‘রাজনীতিতে যারা পাশে থেকে সাহস-সমর্থন দিয়েছেন, তারা চলে যাচ্ছেন’
১৪ জুন ২০২০ ১৪:৩১
ঢাকা: আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য সাবেক মন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম ও ধর্ম প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট শেখ মোহাম্মদ আব্দুল্লাহর মৃত্যুতে যে ক্ষতি হয়েছে, তা পূরণ হওয়ার নয় বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মাত্র ১৩ ঘণ্টার ব্যবধানে দলের গুরুত্বপূর্ণ এই দুই নেতার মৃত্যু ব্যক্তিগতভাবেও তার জন্য দুঃখজনক বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘রাজনীতিতে পাশে থেকে যারা সাহস ও সমর্থন দিয়েছেন, তারা একে একে আমাদের ছেড়ে চলে যাচ্ছেন। নাসিম ভাইয়ের পর শেখ আব্দুল্লাহ ভাইও চলে গেলেন। এটা আমার জন্য খুবই দুঃখজনক।’
আরও পড়ুন- সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম আর নেই
রোববার (১৪ জুন) জাতীয় সংসদ অধিবেশনে শোক প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে সংসদ নেতা এসব কথা বলেন। করোনাভাইরাস সংকটের মধ্যেই একদিনে দুই বর্ণাঢ্য নেতা ও সংসদ সদস্যের মৃত্যুতে সংসদে গভীর শোকাবহ পরিবেশ ছড়িয়ে পড়ে।
বাজেট অধিবেশনের দ্বিতীয় দিন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের বাজেট উত্থাপনের পর মুলতবি ঘোষণা করা হয়েছিল সংসদ। আজ তৃতীয় কার্যদিবসে বাজেটের ওপর আলোচনা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু দুই সংসদ সদস্যের মৃত্যু জাতীয় সংসদের কার্যক্রমকেও এলোমেলো করে দিয়েছে।
আরও পড়ুন- ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শেখ আব্দুল্লাহ আর নেই
বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন-সংগ্রামে মোহাম্মদ নাসিমের অবদানের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁকে ১৪ দলের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিলো। কারণ তিনি সকলকে নিয়ে চলতে পারতেন। শরীক দলের সদস্যরাও তাকে ভালো জানতেন। তিনি সফলতার সঙ্গে সেই দায়িত্ব পালন করেছেন। তার মৃত্যুতে বিরাট ক্ষতি হয়েছে নিঃসন্দেহে। শেখ আব্দুল্লাহ’র মৃত্যুতেও যে ক্ষতি হয়েছে তা পুরণ হবার নয় বলে তিনি উল্লেখ করেন।
আরও পড়ুন- সংসদে শোকের ছায়া
মোহাম্মদ নাসিম ওয়ান-ইলেভেনের সময় কারাগারে থাকা অবস্থায় স্ট্রোক করেছিলেন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ওই সময় কারাবন্দি সালমান এফ রহমানের জন্য একটি অ্যাম্বুলেন্স সবসময় জেলগেটে তার পরিবারের পক্ষ থেকে রাখা থাকতো। ওই অ্যাম্বুলেন্সে করে মোহাম্মদ নাসিমকে হাসপাতালে নেওয়া সম্ভব হয় বলে তিনি সে যাত্রায় বেঁচে যান। তবে ওই সময় তার শরীরের একপাশ প্যারালাইজড হয়ে যায়। তারপরও তিনি মাঠে-ময়াদানে দৌড়ে বেরিয়েছেন।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘করোনাভাইরাস আক্রান্ত উন্নত-অনুন্নত দেশের সবাই ভয়ে আছেন। এই আতঙ্কটা এমন পর্যায়ে চলে যাচ্ছে যেটা দুঃখজনক। তবে যে এলাকাটায় বেশি আক্রান্ত হচ্ছে, আমরা সঙ্গে সঙ্গে সেখানে লকডাউন করছি। মানুষের জীবনযাপন যেন স্বাভাবিক থাকে সেই ব্যবস্থা নিয়েছি।’
আরও পড়ুন- আমি এক বিশ্বস্ত সহযোদ্ধাকে হারালাম: প্রধানমন্ত্রী
অধিবেশনের শুরুতে সভাপতির বক্তব্য রাখতে গিয়ে আবেগে আক্রান্ত হয়ে পড়েন স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। অনেক কষ্টে তিনি সভাপতির বক্তৃতা শেষ করেন। এসময় তিনি রাজনৈতিক ও ব্যক্তিগত জীবনে প্রয়াত দুই নেতার অবদানের কথা তুলে ধরেন।
পরে সংসদে দুই সংসদ সদস্যের ওপর আনীত শোক প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় অংশ নেন বিরোধী দলীয় উপনেতা গোলাম মোহাম্মদ (জি এম) কাদের, আওয়ামী লীগ নেতা মতিয়া চৌধুরী, ডা. হাবিবে মিল্লাত ও মৃণাল কান্তি দাস, ওয়ার্কার্স পার্টির অ্যাডভোকেট মুস্তফা লুৎফুল্লাহ এবং জাতীয় পার্টির কাজী ফিরোজ রশীদ। আলোচনা শেষে সর্বসম্মতিতে শোক প্রস্তাবটি গ্রহণ করা হয়।
আরও পড়ুন- ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শেখ আব্দুল্লাহর মৃত্যুতে প্রধানমন্ত্রীর শোক
এরপর এক মিনিট নিরাবতা পালনের পর দুই নেতার আত্মার মাগফিরাত কামনা করে মোনাজাত করা হয়। মোনাজাত পরিচালনা করেন ডেপুটি স্পিকার অ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বী মিয়া। এরপর দিনের অন্যান্য কার্যসূচি স্থগিত করে অধিবেশন মুলতবি করা হয়।
অ্যাডভোকেট শেখ মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মোহাম্মদ নাসিম শোক প্রস্তাব গ্রহণ সংসদ অধিবেশন সংসদে শোক প্রস্তাব