শত বাধায়ও হার না মানা ফরিদা পারভিন
৮ মার্চ ২০২০ ১২:০৬
ঢাকা: বাংলাদেশ পুলিশে এক উজ্জ্বল নক্ষত্রের নাম ফরিদা পারভীন। যিনি শত বাধা পেরিয়েও পুলিশের মতো একটি পেশায় অবিরাম দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। তিনি এখন নৌ পুলিশের মিডিয়া শাখার অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের দায়িত্বে রয়েছেন।
নারী দিবস উপলক্ষে ফরিদা পারভিনের সঙ্গে সারাবাংলার এ প্রতিবেদকের কথা হয়। আলাপচারিতায় উঠে আসে তার জীবনের নানা ঘাত-প্রতিঘাতের কথা। বাবা মায়ের তিন সন্তানই মেয়ে জন্মানোয় শুরুতেই ধাক্কা আসে। এরপরেও সমাজের বেড়াজাল ভেঙে তিন বোনই পড়ালেখা শেষ করে সাবলম্বী হন।
জামালপুর জেলার সরিষাবাড়ি থানায় ফরিদার জন্ম। জামালপুরের মেয়ে হলেও বাবার চাকরির সূত্র ধরে বড় হয়েছেন টাঙ্গাইল সদরে। বাবা মো. আব্দুর রাজ্জাক পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির প্রকৌশলী এবং মা নিলুফা ইয়াসমিন একজন সাধারণ গৃহিণী।
তাদের ঘর আলো করে জন্ম নেয় তিনজন কন্যা সন্তান। সমাজের প্রচলিত রীতি না মেনে মেয়েদের লেখাপড়া করিয়েছেন। মেয়েদের মানুষের মতো মানুষ করাই ছিল তাদের ব্রত। বাবার চাকরির সূত্র ধরে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পড়াশোনা টাঙ্গাইলে। পরে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন। ইডেন কলেজ কর্তৃপক্ষ তাকে ভালো ফলাফলের জন্য পুরস্কৃত করে।
ফরিদা ছোটবেলা থেকেই বই পড়তে ভালোবাসতেন। তিনি বিশ্বাস করেন পুরুষ শাসিত সমাজে ছেলেদের পাশাপাশি মেয়েরাও পারে চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করতে। সেই বিশ্বাসের ধারাবাহিকতায় ৩১তম বিসিএসের মাধ্যমে তিনি বাংলাদেশ পুলিশে সহকারী পুলিশ সুপার হিসেবে যোগদান করেন।
বর্তমানে তিনি অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হিসেবে নৌ পুলিশ ঢাকায় কর্মরত রয়েছেন। তার বড়বোন জনতা ব্যাংকে সিনিয়র এক্সিকিউটিভ অফিসার এবং ছোট বোন বাংলাদেশ ব্যাংকের অফিসার হিসেবে কর্মরত।
ফরিদা পুলিশের মতো ব্যস্ত পেশায় থেকেও পরিবার এবং সমাজকে সময় দেন। দাপ্তরিক কাজের পাশাপাশি নৌ পুলিশের লিগ্যাল, মিডিয়া এবং ট্রেনিংয়ের দায়িত্ব পালন করেন। পাশাপাশি নৌ পুলিশের বিভিন্ন অভিযানে অংশগ্রহণ করেন। এ সম্পর্কে সিনিয়র কর্তকর্তারা জানান, ফরিদা কোনো কোনো ক্ষেত্রে একজন পুরুষ অফিসারের চেয়েও বেশি কাজ করে থাকেন।
ফরিদাকে একজন যোদ্ধা নারী বললে কম বলা হবে না কারণ তিনি খুব অল্প সময়ে চাকুরি ক্ষেত্রে দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন। তিনি শত শত সমস্যায় জর্জরিত একজন নারী। বিয়ের পৌনে চার বছরের মাথায় তার স্বামীকে হারান। সে সময় তার দেড় বছরের একটি কন্যা সন্তান ছিল। অন্যদিকে সাড়ে চার মাসের অনাগত সন্তানকে শরীরে ধারন করে ওই কঠিন সময়েও নিজেকে ধীরে ধীরে প্রমাণ করেছেন। বর্তমানে তার তিন বছরের কন্যা রাইম ও এক বছরের পুত্র সন্তান রোরিকে নিয়ে সাহসিকতা ও ধৈর্যের সঙ্গে পরিস্থিতি সামাল দিচ্ছেন।
এতকিছুর পরেও ভালোবাসার অমরত্ব নিয়ে এবার একুশের বই মেলায় ফরিদা প্রথম কবিতার বই, ‘ভালোবাসা কথা কয়’ প্রকাশ করেন। বইটি পাঠক হৃদয়ে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। তার প্রয়াত স্বামী মরহুম শফিকুল ইসলাম সাবেক চাপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার চাঁপাইনবাবগঞ্জ। তার ভালোবাসার মানুষটি পৃথিবী ছেড়ে চলে গেলেও এখনো ভালোবাসি ভালোবাসি বলে ওপার থেকে ডাকে এই অনুভুতি থেকে লিখেছেন। বইটির মাধ্যমের তার প্রিয়জনের প্রতি আনুগত্য ও ভালবাসা প্রকাশ করেছেন। প্রিয়তম স্বামীকে হারিয়ে তিনি তার স্বামীকে ভালোবাসার মলাটে কবিতার মাধ্যমে ধরে রাখতে চান।
কৈশোর জীবনের গোপন প্রেমের নাটক ‘নৈঃশব্দের ভালোবাসা’ নাটকটির লেখক ছিলেন’ তার প্রয়াত স্বামী মরহুম শফিকুল ইসলাম। অকাল প্রয়াত নাট্যকার ব্যক্তি জীবনে অনেক না বলা কথা রেখে গেছেন। গত বই মেলায় প্রকাশিত এ নাটকটির সম্পাদক ছিলেন ফরিদা। ফরিদা তার প্রয়াত স্বামীর বিদেহী আত্মার জন্য সবার কাছে দোয়া এবং ভালোবাসা কামনা করেছেন।
ইউনিফর্মে মোড়ানো ফরিদা দেশের সেবায় নিজেকে সদা প্রস্তুত রাখেন। দেশের কল্যাণে মধ্য নদীতে স্পিড বোট নিয়ে ছুটে যান অবৈধ কারেন্ট জাল উদ্ধার করতে। মৎস্য সম্পদ রক্ষায় দুধের বাচ্চা রেখে রাত জেগে নদীতে নদীতে পুরুষ অফিসারদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে সমানভাবে অভিযানে অংশ নেন।
এ ছাড়াও ফরিদা কবিতা আবৃত্তি করতে, গান শুনতে, ঘুরে বেড়াতে, গরিব দুঃখিদের খাওয়াতে পছন্দ করেন।