আতঙ্কিত হয়ে অতিরিক্ত খাদ্য ক্রয়ে বৈশ্বিক সংকটের আশঙ্কা
৩১ মার্চ ২০২০ ১৭:২৪
করোনাভাইরাস মহামারিতে আতঙ্ক সৃষ্টি হওয়ায় খুচরা ক্রেতারা অতিরিক্ত খাদ্যপণ্য ক্রয় করছেন। আর এতে গোটা বিশ্বেই খাদ্য সংকট সৃষ্টির আশঙ্কা রয়েছে। এরকম সংকটে বেড়ে যেতে পারে নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্যের দাম।
এমন পরিস্থিতিতে সবচেয়ে বেশি সংকটে পড়বে নাজুক সরবরাহ ব্যবস্থা সম্পন্ন দেশগুলো। যদি প্রধান খাদ্য উৎপাদক দেশগুলো তাদের অভ্যন্তরীণ চাহিদা বেড়ে যাওয়ার ফলে নতুন নতুন রফতানি নিষেধাজ্ঞা জারি করে বা বিদ্যমান নিষেধাজ্ঞা আরও বাড়ায় তবে অন্য আমদানি নির্ভর দেশগুলোতে খাদ্য সংকট দেখা দেওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা ও খাদ্য বিশেষজ্ঞরা এমনটাই আশঙ্কা করছেন।
জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও) গত সপ্তাহে তাদের এক প্রতিবেদনে জানায়, লকডাউনের কারণে খাদ্য সরবরাহ চক্রে ইতিমধ্যেই চাপ পড়েছে বলে লক্ষ্য করা যাচ্ছে। যেমন ইতিমধ্যে জাহাজ শিল্পে মন্দা দেখা দিয়েছে। উল্লেখ্য, এক দেশ থেকে আরেক দেশে খাদ্য পরিবহণে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয়ে থাকে সমুদ্র পথ বা জাহাজ। পণ্য আমদানি-রফতানি কমে যাওয়ায় এ শিল্পে মন্দা দেখা দিয়েছে।
এদিকে জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য নিরাপত্তা কমিটি আরও বড় আশঙ্কা প্রকাশ করেছে। এ কমিটি জানিয়েছে, সীমান্তগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ায় পণ্য সরবরাহ চক্র যে বাধার সম্মুখীন হয়েছে তার সবচেয়ে বড় প্রভাব পড়তে পারে খাদ্য ব্যবস্থায়। এ কমিটি খাদ্য ব্যবস্থায় নিকট ভবিষ্যতে দুর্যোগের আশঙ্কা করেছে। উল্লেখ্য, করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে অন্যতম প্রধান খাদ্য শস্য চাল ও গম রফতানিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে কয়েকটি দেশ।
আরও পড়ুন- উই হ্যাভ আ ব্যাটল টু উইন…
ইতিমধ্যে বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম চাল রফতানিকারক দেশ ভিয়েতনাম গত শুক্রবার জানিয়েছে, চালের মজুদ বাড়ানোর অংশ হিসেবে সম্প্রতি করা কয়েকটি রফতানি চুক্তি বাতিল করা হয়েছে। উল্লেখ্য, ফিলিপাইন, চীন ও আফ্রিকার কয়েকটি দেশ ভিয়েতনাম থেকে চালের অন্যতম আমদানিকারক। দেশটি চাল রফতানি বন্ধ করে দেওয়ায় এসব দেশে চালের সংকট দেখা দিতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন খাত সংশ্লিষ্টরা। এদিকে গত সপ্তায় থাইল্যান্ডে মুরগির ডিমের চাহিদা হঠাৎ বেড়ে যাওয়ায় এক সপ্তাহের জন্য রফতানি বন্ধ করে দিয়েছে দেশটি। মঙ্গলবার (৩০ মার্চ) নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ শেষ হওয়ার একদিন আগে তা আরও বাড়িয়েছে থাইল্যান্ড।
এদিকে, করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধে যখন সীমান্ত বন্ধের ফলে সরবরাহে বাধা এবং কলকারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় উৎপাদন হ্রাস পেয়েছে তখন অতিরিক্ত খাদ্য কেনার প্রবণতায় সংকট আরও বাড়বে বলে মনে করছেন খাদ্য বিশেষজ্ঞরা।
মহামারি আতঙ্কে ইতিমধ্যেই অতিরিক্ত খাদ্য কেনার প্রবণতা দেখা গিয়েছে কয়েকটি দেশের প্রধান প্রধান শহরগুলোর দোকানে। থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনামের চালের অন্যতম বাজার হংকংয়ে এ সপ্তাহের চিত্র অনেকটাই উদ্বেগ তৈরি করেছে। হংকং, উহানসহ চীনের কয়েকটি শহরে দেখা যায় সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোতে দোকানের সামনে ক্রেতাদের লম্বা সারি। তারা প্রত্যেকেই ভবিষ্যৎ খাদ্য সংকট এড়াতে নিয়মিত বাজারের চেয়েও অতিরিক্ত খাদ্য পণ্য ক্রয় করছেন এবার। যার ফলে সপ্তাহের প্রথম দিন সোমবার নাগাদ দেখা যায় বেশিরভাগ সুপারমার্কেটে চালের মজুদ শেষ হয়ে গেছে। কিছু কিছু সুপারমার্কেট ক্রেতাদের জন্য ক্রয়ের সর্বোচ্চ সীমা নির্ধারণ করে দিতে বাধ্য হয়েছে। মহামারির আতঙ্কে অতিরিক্ত খাদ্য ক্রয়ের এমন প্রবণতায় সংকট আরও বাড়বে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
এসব ব্যাপারে খাদ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যেসব দেশ মূলত একটি বা দুটি দেশ থেকে খাদ্যপণ্য আমদানি করে থাকে সেসব দেশ কিছুটা ঝুঁকিতে রয়েছে। কেননা ওই রফতানিকারক দেশগুলোর অভ্যন্তরীণ চাহিদা বাড়লে রফতানি বন্ধ করে দেওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এতে আমদানি নির্ভর দেশগুলো বিপাকে পড়তে পারে।
এসব বিষয়ে চীনের টংজি ইউনিভারসিটির অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক শেং গকিয়াং বলেন, এ বছরে আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্যে পঙ্গপালের আক্রমণে যে খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে তা আরও বড় আকার ধারণ করতে পারে আতঙ্কিত হয়ে অতিরিক্ত ক্রয় করার প্রবণতার কারণে। এছাড়া রফতানি নিষেধাজ্ঞা ও সরবরাহ চক্রে বাধা সব মিলিয়ে খাদ্যপণ্যের দাম বাড়তির দিকে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। যদি এ মহামারি দ্রুত নিয়ন্ত্রণ করা না যায়, তবে সরবরাহ চক্রে একটি সংকট তৈরি হবে যার প্রধান ভুক্তভোগী হবে চীন ও আরও কয়েকটি উদীয়মান অর্থনীতির দেশ। চীনের রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রণাধীন সংবাদ মাধ্যম ইকোনমিক ডেইলি তার এ মন্তব্য প্রকাশ করেছে।
-সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট অবলম্বনে।
ছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত
আরও পড়ুন- ২ কোটি ৪০ লাখ মানুষ চরম দারিদ্রের ঝুঁকিতে: বিশ্বব্যাংক
লকডাউন: ভারতের হতদরিদ্রের কাছে ‘মাফ’ চেয়েছেন মোদি
ভুল ফলাফল দেয় চীনের র্যাপিড টেস্টিং কিট— অভিযোগ দেশে দেশে