Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

রেড জোন ‘চিহ্নিত’, বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকে


১৪ জুন ২০২০ ২১:৫৩

ঢাকা: ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) ১৭টি ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ২৮টি এলাকাকে ‘রেড জোন’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে করোনাভাইরাস প্রতিরোধে গঠিত কেন্দ্রীয় টেকনিক্যাল কমিটি। এছাড়া ঢাকার বাইরে চট্টগ্রামের ১০টি ওয়ার্ড এবং গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ ও নরসিংদীর একাধিক উপজেলাকেও ‘রেড জোন’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। তবে এসব এলাকার মধ্যেও কোনো কোনো এলাকাকে সুনির্দিষ্ট করে সেসব এলাকায় লকডাউন ঘোষণা করা হবে। আর এ সিদ্ধান্ত আসবে আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক থেকে।

বিজ্ঞাপন

স্বাস্থ্য অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, শনিবার (১৩ জুন) করোনা প্রতিরোধে গঠিত কেন্দ্রীয় টেকনিক্যাল কমিটির সভায় ঢাকার ‍দুই সিটি করপোরেশরে ৪৫টি এলাকা ও চট্টগ্রামের ১১টি এলাকা রেড জোন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। সেই সঙ্গে গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ এবং নরসিংদীর সংক্রমিত বিশেষ কয়েকটি উপজেলাকেও রেড জোন হিসেবে চিহ্নিত করে লকডাউনের জন্য বিবেচনায় নিতে বলা হয়।

আরও পড়ুন- জোন ব্যবস্থা বাস্তবায়নে অধিফতরের ৭ নির্দেশনা

স্বাস্থ্য অধিদফতরের একটি সূত্র বলছে, এসব এলাকাকে প্রাথমিকভাবে রেড জোনের জন্য বিবেচনা করা হলেও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকে। প্রাথমিকভাবে টেকনিক্যাল কমিটির বৈঠকে যেসব এলাকা চিহ্নিত করা হয়েছে, সেগুলোর পুরোটাই হয়তো লকডাউনের আওতায় আসবে না। সেসব এলাকার বেশি সংক্রমিত অংশগুলোকে হয়তো লকডাউনের আওতায় নিয়ে আসা হবে।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের ওই সূত্র বলছে, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরামর্শ অনুযায়ী স্থানীয় সরকার বিভাগ ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ‘রেড জোন’ চিহ্নিত এলাকাগুলোতে লকডাউন বাস্তবায়ন করবে। এ ক্ষেত্রে আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকে লকডাউনের আওতায় আনার জন্য এলাকাগুলোর ম্যাপিং চূড়ান্ত করা হবে।

আরও পড়ুন- রেড, ইয়েলো ও গ্রিন জোন নির্ধারণ হবে যেভাবে

রেড জোনে উত্তর সিটির ১৭ এলাকা

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ১৭টি এলাকাকে রেড জোনের আওতায় আনার জন্য টেকনিক্যাল কমিটির সভায় সুপারিশ এসেছে। এলাকাগুলো হলো— মিরপুর, মোহাম্মদপুর, কল্যাণপুর, গুলশান, বাড্ডা, ক্যান্টনমেন্ট, মহাখালী, তেজগাঁও, রামপুরা, আফতাবনগর, মগবাজার, এয়ারপোর্ট, বনশ্রী, রাজাবাজার, রায়েরবাজার, উত্তরা ও বসুন্ধরা।

বিজ্ঞাপন

রেড জোনে দক্ষিণ সিটির ২৮ এলাকা

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ২৮টি এলাকাকে রেড জোনের আওতায় আনার জন্য টেকনিক্যাল কমিটির সভায় সুপারিশ এসেছে। এলাকাগুলো হলো— যাত্রাবাড়ী, ডেমরা, মুগদা, গেন্ডারিয়া, ধানমন্ডি, জিগাতলা, লালবাগ, বাসাবো, শান্তিনগর, পরীবাগ, পল্টন, আজিমপুর, কলাবাগান, রমনা, সূত্রাপুর, মালিবাগ, কোতোয়ালি, টিকাটুলী, মিটফোর্ড, শাহজাহানপুর, মতিঝিল, ওয়ারী, খিলগাঁও, কদমতলী, সিদ্ধেশ্বরী, লক্ষ্মীবাজার, এলিফ্যান্ট রোড ও সেগুনবাগিচা।

আরও পড়ুন- ‘পরবর্তী নির্দেশ না আসা পর্যন্ত সীমিত আকারে চলবে অর্থনৈতিক কাজ’

ঢাকার বাইরে যেসব এলাকা ‘রেড জোনে

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ১০টি এলাকাকে রেড জোনের আওতায় আনার কথা বলা হয়েছে। এগুলো হলো— কোতোয়ালি থানার ১৬, ২০, ২১ ও ২২ নম্বর ওয়ার্ড, পতেঙ্গার ৩৯ নম্বর ওয়ার্ড, চট্টগ্রাম বন্দরে ৩৭ ও ৩৮ নম্বর ওয়ার্ড, পাহাড়তলির ১০ নম্বর ওয়ার্ড, হালিশহর এলাকার ২৬ নম্বর ওয়ার্ড ও খুলশীর ১৪ নম্বর ওয়ার্ড।

এছাড়া গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ ও নরসিংদী জেলার বিভিন্ন উপজেলাকেও রেড জোন চিহ্নিত করে লকডাউনের আওতায় নিয়ে আসার কথা বলা হয়েছে। সেক্ষেত্রে গাজীপুর জেলার পুরোটাই লকডাউন ঘোষণা করা হতে পারে।

আরও পড়ুন- রেড জোন, ইয়েলো ও গ্রিন জোন ‘হবে’ যেসব এলাকা

জানতে চাইলে সরকারের স্থানীয় সরকার বিভাগের মন্ত্রী তাজুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, সরকারের কাজ হচ্ছে জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। বর্তমান নভেল করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) পরিস্থিতিতেও সরকার কাজ করে যাচ্ছে। রোগ নিয়ন্ত্রণে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে কিছু সুপারিশ এসেছে। তার মধ্যে জোনভিত্তিক ও ক্লাস্টারভিত্তিক রোগের সংক্রমণ দেখে বিভিন্ন এলাকা লকডাউন করা হতে পারে। এরই মধ্যে মেয়রদের সঙ্গে কথা হয়েছে। তাদের এ বিষয়ে বলা হয়েছে।

মন্ত্রী আরও বলেন, ‘রেড জোন’ ঘোষণা বা লকডাউন বাস্তবায়ন কেবল স্থানীয় সরকার বা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বিষয় না। অন্যান্য মন্ত্রণালয়ও এর সঙ্গে যুক্ত আছে। সবাই মিলেই এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা হবে। সব এলাকা হয়তো একসঙ্গে লকডাউন হবে না। এক্ষেত্রে সংক্রমণের মাত্রা বিবেচনা করে লকডাউন করা হবে।

আরও পড়ুন- রেড, ইয়োলো, গ্রিন: কোন জোনে কী কী করা যাবে?

জানতে চাইলে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, আগামীকাল (সোমবার) থেকেই লকডাউন কার্যকর করা হবে— এমন তথ্য সঠিক নয়। আমরা সবাই এটা নিয়ে কাজ করছি। কোভিড-১৯ প্রতিরোধে এই ধরনের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। কিন্তু সেটা বাস্তবায়ন করা হবে অনেক কিছু বিবেচনায় নিয়ে। একসঙ্গে সব এলাকায় রেড জোন ঘোষণা করা হবে— এমন তথ্য তাই সঠিক নয়। এক্ষেত্রে বলেন সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে স্থানীয় পর্যায় থেকেও কাজ করা হবে। এক্ষেত্রে বলা যায়, দেশের নাগরিকদের সুরক্ষা বিবেচনায় সরকার বাস্তবমুখী সিদ্ধান্ত নেবে।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে কোভিড-১৯ মোকাবিলায় একটা জাতীয় পরামর্শক কারিগরি কমিটি আছে। একইসঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদফতরের একটা কমিটি আছে। তারা ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা চিহ্নিত করতে কাজ করছেন। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার তালিকা করা হচ্ছে। এসব তালিকা অনুযায়ী আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটি সিদ্ধান্ত নেবে। এক্ষেত্রে যেসব এলাকা লকডাউনের আওতায় থাকবে, সেসব এলাকার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ছুটি সংক্রান্ত বিষয়গুলো জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে বাস্তবায়ন করব। কারণ  রেড জোন সাধারণ ছুটির আওতায় থাকবে।

আরও পড়ুন- সারাদেশে রেড জোন চিহ্নিত করে শুরু হচ্ছে ‘কঠোর লকডাউন’

লকডাউন কিভাবে বাস্তবায়ন করা হবে— সে বিষয়টি কিছুটা ব্যখ্যা করে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী বলেন, লকডাউনের ক্ষেত্রে এখনই কোনো এলাকার নাম বলাটা ভুল হবে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে সিদ্ধান্ত জানার পর ক্লাস্টার বা জোনাল ভিত্তিতে লকডাউন হতে পারে। দেখা গেল, কোনো এলাকাতে দুই থেকে তিনটি বিল্ডিংয়ে সংক্রমণ বেশি। সেক্ষেত্রে ওই বিল্ডিংগুলোকেই কেবল লকডাউন করা হতে পারে। আবার কয়েকটি বিল্ডিংয়ের একটি গলিতে সংক্রমণ বেশি হলে ওই গলিকেই হয়তো কেবল রেড জোন হিসেবে লকডাউন করা হতে পারে। সেক্ষেত্রে ওই এলাকার বাসিন্দাদের জন্য কিংবা সেখানে কোনো অফিস থাকলে সেগুলোকে সাধারণ ছুটির আওতায় আনা হবে। রেড জোন এলাকায় খাবার পৌঁছানো, চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করাসহ বিভিন্ন ধরণের গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আছে, যেগুলো অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বসে নিশ্চিত করতে হবে। এলাকাবাসীর নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করতে হেল্পলাইন নম্বর দেওয়া হতে পারে। এক্ষেত্রে বলা যায়, আন্তঃমন্ত্রণালয় থেকে সবকিছু নিশ্চিত করে সহযোগীদের নিয়ে কোভিড-১৯ প্রতিরোধে এসব কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হবে।

আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক রেড জোন রেড জোন চিহ্নিত স্থানীয় সরকার বিভাগ স্থানীয় সরকার মন্ত্রী

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর