ঘণ্টা কাজ করে যাবেন।
চীন থেকে ফিরছেন ৩৬১ বাংলাদেশি চীন ফেরতদের রাখা হবে আশকোনার হজ ক্যাম্পে