হলি আর্টিজান হামলার ৪ বছর আজ
১ জুলাই ২০২০ ০০:১০
ঢাকা: গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্টুরেন্টের নৃশংস জঙ্গি হামলার চার বছর পূর্তি আজ। এদিন দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ ও নৃশংস জঙ্গি হামলায় ইতালির ৯ জন, জাপানের সাত জন, ভারতীয় একজন ও বাংলাদেশি তিন জন নাগরিকসহ ২২ জনকে হত্যা করেছিল জঙ্গিরা।
হামলার চার বছর পূর্তি উপলক্ষে বুধবার (১ জুলাই) সকাল থেকে নিহতদের স্বজনরা শ্রদ্ধা জানাবে। করোনা দুর্যোগের মধ্যে সীমিত পরিসারে শিডিউল মেনে জাপান, ইতালি এবং মার্কিন রাষ্ট্রদূতগণ শ্রদ্ধা জানাতে আসবেন।
আরও পড়ুন- হলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলা, ৭ আসামির মৃত্যুদণ্ড, একজন খালাস
সাধারণত যেসব এলাকায় জঙ্গি হামলা হয়, সেইসব জায়গায় হামলার বর্ষপূর্তিতে আবারও হামলা হওয়ার শঙ্কা থাকে। তাই হলি আর্টিজান রেস্টুরেন্টেসহ গুলশান এলাকার নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদার করা হয়েছে। পুলিশ বলছে, জঙ্গি হামলার কোনো সম্ভাবনা নেই। তাছাড়া হলি আর্টিজান হামলার পর গুলশানসহ আশপাশের এলাকার নিরাপত্তা ব্যবস্থা ঢেলে সাজানো হয়েছে।
বুধবার (১ জুলাই) সকাল সাড়ে ৯টার দিকে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার হলি আর্টিজান রেস্টুরেন্টে শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন। চার বছর পূর্তি উপলক্ষে সকাল থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত জনসাধারণের জন্য হামলার স্থান উন্মুক্ত থাকবে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে যে কেউ শ্রদ্ধা জানাতে পারবে।
আরও পড়ুন- ৫২ কার্যদিবস শেষে হলি আর্টিজান মামলার রায়
২০১৬ সালের ১ জুলাই রাত পৌনে ৯টার দিকে গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলা চালায় বন্দুকধারী জঙ্গিরা। ওই দিন রাতেই তারা দেশি-বিদেশি মোট ২০ জনকে হত্যা করে। বিদেশি যারা নিহত হয়েছিলেন, তাদের মধ্যে ছিলেন ইতালি, জাপান ও ভারতের নাগরিক।
হামলার দিন উদ্ধার অভিযানের সময় বন্দুকধারীদের বোমার আঘাতে নিহত হন পুলিশের দুই কর্মকর্তা। পরদিন সকালে যৌথ বাহিনীর অভিযানে নিহত হন পাঁচ হামলাকারী। চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরেক জঙ্গির মৃত্যু হয়।
আরও পড়ুন- যেভাবে রায়ের পর্যায়ে পৌঁছালো হলি আর্টিজান মামলা
হামলাকারী জঙ্গিরা হলেন— রোহান ইবনে ইমতিয়াজ, নিবরাস ইসলাম, মীর সামিহ মোবাশ্বের, খায়রুল ইসলাম পায়েল ও শফিকুল ইসলাম উজ্জ্বল ওরফে বিকাশ।
জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেট (আইএস) এ হামলার দায় স্বীকার করে। সংগঠনটির মুখপত্র আমাক হামলাকারীদের ছবি প্রকাশ করে বলে জানায় জঙ্গি তৎপরতা পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা সাইট ইন্টেলিজেন্স।
এ ঘটনায় গুলশান থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা দায়ের করে পুলিশ। মামলার পর নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক হাসনাত করিম ও কানাডার বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ও ব্যবসায়ী শাহরিয়ার খানের ছেলে তাহমিদকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের দুই দফা রিমান্ড শেষে কারাগারে পাঠানো হয়। পরে অবশ্য তাহমিদকে গুলশান মামলা থেকে অব্যাহতি দিয়ে পুলিশকে অসহযোগিতার মামলা দেয় পুলিশ। সে মামলায় তাহমিদ ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালত থেকে খালাস পান।
আরও পড়ুন- যা আছে হলি আর্টিজান হামলা মামলার রায়ে
এ হামলাকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে নিহত হয় মাস্টারমাইন্ড তামিম আহমেদ চৌধুরী, জাহিদুল ইসলাম, তানভীর কাদেরী, নুরুল ইসলাম মারজান, আবু রায়হান তারেক, সারোয়ার জাহান, আব্দুল্লাহ মোতালেব, ফরিদুল ইসলাম আকাশ, বাশারুজ্জামান চকলেট ও ছোট মিজান।
হলি আর্টিজানে হামলায় ঘটনায় দায়ের করা মামলায় মোট ২১ জনকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট দেওয়া হয়েছিল। হামলার দুই বছর পর আদালতে দাখিল করা চার্জশিটে ওই ২১ জনের নামই দেওয়া হয়। তবে ২১ জনের মধ্যে ১৩ জনই বিভিন্ন জঙ্গিবিরোধী অভিযানে নিহত হন। ওই ১৩ জনের পাশাপাশি হাসনাত করিমকেও অব্যাহতির সুপারিশ করা হয়।
ঘটনার প্রায় সাড়ে তিন বছর ও চার্জশিট জমা দেওয়ার প্রায় দেড় বছর পর ২০১৯ সালের ২৭ নভেম্বর ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী ট্রাইব্যুনালে হলি আর্টিজান মামলার রায় হয়। রায়ে সাত আসামিকে মৃত্যুদণ্ড এবং একজনকে বেকসুর খালাস দেওয়া হয়।
আরও পড়ুন- হলি আর্টিজান জঙ্গি হামলা মামলা: কেমন ছিল রায়ের ১৫ মিনিট
মৃত্যুদণ্ড পাওয়া আসামিরা হলেন— গাইবান্ধার জাহাঙ্গীর আলম ওরফে রাজীব গান্ধী, নওগাঁর আসলাম হোসেন ওরফে আসলামুল ইসলাম ওরফে রাশেদ, কুষ্টিয়ার আবদুস সবুর খান ওরফে সোহেল মাহফুজ, জয়পুরহাটের হাদীসুর রহমান ওরফে সাগর, বগুড়ার রাকিবুল হাসান ওরফে রিগ্যান, মামুনুর রশীদ ওরফে রিপন ও রাজশাহীর শরিফুল ইসলাম ওরফে খালেদ। খালাস দেওয়া হয় চাঁপাইনবাবগঞ্জের মিজানুর রহমান ওরফে বড় মিজানকে।
হলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলা বিশ্ব মানচিত্রে বাংলাদেশকে ‘অন্যরকম’ পরিচিতি এনে দেয়। ওই হামলার পরপরই পশ্চিমা দূতাবাসগুলো এ দেশে ভ্রমণের ব্যাপারে তাদের নাগরিকদের জন্য সতর্কতা জারি করে। অবশ্য সন্ত্রাসের ঝুঁকি মোকাবিলায় বাংলাদেশ সরকারের নেওয়া জোরালো উদ্যোগে পরিস্থিতি বদলাতে থাকে। সময়ের ব্যবধানে বিশ্ববাসী তাদের অবস্থানও বদলায়। বেশিরভাগ পশ্চিমা দেশ তাদের নাগরিকদের বাংলাদেশ ভ্রমণের ব্যাপারে কড়াকড়ি শিথিল করেছে।
আরও পড়ুন-
হলি আর্টিজান মামলার শুরু থেকে শেষ
আইএস জঙ্গি হামলা হলি আর্টিজান হলি আর্টিজান হামলার ৪ বছর হলি আর্টিজানে হামলা