Wednesday 02 Apr 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

গবেষণার জন্য হলেও মেয়ে দু’টি রাখুন, আকুতি রাবেয়া-রোকাইয়ার মা’র


২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ২৩:৫৭ | আপডেট: ২৯ অক্টোবর ২০১৮ ১৭:১৩

জাকিয়া আহমেদ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: ওদের জন্মের পরপরই আমি প্রথম যখন ওদের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে নিয়ে আসি, তখন চিকিৎসকরা জানিয়েছিলেন, রাবেয়া-রোকাইয়ার চিকিৎসা করার মতো কোনো উপায় বাংলাদেশে নেই।
আমি তাদের বলেছিলাম, রিসার্চ করার জন্য হলেও মেয়ে দু’টিকে দিতে চাই আমি। মেয়ে দু’টিকে নিয়ে যুদ্ধ যখন শুরু হয়েছে- তখন এর শেষ হতে হবে। আমি সব কিছুর জন্য প্রস্তুত -যে কোনো পরিস্থিতি মেনে নিতে রাজি আছি- বলছিলেন তাসলিমা খাতুন।

বিজ্ঞাপন

তাসলিমা খাতুনের ‘স্কুল শিক্ষিকা’ পরিচয়টি হারিয়ে গেছে এখন। তাকে এখন সবাই চেনেন জোড়া মাথার শিশু রাবেয়া-রোকাইয়ার মা হিসেবে।

https://www.youtube.com/watch?v=gGCC9cq0FiY

তাসলিমা খাতুনও সে কথাই বলেন সারাবাংলাকে। মঙ্গলবার ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে রাবেয়া-রোকাইয়ার মূল চিকিৎসার প্রথম ধাপ শুরু হতে যাচ্ছে। আর তা হলে অনিশ্চিত জীবন শুরু হতে পারে তাসলিমা খাতুনের, চিকিৎসকরা তাকে সে কথা বলেছেন। কিন্তু তাতে পিছু হটেননি দৃঢ় মানসিকতার এই নারী। অস্ত্রোপচারের জন্য অনুমতি দিয়েছেন তিনি।

রাবেয়া-রোকাইয়ার চিকিৎসার জন্য বাংলাদেশে এসেছেন হাঙ্গেরির অ্যানডোভাসকুলার সার্জন স্টিফেন হুডক। তিনি সারাবাংলাকে বলেন, বিশ্বজুড়ে এ ধরনের শিশুর অস্ত্রোপচারে মৃত্যুর হার শতকরা ৮০ শতাংশ। একই কথা বলেন বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের সমন্বয়ক ডা. সামন্ত লাল সেন। তিনি সারাবাংলাকে বলেন, আমরা এই ঝুঁকির কথা শিশু দু’টির বাবা-মাকে জানিয়েছি। জানানো হয়েছে অন্যান্য সব ধরনের জটিলতার কথা। কিন্তু তারা আমাদের ‘কনসেন্ট’ দিয়েছেন।

বিজ্ঞাপন

কাল সকালে রাবেয়া-রোকাইয়ার অস্ত্রোপচারের প্রথম ধাপ হিসেবে শিশু দু’টির মাথার এনজিওগ্রাম করা হবে। তারপর আমরা সিদ্ধান্ত নেব কি করে এগুবো আমরা। তবে এই শিশু দু’টির ক্ষেত্রে আমাদের কোনো তাড়াহুড়ো নেই, খুব ধীরে আমাদেরকে পথ চলতে হবে, বলেন ডা. সামন্ত লাল সেন।

আজ বার্ন ইউনিটের ষষ্ঠতলার নির্ধারিত কেবিনে গিয়ে দেখা যায়, দুই মেয়েকে পাকা কলা চটকে ভাত মেখে খাওয়াতে ব্যস্ত তাসলিমা খাতুন। এরই মধ্যে বাবা রফিকুল ইসলামের মোবাইল ফোনে কল করেন চিকিৎসক। ভাত খাওয়ানো শেষ হলে দ্রুত রাবেয়া-রোকাইয়াকে নিয়ে নিচে যেতে বলেন, আগামীকালের প্রস্তুতি হিসেবে ওদের ওজন মাপা হবে।

মেয়েদের খাওয়াতে খাওয়াতে তাসলিমা বলেন, ‘আমি অনেক ভেবেছি। কিন্তু মেয়েদেরকে এভাবে আর দেখতে পারছি না। যখন আমার বাচ্চা দু’টি বড় হবে তখন এভাবে ওরা চলতে পারবে না। আর আমাদের সমাজ এভাবে মেনে নেবে না, মেনে নেয় না। সুতরাং আমাকে সিদ্ধান্ত নিতেই হবে’।

চিকিৎসকরা আমাদের বলেছেন, ‘এটা অনেক রিস্কি, অস্ত্রোপচারের প্রতিটি ধাপ ঝুঁকিপূর্ণ। অস্ত্রোপচার করলে মেয়ে দু’টির প্যারালাইসিস হতে পারে, ব্রেইন ড্যামেজ হয়ে যেতে পারে- এমনকি হতে পারে মৃত্যুও। কিন্তু আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি, এই অপারেশন হবেই’।

গভীর মনোযোগ দিয়ে মেয়েদের খাইয়ে দিচ্ছেন তাসলিমা। সে অবস্থায় বলতে থাকেন, ‘ওরা হাঁটতে পারে, কথা বলতে পারে-এভাবে রাখলেতো একদিন বড় হবে। ইরানের সেই জোড়া বোন দু’টির কথা আমি জানি। তারাও একসঙ্গে বড় হয়েছিল, লেখাপড়া শিখেছিল। কিন্তু পরে তারা সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়- তাদের আলাদা জীবন দরকার। ওদেরকে বড় করতে অনেক কষ্ট করতে হয়। ওদের এতটুকু করেছি। এখন অস্ত্রোপচারের সিদ্ধান্ত না নিলে যখন ওরা বড় হবে- আমাকে প্রশ্ন করতে পারে। ওরাই হয়তো বড় হয়ে বুঝতে পারবে, কোনো মানুষ একা সম্পূর্ণ না হলে স্বাধীন হতে পারে না। দু’জন মানুষের স্বত্ত্বা একসঙ্গে বেড়ে উঠবে না।’

তাসলিমার চোখের কোণে জমা হতে থাকে অশ্রু। তিনি বলেন, ‘যখন ভাবনা আসে অপারেশনের সময় সমস্যা হয়ে যেতে পারে, তখনই অনেক কষ্ট লাগে। আবার চিন্তা করি মেয়ে দু’টি বড় হওয়ার পরে যদি এ ধরনের সিদ্ধান্ত নিতে হয়- তখন কীভাবে সহ্য করব!’

‘এই অস্ত্রোপচারের ফলাফল ভালো কিংবা মন্দ যাই হোক -আমি মেনে নেব’। পাশ থেকে একই কথা বলেন বাবা রফিকুল ইসলাম।

সারাবাংলা/জেএ/এটি

আরও পড়ুন
জোড়া মাথার রাবেয়া-রোকাইয়ার চিকিৎসা শুরু কাল

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর