ভুল ফলাফল দেয় চীনের র্যাপিড টেস্টিং কিট— অভিযোগ দেশে দেশে
২৯ মার্চ ২০২০ ১৮:৪০
নোভেল করোনাভাইরাস পরীক্ষায় বিভিন্ন দেশে চীনের পাঠানো র্যাপিড টেস্টিং কিট ভুল ফলাফল দিচ্ছে— এমন অভিযোগ করেছে কয়েকটি দেশ। কয়েকটি দেশ এসব টেস্ট কিট আর ব্যবহার না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
গেল সপ্তাহে স্পেন জানায়, চীনের পাঠানো প্রায় ৯ হাজার র্যাপিড টেস্ট কিট ভুল ফলাফল দিচ্ছে। স্পেনের সোসাইটি অব ইনফেকশাস ডিজিসেস অ্যান্ড ক্লিনিকাল মাইক্রোবায়োলজি তাদের ওয়েবসাইটে জানায়, চীন থেকে আসা নোভেল করোনাভাইরাসের র্যাপিড টেস্টিং কিটের ৭০ শতাংশের বেশি ‘ত্রুটিপূর্ণ’। এসব টেস্ট কিট চীনে ফেরত পাঠানো হবে বলেও জানায় স্পেন।
করোনা: লাইভ আপডেট
কোভিড-১৯ মোকাবিলায় স্পেন সম্প্রতি চীন থেকে প্রায় ৪৭ কোটি ডলারের চিকিৎসা সরঞ্জাম কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। এ সংক্রান্ত এক ক্রয়াদেশের আওতায় ভেন্টিলেটর, টেস্ট কিট ও ডিসপোসেবল গ্লোভস স্পেনে সরবরাহ করে চীনের চিকিৎসা সরঞ্জাম উৎপাদক প্রতিষ্ঠান। তবে স্পেনে অবস্থিত চীনের দূতাবাস দাবি করেছে, দেশটিতে পাঠানো এসব টেস্ট কিট ওই ক্রয়াদেশের আওতাভুক্ত নয়। স্পেনই বরং অনিবন্ধিত প্রতিষ্ঠান থেকে এসব পণ্য কিনেছে।
এদিকে চীনের স্থানীয় কিছু গণমাধ্যমের খবরে র্যাপিড টেস্টিং কিটের উৎপাদক প্রতিষ্ঠান শেনজেন বায়োইজি বায়োটেকনলজিকে দায়ী করা হয়েছে। খবরে বলা হয়, এ প্রতিষ্ঠানটির উৎপাদিত টেস্টিং কিটগুলো মাত্র ৩০ শতাংশ ক্ষেত্রে সঠিক ফলাফল দিচ্ছে। অর্থাৎ ৭০ শতাংশই ত্রুটিপূর্ণ।
আরও পড়ুন- স্পেনে পাঠানো ‘ত্রুটিপূর্ণ’ টেস্টিং কিট পরিবর্তন করে দেবে চীন
তবে স্পেনের অভিযোগের পর বায়োইজি তাদের এক বার্তায় প্রতিষ্ঠানটির পণ্যের সাফাই গেয়ে দাবি করে, স্পেনের হাসপাতালগুলো হয়ত এসব টেস্ট কিটের সঙ্গে দেওয়া নির্দেশিকা অনুসরণ করছে না। এসব টেস্ট কিট ব্যবহারের ক্ষেত্রে নমুনা সংগ্রহের সময় আমাদের নির্দেশিকা কঠোরভাবে অনুসরণ করতে হবে। একইসঙ্গে প্রতিষ্ঠানটি স্পেনে ব্যর্থ হওয়া টেস্ট কিটগুলো ফিরিয়ে নিয়ে নতুন টেস্ট কিট পাঠানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
এদিকে শেনজেন স্টক এক্সচেঞ্জ এরই মধ্যে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেছে। তবে বায়োইজি তাদের পণ্যকে নির্ভুল বলে দাবি করে বলেছে—এসব পণ্য যথাযথ কর্তৃপক্ষের ছাড়পত্র নিয়েই ইউরোপে পাঠানো হয়েছে।
এমন চিত্র অবশ্য স্পেনেই শুধু নয়। মালয়েশিয়া এবং চেক প্রজাতন্ত্রও সম্প্রতি চীনের টেস্ট কিট নিয়ে তাদের অভিযোগ জানিয়েছে। এসব টেস্ট কিটের ফলাফলের সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে দেশ দু’টি।
শুক্রবার (২৭ মার্চ) মালয়েশিয়ার স্বাস্থ্যমন্ত্রী নূর হিশাম আব্দুল্লাহ তার দেশের সংবাদমাধ্যমগুলোকে বলেন, ‘টেস্ট কিটগুলো তত নিখুঁত নয়।’ চীনের পরিবর্তে সিঙ্গাপুর ও দক্ষিণ কোরিয়া থেকে টেস্ট কিট কেনার কথা ভাবছে বলে খবর প্রকাশ করে দেশটির সংবাদমাধ্যমগুলো।
এছাড়া গত শুক্রবার তুরস্কের সরকার জানিয়েছে, চীনের র্যাপিড টেস্ট কিট ভুল ফলাফল দিচ্ছে। ফলে চীনের ওই টেস্ট কিটগুলো না কেনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। মিডিল ইস্ট নিউজ সেদেশের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তার বরাত দিয়ে জানায়, চীনের কিছু টেস্ট কিটের স্যাম্পল ব্যবহার করেছে তুরস্কের স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ। তবে সেগুলো ভুল ফলাফল দিচ্ছে। ফলে এসব টেস্ট কিট আর ব্যবহারের পরিকল্পনা নেই সরকারের।
গেল ডিসেম্বরে চীনে করোনাভাইরাসের উৎপত্তির পর দেশটি তাদের অভিজ্ঞতা ও ভাইরাসটির সম্পর্কে তথ্য বাকি বিশ্বের সঙ্গে আদান-প্রদানের সিদ্ধান্ত নেয়। সম্প্রতি সেই প্রতিশ্রুতি ফের ব্যক্ত করে জি-২০ দেশগুলোর এক বৈঠকে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং বলেন, চীন ভাইরাসটির সম্পর্কে যে কোন তথ্য, গবেষণা এবং ওষুধ ও ভ্যাকসিন আবিষ্কারের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সহায়তা সবার সঙ্গে আদান-প্রদানে প্রস্তুত।
উল্লেখ্য, প্রায় দুই মাস করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের পর চীনে এখন ভাইরাসটির প্রাদুর্ভাব প্রায় শূন্যের কাছাকাছি। এ ভাইরাসটি মোকাবিলায় বিশ্বের অন্যান্য দেশে নানা ধরণের সহায়তা দিচ্ছে চীন। এরই মধ্যে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে বা হুমকির মুখে রয়েছে— এমন কয়েকটি দেশে টেস্ট কিট, মাস্কসহ চিকিৎসা সরঞ্জাম অনুদান হিসেবে পাঠিয়েছে চীন। এছাড়া তাদের উৎপাদিত টেস্ট কিট, মাস্ক ও ভেন্টিলেটরও বিক্রি করছে কয়েকটি দেশে।
গত শুক্রবার চীন ২৩টি কোম্পানিকে টেস্ট কিট বিক্রয়ের জরুরী অনুমোদন দেয়। গত জানুয়ারিতে এই অনুমোদন ছিল মাত্র চারটি প্রতিষ্ঠানের।
বাংলাদেশে উদ্বেগ, চীনা দূতাবাসের ব্যাখ্যা
এদিকে, বাংলাদেশেও বিপুল পরিমাণ কোভিড-১৯ টেস্টিং কিট সরবরাহ করেছে চীন। বিভিন্ন দেশে চীনা কিটে ভুল ফল আসা, বিভিন্ন দেশ থেকে চীনা কিট ফেরত যাওয়া এবং সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো নিয়ে বাংলাদেশেও অনেকের মধ্যে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও প্রশ্ন ওঠে, বাংলাদেশে যেসব কিট চীন থেকে পাঠানো হয়েছে, সেগুলো যথাযথভাবে কার্যকর হবে কি না। পরে ঢাকায় চীন দূতাবাস থেকে এক বিবৃতিতে এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে।
চীনের ঢাকা মিশনের তৃতীয় সচিব ইয়ান-এর পাঠানো বিবৃতিতে বলা হয়, বাংলাদেশে এরই মধ্যে ৪০ হাজার ৫০০ কিট সরবরাহ করেছে চীন। সম্প্রতি স্পেনে কিছু টেস্ট কিট ভুল ফলাফল দিচ্ছে— এমন খবর আমাদের নজরে এসেছে। এতে বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। তবে সেসব টেস্ট কিট স্পেনে চীন সরকারের অনুদান নয়, বরং দেশটি চীনের একটি প্রতিষ্ঠান থেকে কিনেছে।
এ বিষয়টি স্পষ্ট করা প্রয়োজন উল্লেখ করে ওই বার্তায় বলা হয়, শেনজেন বায়োইজি বায়োটেকনোলজি নামের ওই প্রতিষ্ঠান চীনের ওষুধ সরঞ্জাম বিক্রয় নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষ ন্যাশনাল মেডিক্যাল প্রোডাক্টস অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের (এনএমপিএ) অনুমোদিত কোনো প্রতিষ্ঠান নয়। তাছাড়া দেশের বাইরে ওষুধ সরঞ্জাম বিক্রির জন্য এ প্রতিষ্ঠানটি চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ছাড়পত্রও নেয়নি। অন্যদিকে, চীন বাংলাদেশে যেসব টেস্ট কিট সরবরাহ করেছে, তার মধ্যে বায়োইজির তৈরি কোনো পণ্য নেই। এসব চিকিৎসা পণ্য চীনের অনুমোদিত প্রতিষ্ঠান থেকেই কিনে বাংলাদেশে পাঠানো হয়েছে।
এতে আরও বলা হয়, এসব টেস্ট কিট সংরক্ষণের জন্য নির্দিষ্ট শর্ত রয়েছে যা ব্যবহারকারীকে কঠোরভাবে মানতে হবে। এছাড়া পরীক্ষার সময় পেশাদার টেকনিশিয়ানদের দ্বারা টেস্ট কিটের সঙ্গে সরবরাহ নির্দেশিকা কঠোরভাবে অনুসরণ করতে হবে।
এতে আরও জানানো হয়, কোভিড-১৯ মহামারির বিরুদ্ধে যুদ্ধে চীন সবসময় বাংলাদেশের জনগণের পাশে থাকবে। চীন তার সামর্থ্য অনুযায়ী বাংলাদেশকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দিয়ে যাবে।
আরও পড়ুন-
কোভিড-১৯ চিকিৎসায় অনুমোদন পাচ্ছে জাপানের ‘অ্যাভিগান’
করোনা ঠেকাতে ২ ট্রিলিয়ন ডলার প্রণোদনা—মার্কিন কংগ্রেসে বিল পাস
করোনা করোনাভাইরাস কোভিড-১৯ চীন টেস্ট কিট বায়োইজি র্যাপিড টেস্টিং কিট