Sunday 29 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

আজ মুশফিকুর রহিমের জন্মদিন


৯ মে ২০২০ ০৩:৪৯

বছরটা ২০০৭, আর তারিখ ১৭ মার্চ। স্থান, পোর্ট অব স্পেনের বিখ্যাত কুইন্স পার্ক ওভাল। মনে আছে সেই দিনের কথা? অন্তত বাংলাদেশ ক্রিকেট কোনো দিনই ভুলবে না দিনটির কথা। ক্যারিবিয়ান দ্বীপগুলোতে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম ম্যাচেই সেদিন ভারতকে হারিয়ে বিশ্ব ক্রিকেটে বড় কাণ্ড ঘটিয়েছিলো টাইগাররা। আর এতে বিশ্ব ক্রিকেটেও বাংলাদেশ জানান দিয়েছিলো, সামনের দিনগুলোতে নিয়মিতই এমন দৃশ্য দেখতে হবে।

বিজ্ঞাপন

ঐতিহাসিক সেই ম্যাচটিতে বহু ঘটনা মনে পড়ার মত। শুরুতেই মাশরাফির সুইংয়ে ভয়ঙ্কর শেবাগের বিদায়ের দৃশ্যটি চোখে লেগে আছে। একইভাবে চোখে লেগে আছে ২১ বছর বয়সী এক তরুণের জয়সূচক রানটি নেওয়ার দৃশ্য। তিনি আজকের মিস্টার ডিপেন্ডেবল মুশফিকুর রহিম। হ্যাঁ, তার ব্যাট থেকেই সেদিন ভারত বধের শেষ রানটা এসেছিল। এরপরে মুশফিক এরকম বহু ম্যাচে বহু ঘটনা ঘটিয়ে দর্শকের কাছে চীর স্মরণীয় হয়ে থাকার কারণ হয়েছেন।

বিজ্ঞাপন

মুশফিক নিয়ে এত কথা বলছি কারণ আজ তার জন্মদিন। আজ তিনি ৩৩ পেরিয়ে ৩৪ এর কোটায়। সেদিনের পর থেকে পাল্টে গেছে অনেক কিছু, পালটেছেন মুশফিকও। তরুণ থেকে যুবক আর যুবক থেকে লৌহমানব।

সেদিনের সেই মুশফিক আজ দেশ সেরা ব্যাটসম্যান। সেদিনের সেই মুশফিকের নামও পালটে গেছে, এখন তার নাম হয়েছে মিস্টার ডিপেন্ডেবল। এই নামে পরিচিতি এমনি এমনি পাননি এটাই ক্রিকেট বিশ্ব সাক্ষী। যখনই বাংলাদেশ দল ব্যাটিং বিপর্যয় কিংবা কঠিন কোনো পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়, তখনই ত্রাতার ভূমিকায় অবতীর্ণ হন মুশফিকুর রহিম। এটা যেন বাংলাদেশ ক্রিকেটের নিয়মিত দর্শকের কাছে নিয়মিত দৃশ্য।

ত্রাতার ভূমিকায় মুশফিকের এগিয়ে আসার শুরুটা সেই ২০০৭ সালে ভারতের বিপক্ষে বিশ্বকাপে ওই ম্যাচ দিয়েই। ওই ম্যাচে তিন নম্বরে ব্যাটিং করতে নেমেছিলেন মুশফিকুর রহিম। বিষয়টি নাকি আগে জানাই ছিলো না মুশির! শুরুতে ব্যাট করে টাইগার বোলারদের রুদ্র মূর্তির সামনে ১৯১ রানেই গুটিয়ে যায় তৎকালীন বিশ্ব সেরা ব্যাটিং লাইনআপের ভারত। ভারতের ইনিংস শেষে মুশিকে বলা হয় দ্রুত প্রথম উইকেট পড়ে গেলে তাকে তিনে পাঠানো হবে। ওপেনার শাহরিয়ার নাফিস মাত্র ৮ রান করে ফিরলে তিনে পাঠানো হয় মুশফিককে। সামনে ভারতের বাঘা বাঘা পেস বোলার। তাতে কী? তিনে গিয়ে ফিরেছেন বাংলাদেশকে জিতিয়েই। জয়সূচক রানটাও এসেছিল তার ব্যাট থেকে। ১০৭ বলে ৫৬ রানে অপরাজিত ছিলেন মুশফিক। লো স্কোরিং ম্যাচে ধৈর্য্য ধরে খেলে কীভাবে জয় তুলে নিতে হয় তা মাত্র ২১ বছর বয়েসেই দেখিয়ে প্রশংসা কুড়িয়েছিলেন বিস্তর।

বাবার হাত ধরে বগুড়ার ‘মাটিডালি ক্রীড়াচক্রের’ মাধ্যমে ক্রিকেটের পথচলা শুরু। কিন্তু সেখানে পর্যাপ্ত কোচিং ব্যবস্থা না থাকায় মানিয়ে নিতে পারছিলেন না তিনি।

এভাবে বেশ কিছুদিন কেটে গেলো। মাটিডালিতেই নিতে থাকলেন ক্রিকেটের শিক্ষা, আরেকদিকে পড়াশোনাও চালিয়ে যেতে থাকলেন পুরোদমে। এবার হুট করে বড় মঞ্চে সুযোগ হয়ে গেলো তার। বাবা খবর পেলেন বাংলাদেশের একমাত্র ক্রীড়া প্রতিষ্ঠান বিকেএসপিতে ভর্তি ফর্ম ছেড়েছে! তাই দেরি না করে ছেলেটির জন্য একটা ফর্ম পূরণ করে জমা দিয়ে দিলেন।

বিএকএসপিতে সুযোগ করে নেওয়ার পর শুরু করলেন কঠোর পরিশ্রম। এরপর বড় সুযোগ আসল মুশির সামনে। বয়সভিত্তিক ক্রিকেটের দুর্দান্ত পারফরম্যান্সে রাস্তা খুলে গিয়েছিলো জাতীয় দলে। তবে, সেই সময় তাকে একজন উইকেটরক্ষক হিসেবেই বিবেচনা করা হত। ছেলেটির উপর নজর পড়ে যায় বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড- বিসিবি’র। ডাক পেয়ে যান ইংল্যান্ড সফরের স্কোয়াডে। সেটিও ২০০৫ সালের ঘটনা।

ইংল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম টেস্টেই অভিষেক হয় ১৮ বছর বয়সী তরুণ উদীয়মান উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান মুশফিকুর রহিমের। অভিষেক ম্যাচে মাত্র ১৯ রানেই আউট হয়ে ফিরতে হয়েছিল তাকে, যদিও সেদিন বাংলাদেশের ব্যাটিং বিপর্যয়ে মাত্র ৩ জন ব্যাটসম্যান ২ অঙ্কের ঘরে পৌঁছাতে পেরেছিলেন।

এরপর ২০০৬ সাল, বাংলাদেশ দল জিম্বাবুয়ে সফরের প্রস্তুতি নিচ্ছিলো। সেবার প্রথমবারের মতো ওয়ানডে স্কোয়াডে জায়গা হয়ে যায় তার। সাকিব-রেজার সঙ্গে সেবার ডাক পেয়ে নিজের অভিষেক সিরিজে একমাত্র ম্যাচে ব্যাটিংয়ের সুযোগ পেয়ে ১৮ রানে অপরাজিত থেকে মাঠ ছেড়েছিলেন তিনি। আর ক্রিকেটের সব থেকে সংক্ষিপ্ত সংস্করণ টি-টোয়েন্টিতেও সুযোগ হয় ২০০৬ সালেই। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে শুরু। এরপর আর কখনোই পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি মিস্টার ডিপেন্ডেবলকে। গড়েছেন একের পর এক রেকর্ড আর রচনা করেছেন ইতিহাসের। আর বিশ্বকাপে শুরুটা ত আগেই বললাম। ওই ভারতের বিপক্ষে ম্যাচটিতে ঐতিহাসিক জয়ের অন্যতম করিগর হওয়া দিয়ে শুরু।

ক্রিকেটের রাজকীয় ফরম্যাট টেস্টে দেশের পক্ষে সর্ব্বোচ ডাবল সেঞ্চুরিয়ান মুশফিকুর রহিম। ৩৬ দশমিক ৭৮ গড়ে নামের পাশে রান সংখ্যা ৪ হাজার ৪শ ১৩। সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত ইনিংস অপরাজিত ২১৯। গ্লাভস হাতে ১১৩ ডিসমিসাল করেছেন মুশি।

টেস্ট ক্রিকেটে দেশের হয়ে প্রথম ডাবল সেঞ্চুরির রেকর্ডটা আসে তার ব্যাট থেকেই। বাংলাদেশ তখন শ্রীলঙ্কা সফরে। শক্তিশালী প্রথম টেস্টে বাংলাদেশের সামনে ৫৭০ রানের বিশাল রানের পাহাড় দাঁড় করিয়ে ইনিংস ঘোষণা করলো । বিশাল লক্ষ্যে খেলতে নেমে ১৭৭ রানে ৪ ব্যাটসম্যান সাজঘরে। ইনিংস হারের সম্ভাবনা জেগে উঠলো। কিন্তু তখনই ব্যাট হাতে কঠোর হলেন মুশফিক। সেদিন দুর্দান্ত ব্যাটিং করে ২০০ রানের ইনিংস উপহার দেন। যেটি ছিলো বাংলাদেশের পক্ষে প্রথম কোনো ব্যাটসম্যানের টেস্ট ডাবল সেঞ্চুরি। সেদিন ৩২১ বলের মোকাবিলা করেছিলেন মিস্টার ডিপেন্ডেবল।

কদিন আগে সফরকারী জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ৫৮৯ মিনিট ক্রিজে থেকে সাদা পোশাকে দেশের পক্ষে সর্ব্বোচ (২১৯*) রান করার রেকর্ড গড়েন। শুধু তাই নয়, বিশ্বের প্রথম উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান হিসেবে ক্যারিয়ারে দ্বিতীয় বারের মতো ডাবল সেঞ্চুরি করার রেকর্ডও গড়েন তিনি।

লাল-সবুজের জার্সিতে ২১৮টি ওয়ানডে ম্যাচ খেলেছেন মুশি। রানের গড় ৩৬ দশমিক ৩২, মোট রান ৬ হাজার ১শ ৭৪! যেখানে সর্বোচ্চ স্কোর ১৪৪, সেঞ্চুরির দেখা পেয়েছেন ৭ বার আর ফিফটি করেছেন ৩৮টি। উইকেটরক্ষক হিসেবে দেশের পক্ষে সর্ব্বোচ্চ ২২৩টি ডিসমিসালের রেকর্ড তারই দখলে।

ক্রিকেটের ক্ষুদ্রতম ফরম্যাটে ৮৬টি ম্যাচে ২০ দশমিক ৩ গড়ে রান সংখ্যা ১ হাজার ২শ ৮২, যেখানে ব্যক্তিগত সর্ব্বোচ অপরাজিত ৭২, আছে ৫টি অর্ধশতকও। উইকেটের পেছন থেকে করেছেন ৬১ টি ডিসমিসালও।

১৯৮৭ সালের আজকের দিনে বগুড়ায় জন্ম হয় দেশ সেরা এই ব্যাটসম্যানের। শুভ জন্মদিন মিস্টার ডিপেন্ডেবল।

ক্রিকেট মুশফিকুর রহিম

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর