‘ভারত-বাংলাদেশের যৌথ আতঙ্ক সুপার সাইক্লোন আম্পান’
১৯ মে ২০২০ ২১:২৭
আবহাওয়ার খবরের বিশ্বজুড়ে বিশ্বস্ত যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ওয়েবসাইট আক্কুওয়েদারের এক প্রতিবেদনে সুপার সাইক্লোন ‘আম্পান’কে বাংলাদেশ ও ভারতের জন্য যৌথ আতঙ্ক বলে উল্লেখ করা হয়েছে। স্যাটেলাইট ইমেজ বিশ্লেষণ করে বলা হয়েছে, আম্ফান প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিয়ে বাংলাদেশ ও ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে চরম আঘাত হানতে পারে।
আক্কুওয়েদারের পক্ষ থেকে ‘আম্পান’কে ১৯৯৯ সালের পরে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট প্রথম সুপার সাইক্লোন হিসেবেও বর্ণনা করা হয়েছে। অর্থাৎ এটি একবিংশ শতাব্দীর প্রথম সুপার সাইক্লোন।
এ ব্যাপারে শীর্ষস্থানীয় আন্তর্জাতিক আবহাওয়া বিশ্লেষক জেসন নিকোলস বলেছেন, উড়িষ্যা সাইক্লোনের (১৯৯৯) পরে ‘আম্পান’ বঙ্গোপসাগরে প্রথম সুপার সাইক্লোন।
#AmphanUpdates#Odisha #Balasore জেলার উপকূলীয় গ্রামগুলিতে ঘূর্ণিঝড় থেকে ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্রে লোকজনকে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। https://t.co/fgxhXv0X35
— PIB in West Bengal (@PIBKolkata) May 19, 2020
বুধবার (২০ মে) দিনের শেষভাগে বাংলাদেশ ও ভারতের উপকূলরেখায় আঘাত হানতে পারে ‘আম্পান’।
এদিকে, মঙ্গলবার (১৯ মে) সকাল থেকেই ঘূর্ণিঝড়টি উত্তর ও উত্তর-পূর্ব দিকে সরে উন্মুক্ত বঙ্গোপসাগরের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার সময় আরও শক্তি সঞ্চয় করেছে।
এর আগে, সোমবার (১৭ মে) রাতে দেখা যায়, ‘আম্পান’ বঙ্গোপসাগরে এ যাবৎকাল রেকর্ড করা ঝড়গুলোর মধ্যে, সবচেয়ে শক্তিশালী ঝড়ে পরিণত হয়েছে। এটি ঘণ্টায় ২৭০ কিলোমিটার পর্যন্ত (ঘণ্টায় ১৬৫ মাইল) অব্যাহত বাতাসের গতিবেগ সঙ্গে নিয়ে এটি আরও তীব্রতর হচ্ছে – মার্কিন টাইফুন সতর্কতা কেন্দ্রের বরাত দিয়ে এ খবর জানিয়েছিল সিএনএন।
আরও পড়ুন – পায়রা থেকে ৬৯০ কিমি দূরত্বে আম্ফান, সকাল ৬টায় মহাবিপদ সংকেত
এমন পরিস্থিতিতে, বাংলাদেশ ও ভারতের যৌথ আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, ‘আম্পান’ উত্তর-পশ্চিম ও পশ্চিম দিকে সরে গিয়ে বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ সুন্দরবনের নিকটবর্তী হাতিয়া-ভোলার দিকে বা আরও সরে গিয়ে ভারতের দিঘার মধ্যবর্তী অঞ্চলের ওপর দিয়ে দুই দেশের উপকূলরেখা পেরিয়ে যেতে পারে।
আবহাওয়ার আন্তর্জাতিক পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, স্থলভাগে আঘাত হানার সময় ‘আম্ফান’ পশ্চিমবঙ্গ এবং বাংলাদেশজুড়ে জীবন ও সম্পদের জন্য চরম হুমকি হয়ে উঠতে পারে। যার সঙ্গে যুক্ত হতে পারে ভয়ংকর উপকূলীয় ঝড়, ভারী বর্ষণ ও জলোচ্ছ্বাস।
আরও পড়ুন – চট্টগ্রামে সরানো হচ্ছে উপকূলের বাসিন্দাদের, পাহাড় ছাড়ার নির্দেশ
বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা (ডব্লিউএমও)বিশেষতভাবে সতর্ক করে দিয়েছে, বাংলাদেশের দক্ষিণে উপকূলীয় নিম্নাঞ্চলে, আম্ফানের প্রভাবের উচ্চ জ্বলোচ্ছ্বাস আঘাত হানতে পারে এবং অঞ্চলটি প্লাবিত হওয়ার ঝুঁকিতে থাকবে। এরই মধ্যে ‘আম্পান’কে ক্যাটেগরি-৫ হ্যারিকেন হিসেবে চিহ্নিত করেছে মার্কিন সংস্থাগুলো।
অন্যদিকে, বাংলাদেশ ও ভারতের যৌথ আবহাওয়া অফিসের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে আক্কুওয়েদার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, মঙ্গলবার (১৯ মে) প্রথমার্ধ থেকেই উত্তর ও উত্তর-পূর্ব দিকে ঘুরতে শুরু করে ‘আম্পান’। সারাদিন ‘আম্পানে’র কারণে বাতাসের তীব্রতা ২২০কেপিপি/ঘণ্টা বজায় থাকবে বলে মনে করছে তারা। সেই হিসেবে বুধবার (২০মে) রাতে ঘূর্ণিঝড়টি ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের সীমান্ত বরাবর তটভূমিতে আঘাত হানতে পারে।
আরও পড়ুন – ঘূর্ণিঝড়ের বিরুদ্ধে এবারও একাই লড়বে ‘সুন্দরবন’
এ ব্যাপারে সিনিয়র আবহাওয়া বিশ্লেষক অ্যাডাম ডাউটি বলেছেন, বাংলাদেশের দক্ষিণে এবং দক্ষিণ-পশ্চিমবঙ্গ জুড়ে বিশাল নিম্নচাপের কারণে উপকূলীয় এলাকা প্লাবিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, এছাড়াও তটভূমি স্পর্শ করার আগে সাইক্লোনটি দুর্বল হয়ে পড়ার কোনো লক্ষণও প্রকাশিত হচ্ছে না।
এছাড়াও, যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সিএনএনকে আবহাওয়াবিদরা জানিয়েছেন, অমাবস্যার প্রভাবে ‘আম্পান’ বাড়তি শক্তি সঞ্চয় করে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল হয়ে চট্টগ্রামের মধ্য উপকূলের অঞ্চলগুলো পর্যন্ত বিস্তৃত হতে পারে। এ সময় স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে বড় স্রোত এসে উপকূলীয় অঞ্চল প্লাবিত করতে পারে।
আরও পড়ুন – সাতক্ষীরার ৪৩ কিমি বাঁধে ঝুঁকি, আশ্রয় কেন্দ্রে যেতে চায় না মানুষ
ওয়াশিংটন পোস্টের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, ‘আম্পান’ উত্তর-পূর্ব ভারত, বাংলাদেশের জন্য ব্যাপক প্রাণহানির সম্ভাবনা নিয়ে আসছে। যদিও সুপার সাইক্লোনটি এ বছর উত্তর গোলার্ধের তীব্রতম সাইক্লোনের আকার ধারণ করেছে। এমনকি, বঙ্গোপসাগরেও রেকর্ডকালের মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী ঘুর্ণিঝড় ‘আম্পান’।
আক্কুওয়েদার স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেছে, ১৯৯১ সালে এক প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড়ে বাংলাদেশে এক লাখ ৩৮ হাজার ৮৬৬ জন মানুষ মৃত্যুবরণ করেছিল। সেই ঘূর্ণিঝড়টি অবশ্য বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্ব উপকূলে আঘাত হেনেছিল।
আরও পড়ুন – ‘যতই ঝড়-ঝাণ্ডা আসুক অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে পারব’
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশ ও ভারত উভয় দেশের নভেল করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতির মধ্যেও প্রধান নির্বাহীদের হস্তক্ষেপে দেশ দুটির উপকূলীয় অঞ্চল থেকে হাজার হাজার মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। এছাড়াও, ঘূর্ণিঝড়ের ঝুঁকি ও ক্ষয়ক্ষতি কমাতে জরুরি সাড়াদান কর্তৃপক্ষ কাজ করছে।
আরও পড়ুন –
Accu Weather Amphan ঘূর্ণিঝড় আম্পান ঘূর্ণিঝড় আম্পান মোকাবিলা বাংলাদেশ ভারত