Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

স্বাধীনতা দিবসের সব কর্মসূচি বাতিল করেছে বিএনপি


২৩ মার্চ ২০২০ ২১:১০

ঢাকা: বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাস বিস্তাররোধে স্বাধীনতা দিবসের সব কর্মসূচি বাতিল করেছে বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি।

সোমবার (২৩ মার্চ) গুলশানে দলটির চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে সাংবাদিকদের মাধ্যমে দলের নেতাকর্মী, সমর্থক ও দেশবাসীকে এ সিদ্ধান্তের কথা জানান বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

তিনি বলেন, ‘আপনাদেরকে জানাতে চাই যে, স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে পূর্বঘোষিত বিএনপির সব কর্মসূচি আমরা বাতিল করেছি। কোনো রকমের জনসমাগম-সমাবেশ যেন না হয়, তার জন্য নেতা-কর্মীদেরকে দৃষ্টি রাখার আহবান জানাচ্ছি।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা আমাদের দলের নেতা-কর্মীদের বলেছি যে, তারা যে যেই অবস্থায় আছে, নিজেদেরকে সাবধান রেখে জনগণের মধ্যে সচেতনতার কাজ করবেন এবং দলের কর্মীরা যেন নিয়ম মেনে চলেন, সাবধানে থাকেন-সেই বিষয়গুলো নিশ্চিত করবেন।’

মহান স্বাধীনতা দিবসের দিন সকালে সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন এবং শেরে-বাংলা নগরে দলের প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত জিয়াউর রহমানের কবরে পুষ্পমাল্য অর্পণ করে থাকে বিএনপি। এছাড়া স্বাধীনতা দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে বিএনপি ও তার বিভিন্ন অঙ্গসংগঠন আলোচনা সভা করে। সেসব অনুষ্ঠানে দলের কেন্দ্রীয় নেতাসহ মাঠ পর্যায়ের কর্মী সমর্থকরা অংশ নেন।

করোনাভাইরাসে মোকাবিলায় সরকারের ছুটি ঘোষণা ও বিভাগীয়-জেলা পর্যায়ে সেনাবাহিনী মোতায়েনের সিদ্ধান্ত সম্পর্কে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘করোনাভাইরাসের চিকিৎসা ও জনগণকে আইসোলেটেড করে রাখার যে ব্যাপারটা আছে- একজন থেকে আরেকজনকে আইসোলেটেড করে রাখা- এ ব্যাপারটাকে সরকারের গুরুত্ব দেওয়া উচিত ছিল। যদিও তারা (সরকার) দেওয়া শুরু করেছেন।’

বিজ্ঞাপন

‘দেরিতে হলেও আমি মনে করি যে, বুঝতে পেরেছেন। বিলম্বে হলেও সরকার যে ব্যবস্থা নিচ্ছেন সেটাকে যেন নিবিড়ভাবে পরিচালনা করা হয়- সেদিকে তাদের লক্ষ্য রাখতে হবে। বাংলাদেশ একটা ঘনবসতিপূর্ণ দেশ। এই দেশে করোনার মতো ছোঁয়াচে ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ছে এবং এটা যদি নিয়ন্ত্রণ করা না যায় তাহলে ভয়াবহ রকমের বিপর্যয়ের সম্মুখীন হতে হবে।’— বলেন মির্জা ফখরুল।

নর্থ-সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়, ব্রাক বিশ্ববিদ্যালয় এবং জন হককিন্সের প্রকাশিত মেডিকেল রিপোর্টের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এটা একটা আতঙ্কসৃষ্টিকারী রিপোর্ট। বলা হচ্ছে যে, প্রায় ৫ লাখ লোক আক্রান্ত এবং বহু মানুষ এখানে মারা যাবে। আমরা প্রথম থেকে বলছিলাম যে, এই বিষয়গুলোকে নজর দিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য। দুর্ভাগ্যজনকভাবে সেটা তারা গুরুত্ব দেননি।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘মন্ত্রীরা এমন এমন উক্তি করেছেন, যা মানুষের এই আতঙ্কের মধ্যেও একটা উষ্মা ও খেদের সৃষ্টি করেছে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী গতকালও বলেছেন, তারা তিন মাস আগে থেকে প্রস্তুত ছিলেন, যার কোনো নজির আমরা দেখতে পারছি না। সরকার এই পর্যন্ত বলছে ৩৩ জন আক্রান্ত হয়েছে। পরীক্ষা করার জায়গা তো শুধুমাত্র একটা- আইইডিসিআর। সেই জায়গায় পরীক্ষা হচ্ছে, সবাই পরীক্ষা করতেও পারছেন না। যার ফলে কতজন রোগী এরই মধ্যে আক্রান্ত হয়েছেন, কতজন এর দ্বারা সংক্রামিত হয়েছেন— সেটার সঠিক পরিসংখ্যান আমরা পাচ্ছি না।’

তিনি বলেন, ‘বিদেশ থেকে আসা ৬ লাখ প্রবাসী গ্রামে-গঞ্জে ছড়িয়ে পড়ায় ভাইরাসের সংক্রামণের সংখ্যা বাড়ছে। সরকারের উদাসীনতা ও প্রশাসনের সমন্বয়হীনতা এর জন্য দায়ী। করোনাভাইরাস রোগীর চিকিৎসায় হাসপাতালের সংখ্যা বৃদ্ধি, চিকিৎসক-নার্সদের প্রশিক্ষণ, তাদের বিশেষ পোশাক ও পর্যাপ্ত কিট সরবারহের দাবি জানাচ্ছি আমরা।’

বিজ্ঞাপন

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এখনও সময় আছে, অতি দ্রুততার সঙ্গে সরকার যদি হাসপাতালগুলোকে ইক্যুপট করে, প্রতিটি জেলা হাসপাতালে যদি চিকিৎসক-নার্সদের পোশাক দেয়, টেস্টিং মেটেরিয়াল দেওয়া যায়, কিটস সরবারহ করা যায় তাহলে অন্তত চিকিৎসার ব্যবস্থা করা যাবে। আমরা মনে করি প্রতিটি হাসপাতালে একেকটা টিম থাকা দরকার। যে টিমের কাজ হবে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের সেবা দেওয়ার কাজটুকু করা।’

করোনাভাইরাসের কারণে গামেন্টর্স শিল্প রক্ষায় মালিক-শ্রমিকদের সঙ্গে আলোচনা করে ব্যবস্থাগ্রহণ এবং প্রান্তিক মানুষের জন্য ভাতা প্রদানেরও দাবি জানান মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। দেশের ৬৩ জন বিশিষ্ট নাগরিকের দেওয়া যুক্ত বিবৃতির প্রতি সমর্থনও জানান তিনি।

‘খালেদা জিয়াকে সম্পূর্ণ নিরাপদ রাখার দাবি’

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘আমরা আমাদের তরফ থেকে অথোরিটিকে বলেছি খালেদা জিয়াকে যেন সম্পূর্ণভাবে নিরাপদ রাখা হয়। তারা আমাদেরকে নিশ্চয়তা দিয়েছেন, সেটা তারা করছেন। আপনারা জানেন, তার পরিবারের পক্ষ থেকে আবেদন করা হয়েছে, মানবিক কারণে যেন তাকে চিকিৎসার জন্য মুক্ত করা হয়। আমরা সেই আবেদনে পূর্ণ সমর্থন জানিয়ে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছি, তাকে দ্রুত মুক্ত করা হোক।’

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমরা জানতে পেরেছি যে, করোনাভাইরাসের এই সময়ে সাংবাদিকদের চাকুরিচ্যুত করা হচ্ছে। এই সময়ে তাদের কর্মচ্যুত করা অমানবিক এবং অনৈতিকও বটে। আমরা আশা করব যে, গণমাধ্যমের যারা মালিক এবং ব্যবস্থাপনায় আছেন তারা এই বিষয়টাকে অবশ্যই বিবেচনা করবেন। এখন যেন কেউ কর্মচ্যুত না হয়।’

করোনাভাইরাসের সংবাদ প্রকাশের মাধ্যমে জনসচেতনতা বাড়ানোয় গণমাধ্যমের প্রশংসা করেন বিএনপি মহাসচিব।

এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন বিএনপির তথ্য ও গবেষণাবিষয়ক সম্পাদক রিয়াজউদ্দিন নসু ও চেয়ারপারসনের প্রেসউইং কর্মকর্তা শায়রুল কবির খান।

অনুষ্ঠান বাতিল বিএনপি স্বাধীনতা দিবস

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর