বিজ্ঞাপন

রেড, ইয়েলো ও গ্রিন জোন নির্ধারণ হবে যেভাবে

June 12, 2020 | 8:09 pm

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: নভেল করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে নতুন করে এলাকাভিত্তিক লকডাউন বাস্তবায়নের চিন্তা-ভাবনা করছে সরকার। স্বাস্থ্য অধিদফতর বিষয়টি বাস্তবায়নের জন্য ইতোমধ্যেই একটি নীতিমালা চূড়ান্ত করেছে। এসব নীতিমালার উপর নির্ভর করেই নির্ধারণ করা হবে রেড জোন, ইয়েলো জোন ও গ্রিন জোন।

বিজ্ঞাপন

জোন নির্ণয় করার ক্ষেত্রে করোনার নমুনা পরীক্ষা, শনাক্তের হার, সংক্রমণের মাত্রার মতো বেশকিছু বিষয় বিবেচেনায় নিয়ে সাপ্তাহিকভাবে পর্যালোচনা করা হবে। তার ভিত্তিতেই বিভিন্ন এলাকাকে রেড, ইয়েলো ও গ্রিন জোনে ভাগ করা হবে। সাধারণভাবে স্থানীয় বেসামরিক প্রশাসন, স্থানীয় স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা এবং স্থানীয় সরকারের নির্বাচিত প্রতিনিধিরা জোনিং ব্যবস্থাটি প্রশমিতকরণে এবং বাস্তবায়নে সক্রিয় থাকবেন।

ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা নির্ণয়ে পূর্ববর্তী ১৪ দিনের মধ্যে নমুনা পরীক্ষাগারে পরীক্ষার মাধ্যমে প্রতি এক লাখ জনগণের মাঝে কতজন করোনা পজিটিভ রোগী চিহ্নিত হয়েছে সেটিই হবে জোন নির্ণয়ের প্রাথমিক নির্দেশক।

ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা নির্ণয়ের দ্বিতীয় ধাপে যে সব নির্দেশকের উপরে কাজ করা হবে তার মধ্যে অন্যতম হলো- যদি কোনো এলাকায় পূর্ববর্তী ১৪ দিনের মধ্যে সংক্রমণের সংখ্যা দ্বিগুণ হয়ে থাকে। এছাড়াও সংক্রমণ বৃদ্ধির হার, রোগের লক্ষণভিত্তিক নজরদারি, অভ্যন্তরীণ অধিক সঞ্চরণশীলতার উপরেও নির্ভর করবে এই নির্ণয় পদ্ধতি। এই ক্ষেত্রে অধিক দারিদ্র ও খাবারের অপ্রতুলতা বিষয়টিও নির্দেশক হিসেবে কাজ করবে।

বিজ্ঞাপন

নমুনা পজিটিভের হার অর্থাৎ মোট পরীক্ষিত নমুনার মধ্যে কত শতাংশ পজিটিভ এবং পরীক্ষিত নমুনার রিপোর্ট দেওয়ার বিলম্ব অর্থাৎ নমুনা সংগ্রহের পর কতদিনের মধ্যে রিপোর্ট দেওয়া এবং শনাক্ত করা হচ্ছে সেটিও বিবেচনা করা হবে। এছাড়াও পরীক্ষার পর্যাপ্ততাকেও দ্বিতীয় পর্যায়ের নির্দেশক হিসেবে প্রাধান্য দেওয়া হবে।

বাংলাদেশের সব ইউনিয়ন পরিষদ, মহানগরী, ওয়ার্ড, মহল্লা সব কিছু এই অঞ্চলায়নের অন্তর্ভূক্ত হবে। এই অঞ্চলায়নের সময় মহানগরীগুলোর ক্ষেত্রে, ইপিআই এলাকা বা অন্য কোন সহজ পদ্ধতি (আকৃতিগত প্রকৃতিগত অথবা সুবিধামত সীমানা) ব্যবহার করা হবে যাতে করে অঞ্চলগুলোকে সুনির্দিষ্ট করা যায়।

এক্ষেত্রে স্বাস্থ্য অধিদফতরের একটি কেন্দ্রীয় সমন্বয় কমিটি করোনা সংক্রমণের বিস্তার এবং এর উপর কনটেইনমেনটের প্রভাব বিবেচনা করে জোনিং বা অঞ্চলায়নের বিষয়ে প্রাথমিক পদক্ষেপগুলো গ্রহণ করবেন।

বিজ্ঞাপন

এই ক্ষেত্রে ঢাকা সিটি করপোরেশনের ক্ষেত্রে পূর্ববর্তী ১৪ দিনে প্রতি লাখে যদি ৬০ জন বা তার বেশি ব্যক্তির মধ্যে সংক্রমণ নিশ্চিত হওয়া যায় সেক্ষেত্রে সেটিকে রেড জোন বা উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা হিসেবে ঘোষণা দেওয়া হবে। তবে ঢাকার বাইরে ১৪ দিনে প্রতি লাখে ১০ জন বা এর অধিক সংক্রমণ নিশ্চিত হওয়া গেলে সেটিকে রেড জোন ঘোষণা করা হবে।

ঢাকা সিটি করপোরেশন এলাকায় পূর্ববর্তী ১৪ দিনে প্রতি লাখে যদি তিন থেকে ৫৯ জন ব্যক্তির মধ্যে কোভিড-১৯ শনাক্ত হয় তবে সেই এলাকাকে ইয়েলো জোন বা মাঝারি ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা হিসেবে ঘোষণা করা হবে। এক্ষেত্রে ঢাকার বাইরে ১৪ দিনে নমুনা পরীক্ষাগারে তিন থেকে ৯ জন ব্যক্তির মধ্যে কোভিড-১৯ সংক্রমণ পাওয়া গেলে সেই এলাকাকে ইয়েলো জোন ঘোষণা করা হবে।

যদি কোনো এলাকায় পূর্ববর্তী ১৪ দিন সময়ে ২ জন বা এর নিচে কোভিড-১৯ সংক্রমণ পাওয়া যায় নমুনা পরীক্ষাগারের ফলাফলে সেক্ষেত্রে সেই এলাকাকে গ্রিন জোন হিসেবে চিহ্নিত করা হবে। কোনো কোভিড ১৯ পজিটিভ পাওয়া না গেলে সেটি গ্রিন জোন হিসেবে চিহ্নিত হবে।

এক্ষেত্রে একটি এলাকা রেড জোন হিসেবে ঘোষিত হয়ে যাওয়ার পর তা পরবর্তীতে হলুদ জোনের শর্ত পূরণ করলেও হলুদ জোনে রূপান্তরিত হওয়ার আগে কমপক্ষে ৩ সপ্তাহ রেড জোন হিসেবেই থাকবে।

বিজ্ঞাপন

স্বাস্থ্য অধিদফতরের একটি কেন্দ্রীয় কারিগরি গ্রুপ প্রতি সপ্তাহে এই সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য-উপাত্ত পর্যালোচনা করে জোনিংয়ের পরিবর্তন এর বিষয়টি চূড়ান্ত করবে। মূলত তারা সিদ্ধান্ত নিবে দুইটি বিষয়ে। প্রথমত কোন কোন এলাকাগুলোকে হলুদ জোন হতে রেড জোন অথবা গ্রিন জোন হতে হলুদ জোনে পরিণত করতে হবে এবং দ্বিতীয়ত কোন এলাকাগুলো রেড জোন হতে হলুদ জোনে এবং হলুদ জোন হতে গ্রিন জোনে পরিণত হবে। এই অঞ্চলভিত্তিক রঙ পরিবর্তনের সময় অবশ্যই পূর্ববর্তী ১৪ দিনের ডাটা পর্যালোচনা করতে হবে। কেন্দ্রীয় টেকনিক্যাল গ্রুপ বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার নীতিমালা, বাস্তব অভিজ্ঞতা ও অন্যান্য সংশ্লিষ্ট বিষয় বিবেচনায় এনে জোনিংয়ের নীতিমালা নির্ধারণ করবেন।

জোন ব্যবস্থা বাস্তবায়নে অধিফতরের ৭ নির্দেশনা

 

নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমগুলো পরিচালনার জন্য প্রতি এলাকাভিত্তিক লোকাল কোভিড-১৯ কমিটি গঠন করা হবে। সব ধরনের জোনের জন্যেই একটি স্ট্যান্ডিং কমিটি গঠিত হবে যারা নিয়মিতভাবে স্থানীয় অবস্থা পর্যবেক্ষণ করবেন এবং তাদের প্রাপ্ত তথ্য গুলো স্বাস্থ্য অধিদফতরকে জানবেন। সে সব তথ্য উপাত্তের উপর ভিত্তি করে কেন্দ্রীয় কমিটি উক্ত জোন এর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিবে।

এছাড়াও একটি যথাযথ কেন্দ্রীয় কারিগরি গ্রুপ কিছু নির্দেশনা অনুযায়ী এলাকাভিত্তিক রেড জোন নির্ণয় করবে। এর মধ্যে অন্যতম হলো পূর্ববর্তী ১৪ দিনের কোভিড-১৯ পজিটিভ কেসের সংখ্যা যদি ৫ দিনের কম সময়ের মধ্যেই দ্বিগুণ হয়ে যায় এবং কনফার্মড কোভিড-১৯ পজিটিভ কেসের সংখ্যা যদি লাখে ১০ জন হয়। এছাড়াও যে সকল এলাকা ঘনবসতিপূর্ণ এবং নিম্ন জীবনযাত্রা মানসম্পন্ন সেগুলোকে বিবেচনায় রাখা হবে।

এছাড়াও নমুনা পরীক্ষারভিত্তিতে কোভিড-১৯ কেসের সংখ্যা নির্ণয় করা হলেও নমুনা পরীক্ষার পর্যাপ্ততা এবং ফলাফল নিয়ে নির্ভরযোগ্যতার বিষয়গুলোও বিবেচনায় রাখা হবে জোন ভাগ করার জন্য। প্রতি লাখ জনসংখ্যার মাঝে ২০০টি টেস্ট করা যায় তবে সেটিকে পর্যাপ্ততা হিসেবে গ্রহণ করা হবে এক্ষেত্রে। অন্যদিকে, যদি এক লাখ জনসংখ্যার মাঝে ৬৫টির কম নমুনা পরীক্ষা করা হবে তবে সেটাকে অপর্যাপ্ত হিসেবে বিবেচনা করা হবে।

এক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় কারিগরি কমিটি নমুনা সংগ্রহ ও নমুনা পরীক্ষার ফলাফলে পজিটিভ হওয়ার হারকে বিবেচনায় নিবে। এছাড়াও নমুনা পরীক্ষা ফলাফল দিতে দেরি হলে সেটিও বিবেচনায় নেওয়া হবে।

এছাড়াও ইয়েলো জোন ও গ্রিন জোনের ক্ষেত্রে যে এলাকাগুলো উপসর্গের দিক দিয়ে উচ্চ ঝুঁকিতে আছে সেগুলোর উপরে আলাদাভাবে নজরদারি করা হবে। এক্ষেত্রে যে এলাকাগুলো আভ্যন্তরীণ সঞ্চরণশীলতার দিক দিয়ে উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা হিসাবে চিহ্নিত করা হবে। এক্ষেত্রে যদি দেখা যায় একটি রেড জোন অঞ্চল থেকে এই অঞ্চলে অভ্যন্তরীণ চলাচল বেশি হয়ে থাকে তবে সেটিকে আলাদা ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে বিবেচনা করা হবে।

এক জোন থেকে আরেক জোনের অবস্থান নির্ণয়ের জন্যেও থাকছে বিশেষ নির্দেশনা। এক্ষেত্রে যদি ১৪ দিনে নমুনা পরীক্ষাগার থেকে সংক্রমণের সংখ্যা বা আক্রান্তের সংখ্যা হ্রাস পেলে সেক্ষেত্রে রেড থেকে ইয়েলো এবং ইয়েলো থেকে গ্রিনে পরিবর্তন করা যেতে পারে। এই জোনিং ব্যবস্থাপনা প্রশমিতকরণ ও বাস্তবায়নে সক্রিয় থাকবে স্থানীয় সরকারের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি, স্থানীয় বেসামরিক প্রশাসন, স্থানীয় স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলি।

স্বাস্থ্য অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, এই জোনভিত্তিক পর্যালোচনা বাস্তবায়নের জন্য স্বাস্থ্য অধিদফতর একটি কেন্দ্রীয় কারিগরী গ্রুপ গঠন করবে। এই কমিটি সময়ে সময়ে জোনিং সিস্টেমের সংজ্ঞা পর্যালোচনা করবে এবং সংশ্লিষ্ট সকল বিষয়ে পর্যালোচনা করে জোনিং সিস্টেমের সংজ্ঞা ও বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া পরিবর্তন করার পরামর্শ দেবে। একই সঙ্গে পরবর্তিত পরিকল্পনা সংশ্লিষ্ট সকলকে অবহিত করা হবে। সকল সময়ে হালনাগাদ করা পরিকল্পনা অনুসরণ করে জোনিং সিস্টেম বাস্তবায়ন করতে হবে।

এছাড়াও স্বাস্থ্য অধিদফতর সংক্রামক রোগ (প্রতিরোধ, নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূল) আইন, ২০১৮ আইনের ৩০ ধারা অনুসারে সংশ্লিষ্ট জেলার সিভিল সার্জনের নিকট জোনিং ঘোষণার ক্ষমতা অর্পণ করা হয়েছে। এই ক্ষমতার কারণে সিভিল সার্জন স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, সিভিল প্রশাসন, আইনশৃংখলা ও সশস্ত্র বাহিনী এবং স্বেচ্ছাসেবকদের সহায়তায় জোনিং কার্যক্রম বাস্তবায়ন করতে পারবেন।

প্রাথমিকভাবে অবিলম্বে ৩টি জেলায় (গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ ও নরসিংদী) এবং ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের রাজাবাজার এবং দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ওয়ারিতে পরীক্ষামূলকভাবে জোনিং সিস্টেম বাস্তবায়ন কার্যক্রম শুরু হবে। জোন সুনির্দিষ্টভাবে সংশ্লিষ্ট এলাকার কোন অংশে কার্যকর হবে এবং এর পরিধি কি হবে তা প্রয়োজন অনুসারে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ নির্ধারণ করবে।

এক্ষেত্রে ইতোমধ্যেই স্বাস্থ্য অধিদফতরের পক্ষ থেকে কিছু নির্দেশনা দেশের সকল পৌরসভা ও সিটি করপোরেশনের মেয়রদের কাছে পাঠানো হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, কোভিড-১৯ রোগের চলমান ঝুঁকি বিবেচনায় বাংলাদেশের যেকোন ছোট-বড় এলাকাকে লাল, হলুদ, বা সবুজ জোন হিসাবে চিহ্নিত করা যাবে। বিদ্যমান বা নতুন এলাকায় জোনিং সিস্টেম প্রস্তাব বা পরিবর্তনের জন্য প্রতিটি সিটি করপোরেশন, পৌরসভা, জেলা ও উপজেলায় স্থানীয় কমিটি থাকবে। বিদ্যমান কোভিড-১৯ প্রতিরোধ সংক্রামক কমিটিগুলোও এই দায়িত্ব পালন করতে পারবে।

কমিটি জোনিং সিস্টেমের হালনাগাদ সংজ্ঞা ও বাস্তবায়ন কৌশল অনুযায়ী অব্যাহতভাবে স্থানীয় পরিস্থিতি পর্যালোচনা করবে এবং জোনিং সিস্টেম চালু করতে হলে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মতামত চাইবে। স্বাস্থ্য অধিদফতর কেন্দ্রীয় কারিগরী গ্রুপের মতামত সাপেক্ষে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিবে।

এছাড়াও বাস্তবায়নাধীন জোন এলাকায় কর্মরত সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চলাচল, ছুটি, দায়িত্ব পালন বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, অধিদফতর, পরিদফতর, দফতর ও প্রতিষ্ঠান প্রয়োজনীয় নির্দেশনা জারি করবে বলেও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

সারাবাংলা/এসবি/এমও

Tags: , , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন