Wednesday 11 Jun 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

শহিদ মিনারে হুইল চেয়ারে ভারতীয় বৃদ্ধা!


২১ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ১৭:৫৫ | আপডেট: ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ২১:০৩
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ঢাকা: বার্ধক্যের ভারে অনেকটাই অচল ৮৪ বছর বয়সী সন্ধ্যা রানী নাগ। চলতে ফিরতেও লাগে অন্যের সহায়তা। বাইরে এলে হুইল চেয়ারই ভরসা। কিন্তু সেই সন্ধ্যা রানীই বার্ধক্যের সীমাবদ্ধতা উপেক্ষা করে সুদূর ভারত থেকে ভাষা শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে এসেছেন ঢাকার কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে। যা রীতিমতো অবাক করেছে ভাষাপ্রেমী বাঙালিদের। যারা মাতৃভাষার প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে উদাসীন তাদের জন্য এই প্রবীণ অনুপ্রেরণাও বটে।

শুক্রবার (২১ ফেব্রুয়ারি) বেলা সাড়ে বারোটার দিকে কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বের হয়ে যাচ্ছিলেন সন্ধ্যা রানী। পিছনে হুইল চেয়ার ঠেলছেন তার ছেলে বরুন নাগ (৬৩)। সেও বয়সে বৃদ্ধ। তবুও মনে এখনও তারুণ্যকে লালন করেন স্বমহিমায়। তাই তো বৃদ্ধা মাকে নিয়েই ছুটে আসলেন শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধায় শির অবনত করতে। বাংলা ভাষায় প্রাণ ভরে কথা বলে মনের ভাব প্রকাশ করতে। তাদের এদেশে এবারই প্রথম আসা। উদ্দেশ্য শহিদদের শ্রদ্ধা জানানো আর বইমেলায় যাওয়া।

বিজ্ঞাপন

শহিদ বেদীতে ফুল দিয়ে রাস্তায় এসে দাঁড়িয়েছেন তারা। এদিক-ওদিক তাকিয়ে কাউকে যেন কিছু বলতে চাইছেন। কাছে যেতেই বিনয়ের সঙ্গে বললেন, অমর ২১শে গ্রন্থমেলাটা কোন দিকে? পথ দেখিয়ে দিলাম। তারা এগুচ্ছে। কিন্তু হঠাৎ মনে হলো, ওই দুটি মানুষ বাংলাদেশের নয়। তাই একটু দ্রুত হেঁটে তাদের সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম। এরপর দুজনকে থামিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, আপনার কোথা থেকে এসেছেন? উত্তরে পুরুষ ভদ্রলোকটি (বরুন নাগ) বললেন, ‘ভারতের পশ্চিমবঙ্গের নিউ ব্যারাকপুর থেকে এসেছি। বাড়ি সেখানকার জগদীস বসু রোডের ১৫/১ নম্বরে। গত ১৮ ফেব্রুয়ারি এসেছি ঢাকায়। ২১শে ফেব্রুয়ারিতে শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর জন্য ইচ্ছে মায়ের (সন্ধ্যা রানী নাগ) দীর্ঘ দিনের। তার ইচ্ছে ছিল, জীবনে একবার হলেও কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে যাবে। কিন্তু আমিও সময় করতে পারিনি। তাই সেন্ট্রাল হেলথ দফতরের সরকারি চাকরি থেকে অবসর যাওয়ার পর এবার সুযোগ পেয়েই ছুটে এলাম। মায়েরও বয়স হয়েছে। তার কোনো ইচ্ছা অপূর্ণ থাকুক তা চাইনি।’

তিনি আরও বলেন, ‘মায়ের মতো আমারও খুব ইচ্ছে ছিল এপার বাংলায় আসবো। বাঙালিদের সঙ্গে সুরে সুরে মিলিয়ে বাংলা ভাষায় কথা বলব। আজ যেন সে আশা পূর্ণ হলো। সত্যি অসাধারণ এপার বাংলার মানুষেরা।’

এরপর হুইল চেয়ারে বসা সন্ধ্যা রানীর কাছে জানতে চাইলাম, ‘হাঁটতে পারেন না; তারপরও শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে এতদূর থেকে এসেছেন। কিন্তু কেন?’ কয়েক সেকেন্ডের জন্য নীরব হয়ে যান সন্ধ্যা রানী। এ সময় অনেকটা আবেগ প্রবণ হয়ে পড়েন তিনি। এ প্রতিবেদককে তিনি বলেন, ‘ভাষা আন্দোলন নিজের চোখে দেখিনি। আন্দোলনের সময় আমি ছোট ছিলাম। যখন বই ও পত্রপত্রিকায় বাংলা ভাষার ইতিহাস নিয়ে লেখা পড়ি তখন এখানে আসতে খুব মন চায়। মন চায় ভাষা শহিদদের বেদীতে শ্রদ্ধা জানাতে। যারা আমাদের জন্য এমন সহজ একটা ভাষা এনে দিলেন, তাদের প্রতি যদি সম্মান জানাতে না পারি, তাহলে মরেও শান্তি পাব না।’

তিনি আরও বলেন, ‘জীবনে অন্তত একবারের জন্য হলেও এই শহিদ মিনারে আসতে চেয়েছিলাম। আজ সত্যি অনেক ভালো লাগছে। মনে হচ্ছে, যে ভাষায় কথা বলি সেই ভাষার জন্য যারা শহিদ হয়েছেন তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে পেরেছি।’ কাঁপা কাঁপা স্বরে কথাগুলো বলতে গিয়ে তিনি এতটাই আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন যে, বাববার তার চোখ ভিজে যাচ্ছিল আনন্দ অশ্রুতে।

সন্ধ্যা রানী তরুণ প্রজন্মের উদ্দেশে বলেন, ‘আগামী প্রজন্মের কাছে অনুরোধ, বাংলা ভাষা যেন বিলুপ্ত হয়ে না যায় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। আধুনিকতার নামে তারা যেন বাংলা ভাষাকে হারিয়ে না ফেলে, এটাই তাদের কাছে চাওয়া।’

বৃদ্ধা ভারতীয় শহিদ মিনার হুইল চেয়ার

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর