গণস্বাস্থ্যের ল্যাব পরিদর্শনে প্রশাসন, ১১ এপ্রিল টেস্ট স্যাম্পল
৭ এপ্রিল ২০২০ ১৮:১৭
ঢাকা: করোনাভাইরাস টেস্ট পদ্ধতির স্যাম্পল তৈরির জন্য ব্যবহৃত গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ল্যাবরেটরি এবং এর কার্যক্রম পরিদর্শন করেছে বাংলাদেশ ওষুধ প্রশাসনের সাত সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল। মঙ্গলবার (৭ এপ্রিল) দুপুরে সাভার গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ল্যাবরেটরিতে যান তারা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, চীন থেকে রিএজেন্ট আসার পর গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের বিজ্ঞানীরা রোববার থেকেই কোভিড-১৯ টেস্ট পদ্ধতির স্যাম্পল তৈরির কাজ শুরু করেছেন। ড. বিজন কুমার শীলের নেতৃত্বে একদল বিজ্ঞানী দিন/রাত সেখানে কাজ করছেন।
তাদেই এই কর্মকাণ্ড পরিদর্শন এবং ল্যাবের সক্ষমতা স্বচক্ষে দেখার জন্য মঙ্গলবার দুপুরে ওষুধ প্রশাসনের একটি প্রতিনিধিদল সাভারে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রে যান। সেখানে কর্মরত বিজ্ঞানীদের সার্বিক কর্মকাণ্ড এবং ল্যাবরেটরির ব্যবস্থাপনা নিয়ে তারা সন্তোষ প্রকাশ করেন।
আরও পড়ুন: কিট নয়, কোভিড-১৯ শনাক্তের পদ্ধতি উদ্ভাবন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের
এ প্রসঙ্গে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী সারাবাংলাকে বলেন, ‘ওষুধ প্রশাসনের বড় একটি টিম আজ এসেছিল। তারা আমাদের সার্বিক কর্মকাণ্ড এবং ব্যবস্থাপনা দেখে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। আমাদের সব কর্মকাণ্ডে তারা সমর্থন দিয়েছেন।’
সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী ১১ এপ্রিলের মধ্যে ১০ হাজার স্যাম্পল তৈরির কাজ সম্পন্ন করবেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের বিজ্ঞানীরা এবং ওইদিনই সরকারের হাতে কোভিড-১৯ টেস্ট পদ্ধতির স্যাম্পল তুলে দেবে প্রতিষ্ঠানটি। পরীক্ষা নিরীক্ষার পর স্যাম্পল তৈরির চূড়ান্ত অনুমোদন পেলে বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদনে যাবে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র। এই মুহূর্তে তাদের ল্যাবের যে ক্ষমতা আছে, তাতে প্রতি মাসে এক লাখ স্যাম্পল তৈরি করতে পারবে তারা। অবশ্য এ জন্য প্রতি মাসে প্রয়োজন হবে ১০০ কেজি রিএজেন্ট।
এ প্রসঙ্গে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী সারাবাংলাকে বলেন, ‘চীন থেকে যে রিএজেন্ট এসেছে, তা দিয়ে আমরা ১০ হাজার স্যাম্পল তৈরি করতে পারব। কিন্তু আমাদের সক্ষমতা হলো প্রতি মাসে এক লাখ। এখন আমাদের সক্ষমতা অনুযায়ী স্যাম্পল তৈরি করতে চাইলে, চীন থেকে আরও রিএজেন্ট আমদানি করতে হবে। সেক্ষেত্রে সরকারের সহযোগিতা প্রয়োজন।’
আরও পড়ুন: করোনা শনাক্তে গণস্বাস্থ্যের পদ্ধতিকে সরকারের অনুমোদন
এদিকে স্যাম্পল তৈরির পর পরীক্ষমূলক ব্যবহারের জন্য গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রয়োজন কোভিড-১৯ পজেটিভ পাঁচ ব্যক্তির পাঁচ শিশি রক্ত। কিন্তু এখন পর্যন্ত আইইডিসিআর বা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে সেই রক্ত পায়নি গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের বিজ্ঞানীরা। তবে তারা আশাবাদী খুব শিগগিরই ওই পাঁচ শিশি রক্ত তারা পেয়ে যাবেন।
ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী এ প্রসঙ্গে সারাবাংলাকে বলেন, ‘রক্ত আমরা এখনও পাইনি। তবে আশা করছি খুব শিগগিরই পেয়ে যাব। আমাদের ব্যাপারে এখন সবাই ইতিবাচক। রক্ত দেওয়ারও তো একটা প্রসিডিউর আছে। বিষয়টা যেহেতু সিরিয়াস, সে জন্য একটু সাবধানতা অবলম্বন করতে হচ্ছে সবাইকে।’
উল্লেখ, কোভিড-১৯ টেস্ট পদ্ধতি আবিষ্কারের পর বাংলাদেশ ওষুধ প্রশসানের কাছ থেকে গত ১৮ মার্চ রিএজেন্ট আমদানির অনুমোদন পায় গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র। পরের দিনই ইংল্যান্ডের দ্যা নেটিভ অ্যান্টিজেন কোম্পানির (THE NATIVE ANTIGEN COMPANY) কাছ দশ প্রকারের ১০০ কেজি রিএজেন্ট আমদানির জন্য এলসি খোলে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র এবং দ্রুততার সঙ্গে রিএজেন্টগুলো সরবরাহের জন্য ইংল্যান্ডের ওই কোম্পানিকে তাগিদ দেয় তারা।
বিষয়টি গুরুত্ব উপলব্দি করে দ্যা নেটিভ অ্যান্টিজেন কোম্পানির (THE NATIVE ANTIGEN COMPANY) গত ২৫ মার্চের মধ্যে রিএজেন্টগুলো ঢাকায় পৌঁছে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়। কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে বিশ্বযোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়ায় প্রথম দফায় একবার তারিখ পরিবর্তন করেন ইংল্যান্ডের কোম্পানিটি। গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রকে তারা জানায়, কার্গো বিমানে ৩০ মার্চের মধ্যেই রিএজেন্টগুলো ঢাকায় পৌঁছে দেবে।
৩০ মার্চের মধ্যে রিএজেন্টগুলো হাতে পাওয়া যাবে— এমন হিসাব-নিকাশ মাথায় রেখে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের বিজ্ঞানীরা পুরো প্রস্তুতি নেন। বাংলাদেশের বাজারে থাকা প্রোডাক্টগুলো সংগ্রহ করে তারা। গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ল্যাবরেটরিতে কর্মরত এক্সপার্ট, সাধারণ কর্মী— সবার ছুটি বাতিল করে দিন রাত চলতে থাকে কোভিড-১৯ টেস্ট পদ্ধতির ফর্মুলা আপডেটের কাজ। ড. বিজন কুমার শীলের নেতৃত্বে চলে কর্মযজ্ঞ। আর অভিভাবক হিসেবে সবাইকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও দিক নির্দেশনা দিয়ে যান গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী।
কিন্তু ৩০ মার্চ বিকেলে ইংল্যান্ডের দ্যা নেটিভ অ্যান্টিজেন কোম্পানির (THE NATIVE ANTIGEN COMPANY) কাছ থেকে খবর আসে, আকাশ যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ায় রিএজেন্টগলো তারা পাঠাতে পারছে না। তবে তারা চেষ্টা করছে বিকল্প উপায়ে রিএজেন্টগুলো ঢাকায় পৌঁছাতে। সেক্ষেত্রে বিশ্বভিত্তিক ডাক পরিষেবা ফিডেক্স এক্সপ্রেস (FedEx Express)- এর প্রাইভেট কার্গো বিমানে করে রিএজেন্টগুলো ঢাকায় পাঠাবে ইংল্যান্ডের ওই কোম্পানি। কিন্ত সেটি তারা করতে পারেনি।
অবশেষে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী, চীনে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এবং জাতীয় রাজস্ববোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যানের সহযোগিতায় ৫ এপ্রিল চীন থেকে দশ আইটেমের দশ কেজি রিএজেন্ট আনতে সক্ষম হয় গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র। সেই রিএজেন্ট দিয়েই প্রতিষ্ঠানটি বিজ্ঞানিরা চেষ্টা কোভিড-১৯ টেস্ট পদ্ধতির স্যাম্পল তৈরির কাজ এগিয়ে নিচ্ছেন।
আরও পড়ুন-
‘নিউ ইয়র্ক সায়েন্স জার্নালে’ গণস্বাস্থ্যের কোভিড-১৯ টেস্ট পদ্ধতি
স্যাম্পলসহ পুরো টিম নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে যেতে চাই: ড. বিজন
‘গণস্বাস্থ্যের পদ্ধতিতে’ আগামী এক মাসে ১ লাখ লোকের করোনা টেস্ট!
প্রধানমন্ত্রীর ডাক পেলেন কোভিড-১৯’র টেস্ট উদ্ভাবক ড. বিজন কুমার
করোনাভাইরাস কোভিড-১৯ গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র টেস্ট পদ্ধতি ডা. জাফরুল্লাহ ডা. বিজন কুমার শীল পরিদর্শন ল্যাব