করোনায় যা ক্ষতি, যা করণীয় জানালেন প্রধানমন্ত্রী
৫ এপ্রিল ২০২০ ১১:২৫
ঢাকা: বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ায় গোটা বিশ্বের মতো বাংলাদেশের অর্থনীতিতেও কিছু নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এই প্রভাব কেমন হবে, তা সুনির্দিষ্ট করে বলার সময় আসেনি বলে উল্লেখ করেন তিনি। তা সত্ত্বেও তিনি সম্ভাব্য অর্থনৈতিক প্রভাবগুলো তুলে ধরেন।
রোববার (৫ এপ্রিল) গণভবনে করোনাভাইরাসের সম্ভাব্য অর্থনৈতিক প্রভাব মোকাবিলায় অর্থনৈতিক কর্মপরিকল্পনা ঘোষণা করতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ তথ্য তুলে ধরেন।
আরও পড়ুন- প্রণোদনা প্যাকেজের অপব্যবহার নয়— হুঁশিয়ারি প্রধানমন্ত্রীর
প্রধানমন্ত্রী যেসব প্রভাব তুলে ধরেন, সেগুলো হলো—
ক. আমদানি ব্যয় ও রফতানি আয়ের পরিমাণ গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ৫ শতাংশ কমেছে। অর্থবছর শেষে এই এর পরিমাণ আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
খ. চলমান মেগা প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়ন, অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা এবং ব্যাংক সুদের হার কমানোর পরিকল্পনা বাস্তবায়নে দেরি হচ্ছে। এতে বেসরকারি বিনিয়োগ প্রত্যাশিত মাত্রায় অর্জিত না হওয়ার আশঙ্কা আছে।
আরও পড়ুন- ৭২ হাজার ৭৫০ কোটি টাকার প্রণোদনা ঘোষণা প্রধানমন্ত্রীর
গ. সেবা খাত, বিশেষত হোটেল-রেস্টুরেন্ট, পরিবহন এবং এভিয়েশন ও হসপিটালিটি খাতের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়বে।
ঘ. বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশের শেয়ার বাজারের ওপরও বিরূপ প্রভাব পড়েছে।
ঙ. বিশ্বব্যাপী জ্বালানি তেলের চাহিদা ব্যাপকভাবে কমে যাওয়ায় দাম ৫০ শতাংশের বেশি কমেছে। প্রবাসী-আয়ে এর বিরূপ প্রভাব পড়বে।
চ. এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক প্রাক্কলন করেছে, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ক্ষতির পরিমাণ ৩০২ কোটি মার্কিন ডলার। কিন্তু বর্তমান প্রেক্ষাপটে মনে হচ্ছে, এ ক্ষতির পরিমাণ আরও বেশি হতে পারে।
ছ. দীর্ঘ ছুটি বা কার্যত লকডাউনের ফলে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোর উৎপাদন বন্ধ এবং পরিবহন সেবা ব্যাহত হওয়ায় স্বল্প আয়ের মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমতে এবং সরবরাহ চেনে সমস্যা হতে পারে।
আরও পড়ুন- সব শ্রেণির মানুষের জন্য ৪ অর্থনৈতিক পরিকল্পনা প্রধানমন্ত্রীর
জ. চলতি অর্থবছরের রাজস্ব সংগ্রহের পরিমাণ বাজেটের লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় কম হবে। এর ফলে অর্থবছর শেষে বাজেট ঘাটতির পরিমাণ আরও বাড়তে পারে।
ঝ. গত ৩ বছর ধরে ধারাবাহিক ৭ শতাংশের বেশি হারে প্রবৃদ্ধি অর্জন এবং ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৮ দশমিক ১৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জনের প্রধান চালিকাশক্তি ছিল শক্তিশালী অভ্যন্তরীণ চাহিদা এবং সহায়ক রাজস্ব ও মুদ্রানীতি। সামষ্টিক চলকগুলোর নেতিবাচক প্রভাবের ফলে জিডিপি’র প্রবৃদ্ধি কমতে পারে।
এই ক্ষতি থেকে উত্তরণের জন্য শেখ হাসিনা আশু করণীয় সম্পর্কেও আলোচনা করেন। এসময় তিনি সরকারি ব্যয়ের মধ্যে বিলাসী অংশের ব্যয় কমিয়ে জনসাধারণের জন্য ব্যয় বাড়াতে উৎসাহিত করেন। জনগণ যেন আর্থিক কষ্ট না পায় সেদিকে গুরুত্ব দেন। কর্মসৃজনকে প্রাধান্য ও বিদেশ সফর নিরুৎসাহিত করেন।
আরও পড়ুন- একটা মৃত্যুও কাম্য নয়: প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী সব ধরনের শিল্প খাতের জন্য আর্থিক সহায়তা প্যাকেজ প্রণয়ন করা হবে বলে জানান। তিনি বলেন, শ্রমিক-কর্মচারীদের জন্য আর্থিক সহায়তা দেওয়া হবে। পাশাপাশি সমাজের নিম্ন আয়ের মানুষদের সুরক্ষায় সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতা বাড়ানোর তাগিদ দেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সামাজিক সুরক্ষার আওতা বাড়াতে হবে। এটি আমরা ব্যাপকভাবে করতে চাই। দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাসকারী দিনমজুর, অপ্রাতিষ্ঠানিকখাতে নিয়োজিত যারা তাদের আর্থিক সুবিধা দেওয়া হবে।’
তিনি বলেন, বিনামূল্যে চাল বিতরণ অব্যাহত থাকবে। ১০ টাকা কেজিতে চাল বিতরণ করা হবে। লক্ষ্যভিত্তিক জনগোষ্ঠীর মাঝে নগদ অর্থ বিতরণ করা হবে। বয়স্কভাতা ও বিধবা ভাতা দারিদ্র্যপ্রবণ ১০০ উপজেলায় শতভাগ উন্নীত করা হবে। এছাড়া জাতির পিতার জন্মশতবর্ষের প্রকল্প গৃহহীন মানুষের গৃহ নির্মাণ প্রকল্প দ্রুত বাস্তবায়ন করা হবে। একটা মানুষও গৃহহীন, ঘরহীন থাকবে না।
আরও পড়ুন- শবে বরাত ও নববর্ষ ঘরে বসে পালনে ফের আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর
এছাড়া মুদ্রা সরবরাহ বাড়ানোর কথা বলেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক এরই মধ্যে পদক্ষেপ নিয়েছে। এই পদক্ষেপ অব্যাহত থাকবে। তাতে মূল্যস্ফীতি যেন না ঘটে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে বলেও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।
সংবাদ সম্মেলনে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির, অর্থ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব আব্দুর রউফ, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিব ড. আহমেদ কায়কাউস, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়া ও প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিমসহ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
করোনা মোকাবিলা করোনাভাইরাস কর্মপরিকল্পনা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা