Sunday 08 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বেসরকারি খাতের দুর্নীতিকে দুদকের আওতায় আনার সুপারিশ


২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ১৯:৩২

ঢাকা: অর্থপাচার ও ব্যক্তিমালিকানাসহ বেসরকারিখাতের দুর্নীতিকে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আওতাভুক্তির সুপারিশ করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।

মঙ্গলবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) ‘দুর্নীতিবিরোধী প্রতিষ্ঠান শক্তিশালীকরণ উদ্যোগ: বাংলাদেশ দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) ওপর পর্যালোচনা’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদনে টিআইবি ১৬টি সুপারিশ করে। এই সুপারিশের মধ্যে ছিল বেসরকারি খাতের দুর্নীতি প্রসঙ্গ।

তবে টিআইবি’র ১৬টি সুপারিশ নিয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সচিব কিংবা চেয়ারম্যান কোনো ধরনের মন্তব্য করতে রাজি হননি। তারা টিআইবি’র রিপোর্ট দেখেননি বলে জানিয়ে মন্তব্য করা সম্ভব নয় বলে সারাবাংলাকে জানান।

আরও পড়ুন- দুদক কাগজে-কলমে স্বাধীন, বাস্তবে নয়: টিআইবি

টিআইবির গবেষণায় ছয়টি ক্ষেত্রে মোট ৫০টি নির্দেশকের ওপর তথ্য সংগ্রহ করে। ২০১৬, ২০১৭ ও ১৮ সাল তথা ৩ বছরের তথ্য নিয়ে দুদকের ওপর গবেষণা করেছে সংস্থাটি। আর সেই ছয়টি ক্ষেত্র হচ্ছে, স্বাধীনতা ও মর্যাদা, অর্থ ও মানবসম্পদ, জবাবদিহিতা ও শুদ্ধচার, অনুসন্ধান-তদন্ত ও মামলা দায়ের, প্রতিরোধ, শিক্ষা ও আউটরিট কার্যক্রম, সহযোগিতা ও বাহ্যিক সম্পর্ক। আর এই ছয়টি ক্ষেত্রভিত্তিক স্কোরের দিকে স্বাধীনতা ও মর্যাদায় দুদকের স্কোর ৬৭, অর্থ ও মানবসম্পদে ৬১, জবাবদিহিতা ও শুদ্ধচারে ৫০, অনুসন্ধান-তদন্ত ও মামলা দায়েরে ৪৪, প্রতিরোধ, শিক্ষা ও আউটরিট কার্যক্রমে ৭৫, সহযোগিতা ও বাহ্যিক সম্পর্কে ৬৭। সবমিলিয়ে এবার টিআইবির গবেষণায় দুদকের স্কোর ৬০। আর ২০১৫ সালের গবেষণায় দুদকের স্কোর ছিল ৬১। ফলে এবার দুদকের স্কোর কমেছে।

তবে টিআইবি’র গবেষণার ফলাফলে দুদককে নিয়ে ১৬টি সুপারিশের মধ্যে প্রথম সুপারিশ হচ্ছে, দুদকের চেয়ারম্যান ও কমিশনারদের নিয়োগ আরও স্বচ্ছ করতে হবে। অর্থপাচার ও ব্যক্তিমালিকানাসহ বেসরকারিখাতের দুর্নীতিকে দুদকের আওতাভুক্ত করতে হবে। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের জন্য দুদকের সুপারিশকে বাধ্যতামূলক করা। পূর্বানুমতি ছাড়া সরকারি কর্মচারীদের গ্রেফতার না করার বিধান রহিত করা। দ্বিতীয়ত সুপারিশ হচ্ছে, দুদকের অনুমোদিত অর্গানোগ্রাম অনুযায়ী দক্ষ কর্মী নিয়োগ, দুদক কর্মীদের প্রশিক্ষণ, অভিজ্ঞতাসম্পন্ন দক্ষ আইনজীবী নিয়োগ ও দুদকের বাজেট বাড়ানো। তৃতীয়ত সুপারিশ হচ্ছে, অনুসন্ধান ও তদন্ত এবং প্রতিরোধ কার্যক্রমে দক্ষ কর্মীর সংখ্যা বাড়ানো।

চতুর্থ সুপারিশ হচ্ছে, দুদকের কর্মী বিশেষ করা যারা তদন্ত, মামলা পরিচালনা ও প্রতিরোধ কাজে জড়িত এবং দুদকের প্যানেল আইনজীবীদের সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য বুনিয়াদী প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা। পঞ্চম সুপারিশ হচ্ছে, একই ধরনের দুর্নীতির মামলার ক্ষেত্রে দুদককে একই ধরনের পদক্ষেপ ও নিরপেক্ষ প্রক্রিয়া অনুসরণ করা। ষষ্ঠ সুপারিশ হচ্ছে, দুদকের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের জন্য সমন্বিত ও বিশেষায়িত আচরণবিধি প্রণয়ন করা। সপ্তম সুপারিশ হচ্ছে, দুদককে অভিযোগের ভিত্তিতে অনুসন্ধানের সংখ্যা বাড়ানো। এক্ষেত্রে অভিযোগ বাছাই কী মাপকাঠিতে হচ্ছে এবং কোন অভিযোগ কেন গ্রহণ করা হচ্ছে না তার ব্যাখ্যা প্রকাশ করা।

টিআইবির অষ্টম সুপারিশ হচ্ছে, দুদককে মামলার হার বাড়াতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া। যেমন, সঠিক অনুসন্ধান পরিচালনা,পদ্ধতিগত ভুল না করা ইত্যাদি। নবম সুপারিশ হচ্ছে, দুদক আইনে উল্লেখিত নির্ধারিত সময়ের মধ্যে অনুসন্ধান ও তদন্ত শেষ করা। দশম সুপারিশ হচ্ছে, দুর্নীতির মামলায় দোষীদের কিভাবে সাজার হার বাড়ানো যায় সে জন্য দুদককে তদন্ত ও মামলার ঝুঁকি চিহ্নিত করা। এমনকি মামলা করার আগে আইনজীবীদের সঙ্গে পরামর্শ করা। ১১তম সুপারিশ হচ্ছে, দুদককে দুর্নীতির মামলা থেকে সম্পদ পুনরুদ্ধার,জব্দ ও বাজেয়াপ্ত করার জন্য উদ্যোগী হয়ে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া। ১২তম সুপারিশ হচ্ছে, বার্ষিক প্রতিরোধমূলক ও শিক্ষামূলক কার‌্যক্রম বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে দুদককে ৫ বছরের কৌশলগত পরিকল্পনা অনুসরণ করতে হবে।

১৩তম সুপারিশ হচ্ছে, দুদককে পর্যাপ্ত আর্থিক বরাদ্দ এবং দক্ষ জনবল বৃদ্ধির মাধ্যমে গবেষণা বিভাগকে শক্তিশালী করা। ১৪তম সুপারিশ হচ্ছে, দুদকের ওপর জনগণের আস্থা আরও বেশি বৃদ্ধি করার জন্য দুদকের কার্যক্রম সম্পর্কে আরও প্রচারণার ব্যবস্থা করা। দুদক কমিশনার ও ঊর্ধ্বতনদের সম্পদের বিবরণ প্রকাশ করা। শীর্ষ দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া। ১৫তম সুপারিশ হচ্ছে, দুদককে অন্যান্য দেশের দুর্নীতি দমন প্রতিষ্ঠানের সাথে সহযোগিতা ও যোগাযোগ বৃদ্ধির করার জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করা এবং সর্বশেষ সুপারিশ হচ্ছে, দুদককে বিভিন্ন প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর বিশেষ প্রয়োজন অনুযায়ী অভিযোগ দায়েরের ক্ষেত্রে তাদের সহজ অভিগম্যতা নিশ্চিত করার ব্যবস্থা নেওয়া।

দুদকের গবেষণা নিয়ে টিআইবি’র নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘কাগজে-কলমে দুদককে স্বাধীন বললেও বাস্তবে তা নয়। প্রভাবশালী দুর্নীতিবাজদের না ধরে ছোটখাটো দুর্নীতি নিয়েই দুদকের কার্যক্রম চলে। আর বড় ধরনের দুর্নীতির ক্ষেত্রে দুদকের পক্ষ থেকে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। সে ক্ষেত্রে দীর্ঘসূত্রিতা দেখা যায়। প্রভাবশালীদের ক্ষেত্রে জিজ্ঞাসাবাদ পর্যন্তই সীমাবদ্ধ। এরপর তাদের আর কোনো কার্যক্রম দেখা যায় না।’

টিআইবি’র নির্বাহী পরিচালক আরও বলেন, ‘বিরোধীদলের রাজনীতিকদের হয়রানি করা এবং ক্ষমতাসীন দলের রাজনীতিকদের প্রতি নমনীয়তা দেখায় দুদক। মোটকথা রাজনৈতিকভাবে দুদক প্রভাবিত হয় এবং নিজেকে প্রভাবিত করে। প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে দুদকের ওপর এসব নিয়ে চাপ সৃষ্টি হয়। অপরদিকে আমরা যে সুপারিশ করেছি সেগুলো দুদকের পক্ষে বাস্তবায়ন সম্ভব। আমরা আশা করি, দুদক তা করবে।’

টিআইবি ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) দুদক দুর্নীতি দমন কমিশন


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর