Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ঢামেকে সিট পেতে বেসরকারি হাসপাতালের আইসিইউতে থাকতে হয় ২ দিন!


২৯ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ১৬:২৩

ঢাকা: ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চতুর্থ তলা। এখানেই ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট (আইসিইউ)। যেখানে বেড রয়েছে ৩২টি। এমনিতে এখানকার বেড পাওয়া সোনার হরিণ; তার ওপর রয়েছে দালালের দৌরাত্ম। আর এই বিশেষ জায়গায় অব্যবস্থাপনার চিত্রতো রীতিমতো অবাক করে। তবে এগুলোকে পাশ কাটিয়ে আইসিইউ নিয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে সারাবাংলার প্রতিবেদকের সরেজমিন তদন্তে।

ঢামেকের আইসিইউতে প্রতিদিন প্রায় ১০ থেকে ১৫ জন রোগীর স্বজনরা বেডের জন্য সিরিয়াল দিতে আসেন। কিন্তু খুব সহজেই এখানকার সিট পাওয়া যায় না। অনেক কষ্টের পর সিট মিললেও রোগীকে অপেক্ষা করতে হয় কমপক্ষে দুদিন। আর এই দুদিন তাকে কাটাতে হয় রাজধানীর বেসরকারি হাসপাতাল অথবা কোনো ক্লিনিকের আইসিইউতে; যেখানে ঢামেকের চিকিৎসকরাই রোগীকে দেখাশোনা করেন। আর এর জন্য রোগীকে গুনতে হয় বিপুল অংকের টাকা। তার পর মেলে ঢামেকের আইসিইউর বেড।

বিজ্ঞাপন

রোববার (২৩ ফেব্রুয়ারি) সকাল সাড়ে আটটা। ঢামেকের আইসিইউ’র সামনে দাঁড়িয়ে দেখা যায়, কমপক্ষে পাঁচজন রোগীর স্বজন ব্যবস্থাপত্র নিয়ে ভেতরে ঢুকছেন। তবে একটু পরেই নিরাশ হয়ে তাদের ফিরতে হয়। তাদের ব্যবস্থাপত্রে লিখে দেওয়া হয়েছে, বিছানা খালি নেই।

সকাল সাড়ে নয়টা। রোগীর স্বজনদের অ্যাপ্রোন পরে জুতা খুলে আইসিইউ’র ভেতর প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে। তবে ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিরা জুতা পরেই অ্যাপ্রোন ছাড়া ভেতরে প্রবেশ করছে। আনসার সদস্যরা তাদের কিছু বলছে না। জিজ্ঞাসা করলে উত্তরে বলে, ‘উনারা শিক্ষিত মানুষ। ডাক্তারের কাছে আসছে।’

আইসিইউ’র সামনে দেখা যায়, রোগীর স্বজনরা কেউ বসে আছে, কেউ শুয়ে ঘুমাচ্ছে। আবার কেউ রোগী দেখার জন্য অপেক্ষা করছে। রোগীর কয়েকজন স্বজন বলেন, এখানে অনেক সমস্যা। গরম পড়েছে। কিন্তু ফ্যানের ব্যবস্থা নেই। হাত পাখা দিয়ে বাতাস নিতে হয়। চেয়ারের সংখ্যাও কম। সবচেয়ে বড় সমস্যা কোনো বাথরুম নেই। সবাইকে নিচে যেতে হয়।

বিজ্ঞাপন

কথা হয় ডিউটিরত এনামুল নামের এক আনসার সদস্যের সঙ্গে। আইসিইউয়ে বেড পাওয়ার ব্যাপারে এনামুল আমার রোগী কোথায় জানতে চায়। আমি বলি, ‘ঢাকা মেডিকেলেই ভর্তি আছে।’ তখন এনামুল বলে, ‘এখন এখানে সিট খালি নেই। দুদিন অপেক্ষা করতে হবে। তিনদিনের দিন সিট পাওয়া যাবে। তবে এই দুদিন রোগীকে বাইরের আইসিইউয়ে রাখতে হবে। সেটা হতে পারে পান্থপথ, কাকরাইল অথবা আশুলিয়া ইসলামীয়া হাসপাতাল। সেখানে আমাদের ঢামেকের ডাক্তার আছে। তারা দেখাশোনা করবেন। এর পর তিনদিনের দিন ঢামেকে সিট পাওয়া যাবে। সেজন্য দুদিনে খরচ হবে ১২হাজার টাকা।’

এনামুল আরও বলেন, ‘এ জন্য আমাকেও কিছু দিতে হবে। সরকারি অ্যাম্বুলেন্সে করে রোগীকে নিয়ে যেতে হবে। সেখানে খরচ লাগবে না। ঢাকা মেডিকেলের সার্জারি বিভাগের ডা. ইকবাল হোসেন চৌধুরী নামে একজন এগুলোর ব্যবস্থা করেন।’ এ সময় বাইরে এক মহিলাকে দেখিয়ে বলে, ‘উনার কাছ থেকে ২৫ হাজার টাকা নিয়ে আইসিইউ’র বেড পাইয়ে দিয়েছি।’

কথা হয় ফরিদপুর থেকে আসা রোগী শারমিন আক্তারের আত্মীয় শাফিয়া বেগমের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘গত মঙ্গলবার রোগীকে আইসিইউতে ভর্তি করা হয়।’ বেড পেতে টাকা লেগেছে কি-না?- জিজ্ঞাস করলে শাফিয়া বলেন, ‘আমি জানি না। আমাদের পুরুষ মানুষরা বলতে পারবেন। তবে এখানে প্রতিদিন প্রায় পাঁচ থেকে ছয় হাজার টাকা খরচ হয়। এখানকার লোকজন দৈনিক আমাদের হাতে ওষুধের স্লিপ ধরিয়ে দেয়। ওষুধ আমার রোগীর লাগলো কি লাগলো না, এটা জানতেও পারি না।’

এ বিষয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহকারী পরিচালক (প্রশাসন) ডা. নাসির উদ্দিন জানান, ‘আইসিইউ বিভাগে অনেক দালাল আছে। আমরা সব সসময় রোগীর স্বজনদের সতর্ক করি। প্রায়ই দালালদের ধরে থানায় দেওয়া হয়। তবে এসব ক্ষেত্রে আনসাররা জড়িত থাকলে অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল একেএম নাসির উদ্দিনের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘যদি এমন অভিযোগের কোনো প্রমাণ পাই অবশ্যই তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেব। কোনো ছাড় দেওয়া হবে না। এর আগেও আমরা এ ধরণের ঘটনায় বহু দালালকে ধরে পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছি।’

আইসিইউ ঢাকা মেডিকেল কলেজ ভর্তি রোগী হাসপাতাল

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর