পিপলস লিজিংয়ের পরিচালকদের তালিকা চেয়েছেন হাইকোর্ট
১০ মার্চ ২০২০ ২০:৪৪
ঢাকা: আর্থিক প্রতিষ্ঠান পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেডে ২০০৪ সালের পর থেকে যারা পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন, তাদের সবার নামের তালিকা চেয়েছেন হাইকোর্ট। আগামী বৃহস্পতিবার (১২ মার্চ) তাদের নাম-ঠিকানাসহ তালিকা আদালতে দাখিল করতে হবে।
এ সংক্রান্ত মামলার শুনানি নিয়ে মঙ্গলবার (১০ মার্চ) বিচারপতি মুহাম্মদ খুরশিদ আলম সরকারের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
পিপলস লিজিংয়ের অবসায়ক হিসেবে নিযুক্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বাজার বিভাগের উপমহাব্যাবস্থাপক মো. আসাদুজ্জামান খানের পক্ষের আইনজীবী ব্যারিস্টার মেজবাহুর রহমানকে আদালত এ নির্দেশ দেন।
আরও পড়ুন- হিসাবে কি শুভঙ্করের ফাকিঁ?— প্রশ্ন আপিল বিভাগের
পরে আইনজীবী মেজবাহুর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, আজ আদালত ওই কোম্পানির তথ্য-উপাত্ত জেনেছেন। পরে আদালত ওই প্রতিষ্ঠানে ২০০৪ সালের পর থেকে যারা পরিচালক ছিলেন, তাদের একটি তালিকা চেয়েছেন। ওই তালিকা পাওয়ার পর কোর্ট একটা তারিখ ঠিক করবেন। সম্ভবত কোর্ট তাদের বক্তব্য জানার জন্য ডাকবেন।
এর আগে, গত বছরের ১৫ জুলাই অবসায়িত আর্থিক প্রতিষ্ঠান পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেসের (পিএলএফএসএল) সাবেক ৯ পরিচালকসহ ১১ জনের ব্যাংক হিসাবে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিলেন হাইকোর্ট। তারা ব্যাংক, ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও কো-অপারেটিভ সোসাইটি হিসাব থেকে অর্থ তুলতে পারবেন না। একইসঙ্গে তাদের স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তিতেও নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়, পরে আপিল বিভাগও হাইকোর্টের আদেশ বহাল রাখেন।
যাদের ব্যাংক হিসাব ও স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তির ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়, তারা হলেন— সাবেক পরিচালক এম মোয়াজ্জেম হোসেইন, নারগিস আলামিন, হোমাইরা আলামিন, আরেফিন সামসুল আলামিন, মোহাম্মদ ইউসুফ ইসমাইল, মতিউর রহমান, বিশ্বজিৎ কুমার রায়, খবিরুদ্দিন মিয়া, মোহাম্মদ সহিদুল হক ও পিএলএফএসএলের শীর্ষ দুই কর্মকর্তা কবির মুস্তাক আহমেদ ও নৃপেন্দ্র চন্দ্র পণ্ডিত।
আরও পড়ুন- ১৫৯৬ কোটি টাকার হদিস মিলছে না, আপিলে ইব্রাহিম খালেদ
পিপলস লিজিংয়ের অবসায়নে ‘দ্য ফিন্যান্সিয়াল ইনস্টিটিউট অ্যাক্ট, ১৯৯৩-এর ২৯ ধারায় হাইকোর্টে আবেদন করে বাংলাদেশ ব্যাংক। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষে মামলায় শুনানি করেন ব্যারিস্টার তানজিব উল আলম ও কাজী এরশাদুল আলম।
নানা ধরনের অনিয়ম, দুর্নীতি ও পরিচালকদের অর্থ আত্মসাতের কারণে আমানতকারীদের অর্থ ফেরত দিতে ব্যর্থ হওয়ায় গত বছরের ২১ মে পিপলস লিজিংয়ের অবসায়নে অর্থ মন্ত্রণালয়ে অনুরোধ জানায় বাংলাদেশ ব্যাংক। গত ২৬ জুন অর্থ মন্ত্রণালয় অনুমোদন দেয়। ১৯৯৭ সালে প্রতিষ্ঠিত এ প্রতিষ্ঠানটির দুই হাজার কোটি টাকার আমানত রয়েছে। এর মধ্যে ব্যক্তি গ্রাহকের ৭০০ কোটি টাকা ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও ব্যাংকের ১ হাজার ৩০০ কোটি টাকা। পিপলস লিজিং ১ হাজার ১৩১ কোটি টাকার ঋণ বিতরণ করেছে, যার মধ্যে ৭৪৮ কোটি টাকা খেলাপি। খেলাপি ঋণের মধ্যে ৫৭০ কোটি টাকা প্রতিষ্ঠানটির পরিচালকরা প্রতারণার মাধ্যমে হাতিয়ে নিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
গত বছরের ১১ জুলাই বাংলাদেশ ব্যাংক পিপলস লিজিং থেকে টাকা উত্তোলনের বিষয়ে বিধিনিষেধ আরোপ করে। পরে গত ১৪ জুলাই বাংলাদেশ ব্যাংকের ডিজিএম মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান খানকে অবসায়ক নিয়োগ দেওয়া হয়।
১৯৯৭ সালের ২৪ নভেম্বর পিপলস লিজিং আর্থিক প্রতিষ্ঠান হিসাবে অনুমোদন পায়। ২০০৫ সালে প্রতিষ্ঠানটি শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হয়।