বন্দরে করোনায় কর্মচারির মৃত্যু, কাজ বন্ধ করে সহকর্মীদের বিক্ষোভ
৭ মে ২০২০ ১৭:৫৩
চট্টগ্রাম ব্যুরো: করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে চট্টগ্রাম বন্দরের এক কর্মচারির মৃত্যুর পর সহকর্মীরা প্রায় তিন ঘণ্টা কাজ বন্ধ রেখে বিক্ষোভ করেছেন। পরে বন্দরের ঊর্দ্ধতন কর্মকর্তারা গিয়ে তাদের সুরক্ষার আশ্বাস দিলে কর্মচারিরা কাজে যোগ দেন।
বৃহস্পতিবার (৭ মে) সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত চট্টগ্রাম বন্দরের ওয়ান স্টপ সেন্টারের প্রায় শ’খানেক কর্মচারি বিক্ষোভ করেন। এসময় ওয়ান স্টপ সেন্টারে কোনো কাজ হয়নি।
চট্টগ্রাম বন্দরের ওয়ান স্টপ সেন্টারের ৫৬ বছর বয়সী এক বিল ক্লার্ক গত মঙ্গলবার (৫ মে) চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যান। বুধবার তার নমুনা পরীক্ষায় করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়ে। তার বাড়ি ঝালকাঠি জেলায়। থাকতেন চট্টগ্রাম নগরীর হালিশহরে।
তার ছেলে সারাবাংলাকে জানান, গত ১ মে তার বাবার শরীরে জ্বর আসে। পরদিন তিনি জ্বর নিয়েই অফিসে যান। এরপর শরীর খারাপ হয়ে পড়ায় ৩ মে তিনি আর অফিসে যাননি। শ্বাসকষ্ট শুরু হলে ওইদিন সন্ধ্যার পর তিনি বন্দর হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে যান। সেখানে ডাক্তাররা তাকে ওষুধ দিয়ে ১৪ দিন কোয়ারেনটাইনে থাকার পরামর্শ দেন। ৪ মে নমুনা পরীক্ষার জন্য বিভিন্নভাবে চেষ্টা করেও তিনি ব্যর্থ হন।
পরদিন ৫ মে শরীর আরও খারাপ হয়ে পড়ায় তাকে আবারও বন্দর হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে অ্যাম্বুলেন্স চেয়ে না পেয়ে আরেকটি অ্যাম্বুলেন্সে করে তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। রাত সাড়ে ১০টায় সেখানে পৌঁছার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এরপর করোনা পরীক্ষার জন্য তারা বাবার নমুনা সংগ্রহ করা হয় বলে হাসিব জানান।
বুধবার (৬ মে) রাতে চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জনের কার্যালয় থেকে জানানো হয়, মৃত ওই ব্যক্তির নমুনায় করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে।
বৃহস্পতিবার সকালে এ খবর জানাজানি হওয়ার পর চট্টগ্রাম বন্দরের ওয়ান স্টপ সেন্টারের কর্মচারিরা বিক্ষুব্ধ ও আতঙ্কিত হয়ে ওঠেন। ওয়ান স্টপ সেন্টারে জাহাজে পণ্য উঠানামা, আমদানি পণ্য খালাসের বিল-নথি জমা দেওয়াসহ যাবতীয় কাজ হয়। কিন্তু কর্মচারিরা সকাল ১০টার দিকে কাজ বন্ধ করে দেন। দুপুর ১২টার দিকে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সদস্য (প্রশাসন ও পরিকল্পনা) মো. জাফর আলমসহ দুই কর্মকর্তা তাদের সঙ্গে আলোচনায় বসেন। এরপর দুপুর ১টার দিকে কর্মচারিরা আবারও কাজে যোগ দেন।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সদস্য জাফর আলম সারাবাংলাকে বলেন, ‘ওয়ান স্টপ সেন্টারের যে কর্মচারি মারা গেছেন, উনার আশপাশে সংস্পর্শে যারা থাকতেন, তাদের কোয়ারেনটাইনে পাঠানো হয়েছে। সেখানে প্রতিদিন তিন-চার হাজার মানুষের সমাগম হয়। এই সমাগম ঠেকাতে আমরা সিএন্ডএফ এজেন্টরা যাতে একজনের বেশি না আসেন এবং সবাই যাতে একসঙ্গে না গিয়ে সারিবদ্ধভাবে প্রবেশ করেন, সেই ব্যবস্থা করছি। প্রবেশপথে জীবাণুনাশক চেম্বার করা হচ্ছে। সেন্টারের ভেতরে সারি আরও ৬টি বাড়ানো হচ্ছে। ২টি অলরেডি বাড়ানোর নির্দেশ নেওয়া হয়েছে। আরও ৪টি এক সপ্তাহের মধ্যেই বাড়াতে পারব। সব কর্মচারির মাস্ক, গ্লাভস ও স্যানিটাইজারের ব্যবস্থা করা হয়েছে।’