করোনা মোকাবিলায় স্বাস্থ্যে জিডিপি’র ২ শতাংশ ব্যয়ের প্রস্তাব
৭ মে ২০২০ ০৮:২৩
ঢাকা: করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) প্রাদুর্ভাব শুরুর পর থেকেই স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়ন রয়েছে আলোচনায়। এ পরিস্থিতিতে অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে এই খাতকে। তারই অংশ হিসেবে চলমান বরাদ্দের তুলনায় এই খাতের বরাদ্দ দুই থেকে তিন গুণ করার প্রস্তাব এসেছে। সে প্রস্তাবনা ধরেই চলছে অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার কাজ।
পরিকল্পনা কমিশন বলছে, বর্তমানে জাতীয় বাজেটে দেশের মোট জিডিপির শূন্য দশমিক ৭ শতাংশ বরাদ্দ রয়েছে স্বাস্থ্য খাতে। চলমান সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় একে জিডিপি’র ১ দশমিক ৬ শতাংশে উন্নীত করার প্রস্তাব ছিল। তবে সে প্রস্তাব বাস্তবায়ন হয়নি। শেষ পর্যন্ত করোনা সংকট এই খাতের দিকে সবার মুখ ফিরিয়েছে। জানা গেছে, এই খাতে বরাদ্দ জিডিপি’র দেড় থেকে দুই শতাংশে উন্নীত করার প্রস্তাব চূড়ান্ত করা হচ্ছে অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায়। ২০২১ সাল থেকে ২০২৫ সালের জুনের মধ্যে বাস্তবায়নের জন্য ৫ বছর মেয়াদি এই পরিকল্পনা তৈরি করছে পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ (জিইডি)।
সূত্র জানায়, অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় স্বল্প মেয়াদি পরিকল্পনা হিসেবে স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়নে পর্যাপ্ত বরাদ্দ নিশ্চিতের কথা বলা হবে। এক্ষেত্রে করোনাভাইরাস সংক্রান্ত চিকিৎসা সরঞ্জাম, যন্ত্রপাতি ক্রয়, হাসপাতাল উন্নয়ন ও প্রয়োজনীয় ওষুধ সংগ্রহ সংক্রান্ত বিষয়ে জোর দেওয়া হবে। সেই সঙ্গে নার্স, প্যারামেডিকস ও নতুন চিকিৎসকদের প্রশিক্ষণের ব্যাপক উদ্যোগ থাকবে।
এর বাইরে দীর্ঘ মেয়াদে হাসপাতাল অবকাঠামো তৈরি, সার্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা এবং সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় দরিদ্র, মধ্যবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্তদের জন্য স্বাস্থ্য বিমা নিশ্চিত করার প্রস্তাবও থাকবে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পরিকল্পনাটি তৈরির দায়িত্বপ্রাপ্ত সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য (সিনিয়র সচিব) ড. শামসুল আলম সারাবাংলাকে বলেন, সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় স্বাস্থ্য খাতে মোট জিডিপি’র ১ দশমিক ৬ শতাংশ ব্যয়ের প্রস্তাব ছিল। সেটি বাস্তবায়ন হলে অনেক ভালো হতো। প্রস্তাবিত সংস্কারগুলো করা গেলে এখন করোনারভাইরাস মোকাবিলায় দেশের সক্ষমতা অনেক বেশি থাকত।
ড. শামসুল বলেন, বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় স্বাস্থ্য খাতে জিডিপি’র দেড় থেকে ২ শতাংশ ব্যয়ের প্রস্তাব করা হবে। এ প্রস্তাব বাস্তবায়ন করা গেলে ভবিষ্যতে যেকোনো স্বাস্থ্য দুর্যোগ মোকাবিলা করার সক্ষমতা বেশি থাকবে।
সূত্র জানায়, দুইটি মূল বিষয়কে গুরুত্ব দিয়ে অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনাটি তৈরি করা হচ্ছে। বিষয় দুইটি হলো— ত্বরান্বিত সমৃদ্ধি ও অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধি। পরিকল্পনার ধারণাপত্রে বলা হয়েছিল, এরই মধ্যে দুই ক্ষেত্রেই উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। দ্রুত প্রবৃদ্ধি নগর ও গ্রামাঞ্চলে মাথাপিছু আয় ক্রমান্বয়ে বাড়াতে সহায়তা করেছে। এর সঙ্গে রেমিট্যান্সের ব্যাপক প্রবাহের পাশাপাশি বণিজ্য, পরিবহন, স্বাস্থ্য ও শিক্ষাসহ বিভিন্ন সেবা খাতের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় অনেক গ্রামেই অ-কৃষি খাতে কাজের সুযোগ তৈরি হয়েছে। ফলে কৃষিতে কর্মসংস্থান দিন দিন কমে যাচ্ছে। কৃষি শ্রমিকদের মজুরি আগের তুলনায় বেড়েছে। নগর ও গ্রাম উভয় এলাকাতেই দারিদ্র্য দ্রুত হারে কমছে।
সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ আরও বলছে, গ্রাম এলাকাতেও মানুষের মাথাপিছু আয় বৃদ্ধির কারণে গ্রামীণ রূপান্তর চলমান রয়েছে। কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে এসব উন্নয়ন ও অগ্রগতি বাধার মুখে পড়েছে। ফলে এখন অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় করোনাভাইরাসের অভিঘাত মোকাবিলা বিশেষ গুরুত্ব পাচ্ছে।