১১ ভাই-বোন মিলে ২০ হাজার মানুষের পাশে
২৯ মার্চ ২০২০ ১৫:৩০
ঢাকা: যখন দেখলাম জীবিকার তাগিদে রাজধানীতে ছুটে চলা মানুষগুলোর জনজীবন প্রাণঘাতি করোনাভাইরাসের কারণে বিপর্যস্ত। তখন সিদ্ধান্ত নিলাম তাদের পাশে দাঁড়াতে হবে, তাদের জন্য কিছু করতে হবে। তাই আমরা ১১ ভাই-বোন মিলে পরামর্শ করে আমরা নিজেরা ফান্ড তৈরি করলাম। এই ফান্ড দিয়ে ২০ হাজার মানু্ষকে সাহায্য দেওয়ার পরিকল্পনা নিয়ে এগুচ্ছি। কথাগুলো বলছিলেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র আতিকুল ইসলাম।
রোববার (২৯ মার্চ) দুপুরে একান্ত আলাপকালে সারাবাংলাকে এ সব কথা বলেন মেয়র আতিকুল ইসলাম।
বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া প্রাণঘাতি করোনাভাইরাসের প্রভাবে বাংলাদেশেও জনজীবনে নেমে এসেছে স্থবিরতা। অফিস-আদালতসহ সব কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করে পুরো দেশকে কার্যত লকডাউন করা হয়েছে। এতে মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত খেটে খাওয়া মানুষরা পড়েছেন চরম বিপাকে। তাই এসব মানু্ষেরা যেন জীবিকার প্রয়োজনে রাস্তায় বের হয়ে ঝুঁকিতে না পড়েন সে জন্য নিজেই ব্যক্তি উদ্যোগে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিলেন ডিএনসিসি মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম।
প্রত্যাশার কথা তুলে ধরে মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘যেহেতু আমি সদ্য অনুষ্ঠিত হওয়া নির্বাচনে মেয়র হিসেবে নির্বাচিত হয়েছি। কিন্তু দায়িত্ব নেব ১৫ মে থেকে। ভাবলাম ততদিন পর্যন্ত যদি আমি বসে থাকি তাহলে তো আমার খেটে খাওয়া যে মানুষগুলো এ দেশ, এ শহরকে সচল করে রেখেছে প্রতিদিন কোনো না কোনোভাবে তারা তো কষ্টে থাকবে। তাহলে দায়িত্ব নেওয়ার আগে কি আমার কিছুই করার নেই? বিপদের সময়ে মানুষের দরজার পাশে সাহায্যের হাত নিয়ে দাঁড়ানোই তো বড় মনুষ্যত্বের পরিচয়। সেই ভাবনা থেকে আমরা আমাদের পরিবারের ১১ ভাই-বোন মিলে নিজেরা উদ্যোগ নিয়ে কাজ শুরু করি।’
তিনি বলেন, ‘যখন কাজটা শুরু করি তখন নিজেদের ভাই-বোন, নাতি-নাতনি, আত্মীয়-স্বজনরা কিছু কিছু করে ফান্ড দিলো। এতে দেখা গেল, ভালো একটা ফান্ড হলো। এরপর ওই ফান্ড দিয়ে ২০ হাজার মানুষের একটা পরিকল্পনা নিয়ে নিত্যপ্রয়োজনীয় চাল-ডাল, আলুসহ সবকিছু কিনলাম। এরপর নিজেই শুরু করলাম প্রসেসিংয়ের কাজ। এতে আন্তরিকভাবে এগিয়ে আসলেন বিডিক্লিন নামের একটি সেচ্ছাসেবী সংগঠন।’
তিনি বলেন, ‘আমি যে কাজটা শুরু করেছি সেটি কিন্তু মানুষের যে প্রত্যাশা, যে চাহিদা সেটা কিন্তু আমার একার পক্ষে মিটানো সম্ভব নয়। এ জন্য প্রয়োজন অন্যান্য সামর্থবানদের এগিয়ে আসা। এরইমধ্যে অনেক বিত্তবান আমাদের এ কাজে অংশ নেওয়ার ইচ্ছা পোষণ করেছেন। আমরাও চায় সবাই মিলে সবার ঢাকা গড়ার যে প্লাটফর্মে আমরা এগুচ্ছি, সেটি যেন বাস্তবায়ণ করতে পারি।’
মেয়র আতিকুল সামর্থ্যবানদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘মানুষ হিসেবে মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে অসহায়ের মুখে হাসি ফুটানোর আনন্দ উপভোগ করার চেষ্টা করুন। দেখবেন নিজের কাছে কত ভালো লাগে। আপনার এ ভালো লাগাটাই হউক অন্যের বেঁচে থাকার প্রেরণা এ প্রত্যাশা। এ দেশের একটা মানুষও যাতে না খেয়ে থাকে সেটা নিশ্চিত করতে আসুন সকল দল-মত নির্বিশেষে সবার জন্য সবাই ঐক্যবদ্ধ হই।’
উল্লেখ্য, রাজধানীর বনানীতে মেয়রের অফিসে গত বৃহস্পতিবার থেকে এসব খাদ্য সামগ্রী প্যাকেট করা শুরু হয়েছে। প্রতি প্যাকেটে থাকছে ৫ কেজি করে চাল, ১ কেজি ডাল, ১টি সাবান, ১ লিটার তেল, ১ কেজি আলু ও তিনটি মাস্ক দেওয়া। এসব খাবার একটা পরিবার চারদিন খেতে পারবে। এরপরও বিকল্প ভাবনা এবং অন্যান্য বিত্তবানদের থেকে প্রাপ্ত ফান্ড দিয়ে পুনরায় এ সাহায্য অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছেন মেয়র।