Saturday 23 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

মুজিববর্ষ: গণজমায়েত এড়িয়ে উৎসবের অপেক্ষায় বন্দরনগরী


১৬ মার্চ ২০২০ ১৪:১৮

চট্টগ্রাম ব্যুরো: জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষ উদযাপনে বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নিয়েছে চট্টগ্রামের স্থানীয় প্রশাসন, আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ-সহযোগী সংগঠন। সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের পক্ষ থেকেও বঙ্গবন্ধুকে স্মরণের নানা আয়োজন করা হয়েছে। তবে করোনাভাইরাসের সংক্রমণের বিষয়টি মাথায় রেখে এড়ানো হচ্ছে গণজমায়েত-সমাবেশ।

সরকারিভাবে ঘোষিত মুজিববর্ষ উপলক্ষে ইতিমধ্যে চট্টগ্রাম নগরীতে আলোকায়ন করা হয়েছে। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক)-এর পক্ষ থেকে নগরীর গুরুত্বপূর্ণ মোড়গুলোকে সাজানো হয়েছে বর্ণিল আলোয়। চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজ, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, নগর ভবন, থানা-পুলিশ ফাঁড়ি, চট্টগ্রাম বন্দর ভবনসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায়ও আলোকসজ্জা করা হয়েছে। নগরীর টাইগারপাসে সিটি মেয়রের কার্যালয় নগর ভবনের সামনে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য স্থাপন করা হয়েছে। বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ নগরীর যেসব স্থানে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি-ভাস্কর্য আছে সেগুলোকে নতুনভাবে সাজানো হয়েছে। করোনা ভীতি থাকলেও বঙ্গবন্ধুর জন্মের শত বছর পূর্তিতে বন্দরনগরীকে উৎসবের নগরীতে পরিণত করার সব প্রস্তুতিই চলছে। মোমবাতি প্রজ্বলন, আতশবাজি পোড়ানো, ফায়ার শোসহ নানা আয়োজনে রাত ৮টায় বঙ্গবন্ধুর জন্মের ক্ষণ উদযাপন করা হবে।

বিজ্ঞাপন

বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষের দিন ১৭ মার্চ বিকেলে নগরীর এম এ আজিজ স্টেডিয়ামে ২৫ হাজার মানুষের জমায়েত করে সমাবেশ করার উদ্যোগ নিয়েছিল চসিক। সেখানে ঢাকায় প্যারেড স্কয়ার থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্বোধনী অনুষ্ঠান সরাসরি সম্প্রচার এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করার কথা ছিল। তবে এরমধ্যে প্যারেড স্কয়ারের অনুষ্ঠান বাতিল হয়েছে। এরপর এম এ আজিজ স্টেডিয়ামের অনুষ্ঠানও বাতিল করা হয়েছে। একইভাবে সকালে জাতীয় শিশু দিবসের প্যারেডও বাতিল করেছে সিটি করপোরেশন।

বিজ্ঞাপন

চসিকের সচিব মো. সামশুদ্দোহা সারাবাংলাকে বলেন, ‘২৫ হাজার মানুষের সমাবেশটি আমরা বাতিল করে জাতির জনকের জন্মশতবার্ষিকীর অনুষ্ঠান পুনর্বিন্যাস করেছি। কোনো ধরনের জনসমাগম, সমাবেশ হবে না। সকালে নগর ভবনে জাতীয় পতাকা উত্তোলন হবে। সকাল ৯টায় সিটি করপোরেশনের পুরনো ভবনে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে মাল্যদান ও কেক কাটা হবে। রাত ৮টায় এম এ আজিজ স্টেডিয়াম এবং ৪১  ওয়ার্ডে আতশবাজি পোড়ানো হবে। ফায়ার শো হবে। একইসঙ্গে নগরীর ১৫টি স্থান থেকে ১ হাজার ফানুস উড়ানো হবে।’

চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ১৭ মার্চ সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় চত্বরে তোপধ্বনির মধ্য দিয়ে শত বছর আগে বঙ্গবন্ধুর এই ধরণীতে আগমন বার্তা ঘোষিত হবে। এরপর সকাল ৯টায় জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধাঞ্জলী জানানো হবে প্রশাসনের পক্ষ থেকে। চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক, মুক্তিযোদ্ধারা, পুলিশসহ সরকারি বিভিন্ন সংস্থার ঊর্ধ্বতনরা ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাবেন। শিল্পকলা একাডেমি চত্বরে আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় পতাকা উত্তোলন হবে। শিল্পকলার ভেতরে আলোচনা সভা ও কেক কাটা হবে।

জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাসুদুর রহমান জানিয়েছেন, জেলা প্রশাসনের কর্মসূচিতে মুজিব কোট পরিহিত ১০০ স্কুল শিক্ষার্থী উপস্থিত থাকবে।

চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (মিডিয়া) আবু বক্কর সিদ্দিক সারাবাংলাকে জানিয়েছেন, সকালে শিল্পকলা একাডেমিতে সিএমপি কমিশনার মো. মাহাবুবর রহমান কর্মকর্তাদের নিয়ে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দেবেন। এরপর সিএমপিতে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দেবেন তারা। দুপুরে পুলিশ লাইনস স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি হবে। সন্ধ্যায় বঙ্গবন্ধুর স্মরণে মোমবাতি প্রজ্বলন হবে। এছাড়া কেক কাটা ও দোয়া মাহফিল হবে।

সিএমপি কমিশনারের নির্দেশে নগরীর ১৬টি থানা এবং জোন অফিসগুলোতেও একইভাবে মুজিববর্ষের কর্মসূচি পালন করা হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।

থানাগুলোর মধ্যে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উদযাপনে ব্যতিক্রমী আয়োজন করতে যাছে চট্টগ্রাম নগরীর কোতোয়ালী থানা। বছরজুড়ে ‘১০০ তে ১০০’ শিরোনামে কোতোয়ালী থানা এলাকাজুড়ে ১০০টি ব্যতিক্রমী আয়োজন করা হচ্ছে। বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনে কেক কেটে ব্যতিক্রমী এই আয়োজনের উদ্বোধন করবেন নগর পুলিশের উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) এস এম মেহেদী হাসান।

কোতোয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মহসীন সারাবাংলাকে বলেন, ‘বছরব্যাপী ১০০ আয়োজনের মধ্যে রয়েছে থানার ১০০ স্পটকে সিসিটিভির আওতায় আনা, থানার ১০০টি আবাসিক হোটেলকে শতভাগ অনলাইন রেজিস্টারের আওতায় আনা, ১০০ বিশেষ ‘হ্যালো ওসি’ প্রোগ্রাম করা, ১০০ অপরাধীকে সুপথে ফেরানো, বৃক্ষরোপণ, রক্তদান, চলচ্চিত্র প্রদর্শনী, আলোকচিত্র প্রদর্শনী, ১০০ মেধাবীকে বৃত্তি প্রদান, ১০০ স্কুলে বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী বই দেওয়া, রচনা প্রতিযোগিতা, কবিতা পাঠের আসর, বিশেষ প্রার্থনা, বিশেষ স্কুল পুলিশিং, সেবা প্রার্থীদের জন্য বিশেষ আয়োজন।’

চট্টগ্রামের পুলিশ সুপার এস এম রশিদুল হকও সকালে শিল্পকলায় বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দেবেন। এরপর জেলা পুলিশ লাইনে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানিয়ে শুরু হবে জেলা পুলিশের অনুষ্ঠান। পুলিশ সুপারের নির্দেশে জেলার ১৬ থানায়ও একইভাবে মুজিববর্ষের বিভিন্ন অনুষ্ঠান হবে।

চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, সকালে নগরীর দারুল ফজল মার্কেটে দলীয় কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে। এরপর সকাল ৯টায় নগরীর কে সি দে রোডে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র প্রার্থী এম রেজাউল করিম চৌধুরীর নির্বাচনী কার্যালয়ে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন, মিষ্টি বিতরণ, দোয়া ও মিলাদের পাশাপাশি প্রতিটি ওয়ার্ডে ৭ মার্চের ভাষণ প্রচার করা হবে। এসব কর্মসূচিতে নগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন, মেয়র প্রার্থী রেজাউল করিম চৌধুরী উপস্থিত থাকবেন।

এদিকে জাতীয় সংসদের হুইপ সামশুল হক চৌধুরী নিজের নির্বাচনী এলাকা পটিয়ায় বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ, আতশবাজি উৎক্ষেপণের পর ১০০ জন প্রতিবন্ধীকে হুইলচেয়ার বিতরণ, স্থানীয় একটি কমিউনিটি সেন্টারে সীমিত সংখ্যক শিশু কিশোরদের নিয়ে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, পটিয়ার ১৫২টি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ৭৫টি স্কুল কলেজে মুজিববর্ষ পালনের উদ্যোগ নিয়েছেন। পটিয়ার ১০ হাজার ছাত্রছাত্রীকে স্কুলে স্কুলে মুজিববর্ষের উপহার পাঠানোর ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। হুইপ আরও জানান, বঙ্গবন্ধুর জীবনাদর্শ নতুন প্রজন্মের শিশু-কিশোরদের কাছে তুলে ধরতে পটিয়ার প্রতিটি স্কুলে মুজিবকর্ণার চালু করা হবে। নিজ নিজ এলাকায় রাজনৈতিক নেতা, শিক্ষক, পেশাজীবীরা এসব মুজিবকর্ণার উদ্বোধন করবেন।

সেক্টর কমান্ডার্স ফোরাম সোমবার (১৬ মার্চ) বিকেলে চট্টগ্রামের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে প্রদীপ প্রজ্বলনের মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীর অনুষ্ঠান শুরু করবে।

চট্টগ্রাম প্রেসক্লাব ও চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের (সিইউজে) পক্ষ থেকেও মুজিব জন্মশতবর্ষের অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়েছে। সিইউজের সাধারণ সম্পাদক ম. শামসুল ইসলাম সারাবাংলাকে জানিয়েছেন, সকালে প্রেসক্লাব প্রাঙ্গণে মুজিবের প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণের পর বঙ্গবন্ধুর জীবনী নিয়ে আলোচনা সভা হবে। তবে সরকারি নির্দেশনা মেনে অনুষ্ঠান সংক্ষিপ্ত করা হয়েছে।

মুজিববর্ষ উপলক্ষে বছরব্যাপী কর্মসূচী নিয়েছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) কর্তৃপক্ষ। বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে, আনন্দ শোভাযাত্রা,বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ‘শিক্ষা দর্শন’ সেমিনার, কর্ম ও জীবনভিত্তিক, রাজনৈতিক, কৃষি ও বিজ্ঞান দর্শনভিত্তিক অনুষদ অনুসারে সেমিনার, গ্রন্থ প্রকাশনা, ছাত্র-ছাত্রীদের অংশগ্রহণে কুইজ প্রতিযোগিতা, বিতর্ক প্রতিযোগিতা, ডকুমেন্টারি প্রদর্শন, দেয়ালিকা প্রকাশনা, কেক কাটা, শিশু সমাবেশ, চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, পাপেট শো, কবিতা আবৃত্তি, বঙ্গবন্ধু স্মারক বক্তৃতা, বইমেলা।

চট্ট্রগাম মুজিববর্ষ

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর