‘করোনাভাইরাস যেকোনো সময় ছড়িয়ে পড়তে পারে’
১৩ মার্চ ২০২০ ১৬:৩২
ঢাকা: করোনাভাইরাস যেকোনো সময় ছড়িয়ে পড়তে পারে বলে শংকা প্রকাশ করেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। শুক্রবার (১৩ মার্চ) দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (একাংশ) দ্বিবার্ষিক সাধারণ সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ শংকা প্রকাশ করেন।
করোনাভাইরাস সম্পর্কে সচেতনতার তাগিদ দিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘করোনাভাইরাস সম্পর্কে সচেতন হতে হবে। আমাদের এই দেশ অত্যন্ত ঘনবসতিপূর্ণ। এই ঘনবসতিপূর্ণ দেশে এটা যেকোনো সময় ছড়িয়ে পড়তে পারে।’
বর্তমান প্রেক্ষাপটে সাংবাদিক সমাজকে সব চেয়ে বেশি চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হচ্ছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের দ্বিবার্ষিক সম্মেলন যখন হচ্ছে, তখন সাংবাদিকদের সম্ভবত সব চেয়ে বড় চ্যালেঞ্জের মোকাবেলা করতে হচ্ছে। সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো রাষ্ট্রের কাঠামো এবং সরকারের চারিত্যিক বৈশিষ্ট্যের কারণে।’
‘এ ছাড়া প্রযুক্তির কারণেও সাংবাদিকদের চ্যালেঞ্জ নিতে হচ্ছে। নিউজ পেপারে এ যারা কাজ করছেন তারা চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করছেন। কারণ, পরের দিন সকালে যখন তাদের নিউজটি ছাপা হয়, তার আগেই মোবাইল বা অনলাইনে সেই খবরগুলো পাওয়া যাচ্ছে। এছাড়া দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সারা পৃথিবীতে মুক্তচিন্তার যে বাতাস বইছিলো তা সরিয়ে দিয়ে একনায়কতন্ত্র ফ্যাসিবাদ বেশ জানান দিয়ে সারা পৃথিবীতে এসেছে’— বলেন মির্জা ফখরুল।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষ সাংবাদিকদের সবসময় শ্রদ্ধার চোখে দেখে। বাংলাদেশের ভাষার জন্য লড়াইয়ে, স্বাধীনতার লড়াইয়ে তাদের ভূমিকা ছিল অভূতপূর্ব।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘যুগে যুগে যারা মুক্তি, স্বাধীনতার লড়াই, সংগ্রামের কথা বলেছে, তাদের নিয়মিত নির্যাতনের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছে। কিছুদিন সুবাতাস বইলেও আবার সেই অবস্থার মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের আগে ও পরে অনেক বরেণ্য সাংবাদিকদের লেখা আমরা দেখেছি। তারা অনেক সত্য কথা লিখেছেন মানুষের জন্য।’
তিনি বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের পর যখন গণহারে দালাল বানানো হচ্ছিল তখন সাংবাদিক এনায়েতুল্লাহ খান লিখেছিলেন, ‘ফোর এন্ড হাফ ক্রোর কোলাবোরেটর’? এর অন্তর্নিহিত ছিল যারা যুদ্ধের সময় ভারতে যাননি তাদেরকে ‘কোলাবোরেট’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছিল। সে সময় বিশেষ ক্ষমতা আইন জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছিল। বাকশাল গঠন করা হয়েছিল। মানুষের বাকস্বাধীনতা ছিল না। সেদিনও যারা ভিন্নমত পোষণ করেছিলেন তাদের নির্যাতন করা হয়েছিল, জেলে পোরা হয়েছিল। এখন সেই অবস্থায় ফিরে এসেছে কিন্তু একটু ভিন্ন চেহারায়।এখন তারা আইন তৈরি করে। যাতে আপনারা যেন আইনের বাইরে না যান এবং তারা যাতে আপনাদের নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘সংবাদপত্র এখন সাংবাদিকদের হাতে নেই। চলে গেছে করপোরেটদের হাতে। তারা তাদের জন্য কাজ করছে। ফলে সেলফ সেন্সরশিপ আরোপ করা হচ্ছে। এর উল্টো চিত্রও আছে। সংবাদপত্রের মাধ্যমেই আমরা জেনেছি, কীভাবে সিটি করপোরেশন নির্বাচন হয়েছে, কীভাবে ব্যাংক লুট হয়েছে, কীভাবে সম্পদ লুট করে বিদেশে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, কীভাবে সরকারি সম্পদ ক্ষমতাসীন দলের লোকেরা লুট করে নিয়ে যাচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘দেশে গণতন্ত্র নেই। একনায়কতন্ত্র ফ্যাসিবাদ দেশ দখল করে আছে। আমরা যদি ভারতবর্ষের দিকে তাকাই— যেখানে বলা হতো গণতান্ত্রিক প্রাক্টিস আছে। সেখানেও দেখা যাচ্ছে সাংবাদিকদের গ্রেফতার করা হচ্ছে, চ্যানেল বন্ধ করা হচ্ছে , কথা বলতে দেওয়া হচ্ছে না। গত এক দশকে গোটা পৃথিবীতে কর্তৃত্ববাদী সরকার এসেছে। এর ফলে গণতান্ত্রিক পরিবেশ আমরা হারিয়ে ফেলেছি।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আমাদের দেশে গণতন্ত্রকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া সারাজীবন গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করেছেন। তার মত ত্যাগ স্বীকার কেউ করেনি। সেই গণতন্ত্রের নেত্রীকে মুক্তি দেওয়া হচ্ছে না।’
‘আপনারা দেখেছেন বিচার বিভাগে কিভাবে হস্তক্ষেপ করা হয়েছে। যেদিন সিনহা সাহেবকে বন্দুকের মুখে দেশত্যাগে বাধ্য করা হলো, সেদিনই জুডিশিয়ারি শেষ। কার ঘাড়ে কয়টা মাথা আছে অন্যরকম রায় দেয়। তারেক রহমানকে যে জাজ খালাস দিয়েছেন, তাকে দেশত্যাগ করতে হয়েছে। পিরোজপুরে সরকারি দলের একজন নেতাকে জামিন না দেওয়ার কারণে একজন জাজকে বদলি হতে হয়েছে তাৎক্ষণিকভাবে এবং ওই নেতাকে কয়েক ঘণ্টার মধ্যে মুক্তি দেওয়া হয়েছে’— বলেন মির্জা ফখরুল।
তিনি বলেন, ‘এ অবস্থায় অত্যন্ত ধৈর্যের সাথে গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে এগিয়ে নিতে হবে। সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে এগোতে হবে। জনগণ ঐক্যবদ্ধ হয়েছে এই সরকারকে। তাই সময় এসেছে উঠে দাঁড়াবার, আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে রক্ষা করবার, গণতন্ত্রকে রক্ষা করবার— এটিই আমাদের উপযুক্ত সময়। জনগণের লড়াই-সংগ্রামে সাংবাদিকরা সবসময় সামনের কাতারে ছিলেন। আমরা তাদের দেখে অনুপ্রাণিত হই।’