Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

করোনায় ৫ হাজার ৭০০ কোটি টাকা ক্ষতি ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলস খাতে!


১২ এপ্রিল ২০২০ ১৭:৩২

ঢাকা: করোনায় বৈশ্বিক মহামারিতে অন্যান্য খাতের মতো বাংলাদেশের ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলস খাতও ভয়াবহ আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। গত তিন মাসে অন্তত ৫ হাজার ৭০০ কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে এ খাতে। বৈশ্বিক অচলাবস্থা আরও দীর্ঘ হলে বাংলাদেশের ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলস খাত মহাবিপর্যয়ের মধ্যে পড়বে বলে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, এই মুহূর্তে ট্রেড এবং এভিয়েশন নিবন্ধনধারী ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলস এজেন্সির বা কোম্পানির সংখ্যা প্রায় সাড়ে তিন হাজার। এ খাতে কর্মরত জনবলের সংখ্যা প্রায় ৫০ হাজার। দেশের প্রতিষ্ঠিত ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলস কোম্পানির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের দেওয়া তথ্যমতে এই ৫০ হাজার কর্মীর জীবন এবং জীবিকা এরই মধ্যে ঝুঁকিতে পড়ে গেছে। আর্থিক দৈনদশার কারণে এদের বেতন-ভাতা দেওয়া রীতিমতো অসম্ভব হয়ে পড়েছে।

বিজ্ঞাপন

ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলস কোম্পানিগুলো সাধারণত ট্যুরিস্ট ভিসা, বিজনেস ভিসা, মেডিকেল ভিসা, হজ ও উমরাহ ভিসা, স্টুডেন্ট ভিসা প্রসেস এবং ট্যুর প্যাকেজ, ট্যুর কনসালট্যান্সি ও এয়ার টিকেটিংয়ের কাজ করে থাকে।

ইউরোপ-আমেরিকার দেশগুলোর পাশাপাশি চীন, রাশিয়া, জাপান, ভিয়েতনাম, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ডের মতো দেশগুলোতে প্রতি মাসে হাজার হাজার বাংলাদেশি নাগরিক বিভিন্ন প্রয়োজনে ভ্রমণ করে। বিশ্বায়নের যুগে দিন দিন ভ্রমণকারীর সংখ্যাও বাড়ছিল। সেইসঙ্গে বাড়ছিল ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলস খাতের উদ্যোক্তার সংখ্যা ও বিনিয়োগের পরিমাণ।

গত দুই দশকে এই খাতে নতুন করে অন্তত দুই হাজার উদ্যোক্তা তাদের পুঁজি বিনিয়োগ করেছেন। ফলে ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলস খাতে তৈরি হয়েছে নতুন কর্মসংস্থান। শুধু বাংলাদেশিদের বিদেশ ভ্রমণের জন্য ভিসা প্রসেস নয়, বিদেশি পর্যটকদের বাংলাদেশ ভ্রমণের ব্যাপারেও ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলস কোম্পানি ও এজেন্সিগুলো অগ্রণী ভূমিকা পালন করে আসছিল।

বিজ্ঞাপন

কিন্তু গত জানুয়ারিতে হঠাৎ বদলে যায় দৃশ্যপট। চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহরে হানা দেয় নভেল করোনাভাইরাস। এ ভাইরাস সংক্রমণে সৃষ্ট কোভিড-১৯ রোগে মারা যেতে থাকে শত শত লোক। দ্রুত সংক্রমণশীল করোনাভাইরাসের কারণে প্রথমে চীন, রাশিয়া, এর পর ধীরে ধীরে গোট বিশ্বে পর্যটকদের ভ্রমণ নিষিদ্ধ হয়ে যায়। একে একে বন্ধ হয়ে যায় বিমান চলাচল। এয়ার লাইনসগুলো তাদের ফ্লাইট বন্ধ করে দেয়। ফলে এক মাসের ব্যাবধানে ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলস কোম্পানিগুলোর আউটবাউন্ড, ইনবাউন্ড ও অভ্যন্তরীণ পর্যটনের শতভাগ বুকিং বাতিল হয়ে যায়।

সূত্রমতে, রাশিয়া এবং ইউরোপ আমেরিকার শীতপ্রধান দেশগুলো ভ্রমণের জন্য ভালো সময় হচ্ছে এপ্রিল থেকে অক্টোবর। যেহেতু এসব দেশের ভিসা পেতে দুয়েক মাস সময় লাগে, সেহেতু জানুয়ারি-মার্চ পর্যন্ত চলে ভিসা প্রসেসের কর্মযজ্ঞ। আর এ কাজগুলো করে থাকে ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলস কোম্পানিগুলো। কিন্তু এবারের জানুয়ারিটা শুরু হয় করোনাভাইরাস সংকটের মধ্য দিয়ে। ফলে ডিসেম্বর থেকে যেসব বুকিং অর্ডার আসতে শুরু করেছিল, সেগুলো ধীরে ধীরে বাতিল হতে থাকে। মার্চে এসে বুকিং অর্ডার পৌঁছে শূন্যের কোটায়।

জানতে চাইলে গ্লোবাল এক্সপ্লোর প্রাইভেট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এইচএম সাইফ আলী খান সারাবাংলাকে বলেন, ‘ইউরোপ-আমেরিকার দেশগুলোসহ আমরা মূলত রাশিয়ার ভিসা প্রসেস করি। আর এ দেশটি ভ্রমণের উপযুক্ত সময় হচ্ছে এপ্রিল থেকে অক্টোবর। এ জন্য জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত ভিসা প্রসেসের পিক টাইম। আমার কোম্পানির মাধ্যমে এপ্রিল-মে মাসে পাঁচটি গ্রুপে অন্তত সাড়ে ছয়শ’ লোকের রাশিয়া ভ্রমণের কথা ছিল। ভিসা প্রসেসও শুরু হয়েছিল। কিন্তু করোনার কারণে বুকিং বাতিল করেছে পর্যটকরা। ফলে পেমেন্টও আটকে গেছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে আমরা নিঃস্ব হয়ে যাব।’

ভিসা প্রসেসের পাশাপাশি টিকেটিংয়ের ক্ষেত্রে বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছে ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলস কোম্পানিগুলো। আন্তর্জাতিক ফ্লাইটের টিকেট সাধারণত ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলস কোম্পানির মাধ্যমেই কেটে থাকে পর্যটকরা।

সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, গত তিন মাসে যেসব ফ্লাইট বাতিল হয়েছে, তার বেশিরভাগ টিকেটের টাকা এয়ার লাইনসগুলো ফেরত দেয়নি। তারা ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলস কোম্পানিগুলোকে বলছে টিকেটের টাকা অ্যাডজাস্ট করে নিতে। কিন্তু পর্যটকরা অ্যাডজাস্টমেন্টে রাজি হচ্ছে না। তারা ট্যুরস অপারেটিং কোম্পানিগুলোর কাছে নগদ টাকা ফেরত চাচ্ছে। ফলে কোম্পানিগুলো গাটের পয়সা খরচ করে যাত্রীদের টিকেটের টাকা পরিশোধ করছে।

জানতে চাইলে ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলস কোম্পানি ‘এয়ার ট্রিপ’র চেয়ারম্যান মো. আবুল খায়ের সারাবাংলাকে বলেন, ‘এয়ার লাইনসগুলো বলছে, তারা নাকি টিকেটের টাকা ফেরত দিচ্ছে। কিন্তু বাস্তবতা হলো এই যে, তারা টিকেটের টাকা অ্যাডজাস্ট করে নিতে বলছে। কিন্তু যাত্রীরা তা মানছে না। বাধ্য হয়ে আমরা পকেটের টাকা দিয়ে যাত্রীর পাওনা পরিশোধ করছি।’

এদিকে এ খাতে কর্মরত শ্রমিক-কর্মকর্তাদের বেতন ভাতা প্রদান নিয়ে মহাসংকটে পড়েছে ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলস কোম্পানিগুলো। প্রথম দুই মাস কোনো রকম বেতন-ভাতা দিতে পারলেও মার্চ মাসে এসে তারা রীতিমতো হিমশিম খায়। ফলে সরকারের সাধারণ ছুটি ঘোষণার আগেই অনেক কোম্পানির অফিস বন্ধ হয়ে যায়। এখন বন্ধ অফিসের ভাড়া, গ্যাস-বিদ্যু-পানি, টেলিফোন-ইন্টারন্টে বিল দেওয়ার মতো অবস্থা নেই অনেকের।

এ প্রসঙ্গে আবুল খায়ের বলেন, ‘আমার হেড অফিসসহ দুটি শাখা অফিস বন্ধ রয়েছে। সেদিন অফিসে গিয়ে চেক বইয়ে সাইন করেছি। পুরোটা না পারলেও কিছু বেতন-ভাতা স্টাফদের দিয়েছি। নইলে ওরা বাঁচবে কীভাবে। আমাদের অবস্থা এখন এতটাই খারাপ যে, এটা কাউকে বলে বোঝানো যাবে না।’

ট্যুরস অপারেটিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ’র (টোয়াব) প্রেসিডেন্ট মো. রাফেউজ্জামান সারাবাংলাকে বলেন, ‘দ্য ওয়ার্ল্ড ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুরিজম কাউন্সিলের তথ্য অনুযায়ী, করোনাভাইরাস মহামারিতে ট্যুরিজম খাতে বিশ্বজুড়ে ৫ কোটি মানুষ কাজ হারানোর ঝুঁকিতে আছেন। আমাদের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে আমরা জানতে পেরেছি যে, করোনা ভাইরাসের কারণে বাংলাদেশের ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলস খাতে প্রায় ৫ হাজার ৭০০ কোটি টাকা ক্ষতির মুখে পড়েছে।’

করোনাভাইরাস ক্ষতি খাত ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলস

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর