করোনার ওষুধ ফ্যাভিপিরা: সুখবর আসতে পারে ২ সপ্তাহ পর
১২ এপ্রিল ২০২০ ১৯:৫৮
ঢাকা: করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) আক্রমণে গোটা বিশ্ব লণ্ডভণ্ড। ঠিক এমন সময় ইনফ্লুয়েঞ্জার চিকিৎসায় ব্যবহৃত জাপানের ওষুধ অ্যাভিগান যেন আশার আলো হয়ে এসেছে বিশ্ববাসীর সামনে। ফ্লু জাতীয় রোগের এই ওষুধ যে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর শরীরে প্রয়োগ করেও দারুণ ফল মিলেছে! জাপানের এই অ্যাভিগান ট্যাবলেটের প্যাটেন্ট নিয়ে দেশেই তা উৎপাদন করছে বেক্সিমকো ও বিকন ফার্মাসিউটিক্যালস। এরই মধ্যে ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের কাছে প্রথম ব্যাচের ওষুধ পাঠানোও হয়েছে কার্যকারিতা পরীক্ষার জন্য। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পরীক্ষার ফল জানতে অপেক্ষা করতে হবে দুই সপ্তাহ।
ফ্লু’র ওষুধ অ্যাভিগান প্রথম করোনা চিকিৎসায় ব্যবহার করে চীন। তারা জানায়, ওষুধটি করোনার চিকিৎসায় বেশ কার্যকর। এরপর জাপান করোনার চিকিৎসায় অ্যাভিগানের ব্যবহার নিয়ে কাজ করতে শুরু করে। বেশকিছু দেশ জাপানের কাছ থেকে অ্যাভিগান কিনতে শুরু করে। যুক্তরাষ্ট্রেও ৯ এপ্রিল থেকে শুরু হয়েছে অ্যাভিগানের ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল। সেই অ্যাভিগানই উৎপাদিত হচ্ছে বাংলাদেশে।
জানা গেছে, প্রায় মাসখানেক আগে দেশে অ্যাভিগান উৎপাদনের জন্য অনুমতি পায় বেক্সিমকো ও বিকন ফার্মাসিউটিক্যালস। জাপানের কাছ থেকে প্যাটেন্ট নিয়ে আসে তারা। বিকন জানিয়েছে, প্রথম ব্যাচে উৎপাদিত ১০০ ট্যাবলেট তারা কার্যকারিতা পরীক্ষার জন্য দিয়েছে ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরকে।
আরও পড়ুন- করোনা চিকিৎসায় জাপানের ‘অ্যাভিগান’ কিনছে জার্মানি
বিকন ফার্মাসিউক্যালসের পরিচালক (বৈশ্বিক) মনজুরুল আলম রোববার (১২ এপ্রিল) সারাবাংলা’কে বলেন, ‘করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসার জন্য আমরা প্রথম ব্যাচে ১০০টি ট্যাবলেট উৎপাদন করেছি। এগুলো আরও ছয় দিন আগেই ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার কাছে হস্তান্তর করেছি। ওষুধটি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসায় কতটুকু কাজ করবে, তা এখনই বলা যাচ্ছে না। তা জানার জন্য আরও দুই সপ্তাহ অপেক্ষা করতে হবে। এই দুই সপ্তাহে কোভিড-১৯ রোগীর ওপর ওষুধটি সরাসরি প্রয়োগ করে (ট্রায়াল) বাস্তব কার্যকারিতা দেখা হবে।’
বিকন ফার্মাসিউক্যালসের এই পরিচালক জানান, জাপানের অ্যাভিগানের ফর্মুলাতেই ওষুধ বানাচ্ছেন তারা। এর জেনেরিক নাম ফ্যাভিপিরাভির। আর দেশে উৎপাদিত ওষুধটির নাম দেওয়া হয়েছে ফ্যাভিপিরা।
মনজুরুল আলম আর বলেন, ‘আমাদের ওষুধটির কার্যকারিতা নির্ণয়ের জন্য (ট্রায়াল) ওষুধ প্রশাসনকে উৎপাদিত প্রথম ব্যাচের ১০০ ট্যাবলেট দেওয়া হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদফতর সংশ্লিষ্টদের নিয়ে কোভিড-১৯ রোগীর ওপর ওষুধটি পরীক্ষা করে ফল জানাবে। এ জন্য এখন প্রয়োজনীয় দল গঠন করা হচ্ছে। আশা করছি, চলতি সপ্তাহেই প্রথম ব্যাচের উৎপাদিত ওষুধ দিয়ে পরীক্ষা (ট্রায়াল) শুরু হবে এবং এর ফল আমরা আগামী দুই সপ্তাহ পর জানতে পারব।’
আরও পড়ুন- করোনা চিকিৎসায় বিনামূল্যে ‘অ্যাভিগান’ দিতে চায় জাপান!
জানতে চাইলে ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মাহবুবুর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, ‘জাপানের ওই ওষুধ (অ্যাভিগান) তো প্রথম পর্যায়ে কাজে লেগেছে। ওষুধটির ট্রায়াল চলছে জাপান, যুক্তরাষ্ট্রে। আমাদেরও এই ওষুধটি প্রয়োজন হতে পারে ভেবেই মাসখানেক আগে দেশে উৎপাদনের জন্য দুইটি প্রতিষ্ঠানকে অনুমোদন দিয়েছি। বিকন ও বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস ওষুধটি তৈরি করছে। এরই মধ্যে বিকন এই ওষুধটির একটি পর্যায়ের উৎপাদনও শেষ করেছে।’
মহাপরিচালক আরও বলেন, ‘আমাদের স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালককে জানানো হয়েছে যে আমরা এখন উৎপাদিত ওষুধের ট্রায়ালে যেতে পারি। এটা আমাদের পূর্বপ্রস্তুতি, যেন সময়মতো কাজে লাগানো যায়।’
তিনি জানান, আরও কিছু অ্যান্টিভাইরাস ওষুধের অনুমোদন দিয়ে রাখা হয়েছে, প্রয়োজনে সেগুলো যেন দ্রুত ব্যবহারে নিয়ে আসা যায়। তবে করোনাভাইরাসের চিকিৎসায় এখনো কোনো ওষুধ চূড়ান্ত হয়নি, সবগুলোই ‘ইনভেস্টিগেশন’ পর্যায়ে রয়েছে বলে জানান মেজর জেনারেল মাহবুবুর রহমান।
তিনি আরও বলেন, ‘একটি পরীক্ষায় দেখা গেছে, এই ওষুধটি (অ্যাভিগান) করোনাভাইরাসের চিকিৎসায় ভালো কাজ করেছে। জাপান ও যুক্তরাষ্ট্রে সেটি পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে। আমাদের এখানে আমরাও পরীক্ষা করে দেখব। সবগুলো পরীক্ষায় যদি দেখা যায় যে ওষুধটি ভালো কাজ করছে, তখন আমরা এর ব্যবহার শুরু করতে পারব।’
মেজর জেনারেল মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘আমাদের এখানে উৎপাদিত এই ওষুধগুলো কিন্তু এখনই বাজারে ছাড়া হবে না। দুইটি ওষুধ প্রতিষ্ঠানকে উৎপাদনের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু বাজারে বিক্রির অনুমতি দেওয়া হয়নি। কেবল গবেষণার জন্য উৎপাদনের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। প্রয়োজনে সরকার তাদের কাছ থেকে কিনে নেবে কিন্তু বাজারে মুড়ি-মুড়কির মতো বিক্রি হতে দেওয়া যাবে না। এই ওষুধের সঠিক ব্যবহার এবং বিক্রি বা মজুতের মাধ্যমে যেন কেউ ফায়দা লুটতে না পারে, তা নিশ্চিত করা হবে।
চীনে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ার পর থেকেই করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন বা টিকা ও ওষুধ নিয়ে ব্যাপক আলোচনা চলছে। তবে এখন পর্যন্ত এই ভাইরাসের কোনো টিকা আবিষ্কৃত হয়নি। তবে দেশি-বিদেশি একাধিক জার্নাল ঘেঁটে দেখা গেছে, বিভিন্ন ধরনের ফ্লুয়ের চিকিৎসায় ব্যবহৃত অ্যাভিগান, আরবিডল, ইন্টারফেরন আলফা টুবি, লোপিনাভির, ক্লোরোনকুইনিন, রেমডেসিভিরসহ প্রায় ডজনখানক ওষুধ ব্যবহার করা হচ্ছে করোনায় আক্রান্ত রোগীদের ওপরও। এর মধ্যে অ্যাভিগান প্রাথমিকভাবে অনেকটাই কার্যকর বলে প্রমাণিত হতে শুরু করেছে।
জাপানের ফুজিফিল্ম তয়োমা ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড ২০১৪ সাল থেকে ইনফ্লুয়েঞ্জা চিকিৎসার জন্য অ্যাভিগান উৎপাদন করে আসছে। চীনের উহানে করোনা আক্রমণ করার পর চীন সরকার জানিয়েছিল, অ্যাভিগান ওষুধটি করোনার চিকিৎসায় ভালো কাজ করছে। চীনের কাছ থেকে এমন তথ্য পাওয়ার এক সপ্তাহের মাথায় জাপানের স্বাস্থ্য, শ্রম ও কল্যাণমন্ত্রী কাতসুনোবু কাতো বলেন, করোনার বিরুদ্ধে অ্যাভিগান কতটুকু কার্যকর, তা পরীক্ষা করে দেখবে জাপান। পরে জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, অন্য দেশগুলোর সঙ্গে মিলে ওষুধটিকে করোনাভাইরাসের চিকিৎসায় অনুমোদিত ওষুধ হিসেবে ব্যবহার করার জন্য কাজ শুরু করেছে জাপান।
অ্যাভিগান ওষুধ প্রশাসন অধিদফতর করোনাভাইরাস করোনার ওষুধ জাপানের ওষুধ অ্যাভিগান ফ্যাভিপিরা ফ্যাভিপিরাভির বিকন ফার্মাসিউটিক্যালস বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস