যে কারণে খালেদা জিয়ার জামিন আবেদন খারিজ
২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ১৮:১২
ঢাকা: নতুন কোনো গ্রাউন্ড না থাকায় জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার জামিন আবেদন খারিজ করেছেন হাইকোর্ট।
বৃহস্পতিবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ও বিচারপতি এ কে এম জহিরুল হকের হাইকোর্ট বেঞ্চ জামিন আবেদন খারিজ করে দেন।
খালেদা জিয়ার জামিন আবেদন ফের খারিজ
আদালত আদেশে বলেন, আপিল বিভাগের নির্দেশনা অনুযায়ী অ্যাডভান্সড ট্রিটমেন্টের জন্য খালেদা জিয়া অনুমতি দিয়েছেন কি না, দিয়ে থাকলে তার চিকিৎসা শুরু হয়েছে কি না এবং তার সর্বশেষ অবস্থা কি জানতে আমরা মেডিকেল রিপোর্ট চেয়েছিলাম। মেডিকেল রিপোর্টে দেখা যায়, বেগম খালেদা জিয়া অনুমতি না দেওয়ায় তার চিকিৎসা শুরু করা যায়নি।
আদালত বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতাল দেশের সর্বোচ্চ চিকিৎসা কেন্দ্র। এখানেই তার চিকিৎসা সম্ভব। এসব বিষয় বিবেচনায় জামিন আবেদনটি প্রত্যাখ্যান করা হলো। তবে খালেদা জিয়া অনুমতি দিলে দ্রুত তার চিকিৎসা শুরু করতে হবে। আর যদি মেডিকেল বোর্ড চায় তাহলে সেখানে নতুন সদস্য অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
এর আগে খালেদা জিয়ার পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম আর দুদকের পক্ষে ছিলেন খুরশীদ আলম খান।
এ সময় আদালতে উপস্থি ছিলেন, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখুরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন, এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন, অ্যাডভোকেট সগীর হোসেন লিওন, মো. মাসুদ রানা, ব্যারিস্টার এ কে এম এহসানুর রহমানসহ অনেকে।
শুনানির পূর্বে সকাল পৌঁনে ১১টায় সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল মো. আলী আকবর খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যগত বিষয়ে সবশেষ প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করেন।
এরপর জামিন আবেদন ও খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যগত অবস্থার সবশেষ প্রতিবেদনের ওপর সকাল ১১টায় শুনানি শুরু হয়। শুনানির শুরুতে আদালত মেডিকেল রিপোর্ট পড়ে শোনান। রিপোর্টে সাত সদস্যর বিশেষ মেডিকেল বোর্ড তাদের মতামত দিয়েছেন।
রিপোর্টে বলা হয়, খালেদা জিয়ার ডায়াবেটিস, হাইপার টেনসন, আ্যাজমা, ব্যাকপেইন, আর্থাইটিজ সমস্যা রয়েছে। তার ডায়াবেটিস, হাইপারটেনশন, আ্যাজমা নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। কিন্তু আর্থাইটিজ ও ব্যাক পেইনের চিকিৎসার জন্য যেসব মেডিসিন পুশ করা দরকার। তার জন্য খালেদা জিয়া অনুমতি দেননি। এতে করে উন্নত চিকিৎসা নেওয়া যাচ্ছে না।
রিপোর্ট পড়া শেষে আদালত বলেন, আমরা এখন আদেশ দেব।
খালেদা জিয়ার আইনজীবী অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন আদালতকে বলেন, আমাদের একটু আবেদন রয়েছে। তিনি (খালেদা জিয়া) কেন অনুমতি দেননি, তা জানা দরকার। আমরা খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করতে চাই। আমরা তার কাছে জানবো, কেন তিনি চিকিৎসা নিচ্ছেন না।
তখন আদালত বলেন, এটা (দেখা করার অনুমতি) আমরা দিতে পারি না। এটার কোনো সুযোগ নেই। আমরা আদেশ দিচ্ছি।
জয়নুল আবেদীন অনুরোধ জানিয়ে বলেন, এখনি আদেশ দিয়েন না। আমাদের জানা দরকার, কেন তিনি চিকিৎসা নিবেন না। প্লিজ আমাদের অনুমতি দেন।
আদালত বলেন, এটা আমরা দিতে পারবো না। আমরা আদেশ দেব।
তখন ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ আদালতকে বলেন, যে মেডিসিন পুশ করার কথা বলা হচ্ছে, তা বিদেশি ওষুধ। তা পুশ করার পর কী রিঅ্যাকশন হবে সেটা দেখা দরকার। এ সময় আদালত বলেন, তিনি (খালেদা জিয়া) কী এক্সপার্ট? তিনি কী ডাক্তার? তিনি কীভাবে বুঝবেন?
আদালত আরও বলেন, আমরাও (বিচারপতিরা) চিকিৎসার জন্য দরকার হলে ঢাকা মেডিকেল কলেজের ডাক্তারদের মতামত নিয়ে চিকিৎসা করি। আমাদের একজন বিচারপতি প্যারালাইজড হয়ে গেছেন তিনি চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরে গেছেন। কিন্তু যাওয়ার আগে ঢাকা মেডিকেলের ডাক্তারের মতামত নিয়ে গেছেন।
এ পর্যায়ে মওদুদ আহমদ বলেন, আমাদের দেখা করে জানার দরকার। জবাবে আদালত বলেন, আপনারা কী ডাক্তার? আপনারা কী জানেন, ট্রিটমেন্ট কী?
জয়নুল আবেদীন বলেন, আমাদের বারবার আপনাদের কাছেই আসতে হয়। আমাদের সবকিছু বন্ধ করবেন না। আমাদের একটু অনুমতি দিন। আর এ বিষয়ে আদেশের জন্য আগামী রোববার (১ মার্চ) দিন নির্ধারণ করে রাখুন।
এ সময় আদালত বলেন, আমাদের একটি প্ল্যান রয়েছে। কোর্টের নিজস্ব প্ল্যান থাকে। সেই অনুযায়ী কোর্ট চলে।
জয়নুল আবেদীন বলেন, এইটুকু বিবেচনা করুন। আপনাদের কাছে বারবার আসতে হয়। আগামী রোববার আদেশের জন্য রাখুন।
এ পর্যায়ে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম আদালতকে বলেন, মেডিকেল বোর্ড রিপোর্ট দিয়েছে। তিনি যদি চিকিৎসার অনুমতি না দেন, তাহলে মেডিকেল বোর্ডের কী করার আছে? উনার (খালেদা জিয়া) সমস্যাগুলো নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
তখন আদালত বলেন, ব্যাকপেইন ও আর্থাইটিজ সমস্যা রয়েছে। ঠিক আছে, আমরা আদেশ দিই।
কিন্তু আইনজীবী জয়নুল আবেদীন আদেশের সময় পেছাতে পুনরায় আদালতে আরজি জানান। তার আরজি অনুসারে খালেদা জিয়ার জামিনের বিষয়ে আদালত আদেশের জন্য দুপুর ২টার সময় নির্ধারণ করে মুলতবি করেন।
এরপর দুপুর দুইটায় ফের শুনানি শুরু হয়, শুনানিতে জয়নুল আবেদীন ফের নতুন করে সম্পূরক আবেদনের বিষয়ে বক্তব্য তুলে ধরেন। সর্বশেষ আদালত শুনানি শেষ জামিন আবেদনটি খারিজ করে দেন।
আদেশের পর বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, সরকার ইচ্ছে করেই খালেদা জিয়াকে আটকে রেখেছে। তাই কোনো অঘটন ঘটলে এর দায় সরকারকে নিতে হবে। আমরা হাইকোর্টের খারিজ আদেশের বিরুদ্ধে আপিল দায়ের করবো।
এদিকে খালেদা জিয়ার আরেক আইনজীবী জয়নুল আবেদীন বলেন, আমরা আদালতকে বলেছি, তার জীবন অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। রিপোর্ট তুলে ধরেছি। তার চিকিৎসা যেখানে অপরেশন হয়েছে সেখানে যুক্তরাজ্যের লন্ডনে হওয়া দরকার। আদালত আমাদের বক্তব্য শুনেছেন। রাষ্ট্রপক্ষের বক্তব্য শুনেছেন। শুনে আমাদের নিবেদন খারিজ করে দিয়েছেন। আর বলেছেন, তিনি সম্মতি দিলে তাকে অ্যাডভান্সড ট্রিটমেন্ট দিতে। আমরা এ আদেশে সংক্ষুব্ধ। আদালতে আমাদের আবেদন গ্রহণ করা উচিৎ ছিলো। কারণ তিনিও একজন মানুষ।