রাজনৈতিক দলে ৩৩% নারী নেতৃত্বের বিধি না রাখা হবে জনস্বার্থবিরোধী
২ জুলাই ২০২০ ১৭:৫৮
ঢাকা: রাজনৈতিক দলে ৩৩ শতাংশ নারী নেতৃত্বের বিধান তুলে নেওয়ার সিদ্ধান্তকে সংবিধান ও জনস্বার্থবিরোধী বলছে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)। দলীয় বা রাজনৈতিক দলের স্বার্থ সিদ্ধির জন্য এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলেও মনে করছে সংগঠনটি। সুজন বলছে, এর ফলে রাজনৈতিক দলে নারীর অংশগ্রহণ আরও কমে যাবে।
বৃহস্পতিবার (২ জুলাই) রাজনৈতিক দলে নারীর অংশগ্রহণ, নির্বাচন কমিশনের অবস্থান ও সুজনের বক্তব্য শীর্ষক এক ভার্চুয়াল সাংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের নেতারা এসব কথা বলেন।
সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘আমি মনে করি না তারা যে উদ্দেশ্যে আইনটি (খসড়া) করছে, সেটি জনস্বার্থে করছে। এটা হয়তো দলীয় স্বার্থে, কারও স্বার্থ সিদ্ধির জন্য করা হয়েছে। নারীরা আমাদের জনগোষ্ঠীর অর্ধেক, তাদের অর্ধেক প্রতিনিধিত্ব থাকা উচিত। সে জায়গায় এক-তৃতীয়াংশ অংশগ্রহণের বিধান ছিল, অন্তত সেটুকু রেখে দেওয়া উচিত ছিল। নির্বাচন কমিশনে যে আইনটি আছে, এটি প্রয়োগ করা তাদের দায়িত্ব। এটিকে শিথিল করা বা বাদ দেওয়া তাদের দায়িত্ব নয়। তাহলে আমাদের যে সংবিধানিক অধিকার, নারীরা রাজনীতিতে থাকবে, সেটি থেকে কিন্তু নির্বাচন কমিশন সরে আসবে।’
বদিউল বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন একটি স্বাধীন প্রতিষ্ঠান। তাদের স্বাধীনভাবে দায়িত্ব পালন করার কথা। তাদের দায়বদ্ধতা নাগরিকদের কাছে, কোনো রাজনৈতিক দলের কাছে নয়। তাদের জনস্বার্থে কাজ করার কথা, কোনো রাজনৈতিক দলের স্বার্থে কিংবা কোনো কোঠারি স্বার্থে নয়। এই যে আইনটি তারা প্রস্তাব করেছে, এর উদ্দেশ্যটা কী? এটার উদ্দেশ্য কি জনস্বার্থ? নাকি রাজনৈতিক দলের স্বার্থ?’
তিনি আরও বলেন, নিবন্ধনের জন্য যদি নতুন আইন করতে হয়, তবে সেটির লক্ষ্য হওয়া উচিত রাজনৈতিক দলকে স্বচ্ছ করা, দায়বদ্ধ করা, গণতান্ত্রিক করা। একটি রাষ্ট্র যদি গণতান্ত্রিক হয়, রাজনৈতিক দল যদি গণতন্ত্র চর্চা না করে, সেখানে গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা আশা করা দুরাশা মাত্র।
সুজন নেতা আইনজীবী ড. শাহদীন মালিক বলেন, নির্বাচন কমিশন অদক্ষতা ও মেরুদণ্ডহীনতার পরিচয় দিচ্ছে। কোনো একটি বিষয় বাস্তবায়ন করতে পারব না বলে তা বাদ দিয়ে দেবো, তা নয়। নিয়ন্ত্রণমূলক সংস্থার কাজ নিয়ন্ত্রণমূলক আইন বাতিল করে দেওয়া নয়। তাদের কাজ হওয়ার কথা রাজনীতিতে নারীদের অংশগ্রহণের পথ সুগম করা। আর এই খসড়াটি প্রস্তাব করা হলে তা হবে সংবিধান পরিপন্থী আইনের প্রস্তাব।
ইসি সূত্রে জানা গেছে, ২০০৮ সালে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধন করে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। সংশোধিত আরপিও’তে বলা হয়, ‘রাজনৈতিক দলগুলোকে ২০২০ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে সব পর্যায়ের কমিটিতে নারী নেতৃত্ব ৩৩ শতাংশ নিশ্চিত করতে হবে।’ আরপিও সংশোধনের ১১ বছর পার হলেও কোনো রাজনৈতিক দল ইসির বেঁধে দেওয়া শর্ত পূরণ করতে পারেনি। এ অবস্থায় ইসি আরপিওটি সংশোধন করে রাজনৈতিক দল নিবন্ধনের নতুন আইন করার উদ্যোগ নিয়েছে। নতুন আইনের খসড়ায় রাজনৈতিক দলের সব কমিটিতে ৩৩ শতাংশ নারী নেতৃত্ব রাখার বাধ্যবাধকতা রাখা হয়নি।
আরও পড়ুন-
রাজনৈতিক দলে ৩৩ শতাংশ নারী নেতৃত্ব রাখার বিধান থাকছে না!
‘রাজনৈতিক দলে ৩৩% নারী নেতৃত্বের বিধি তুলে দেওয়া হবে আত্মঘাতী’
৩৩ শতাংশ নারী নেতৃত্ব রাজনৈতিক দলে নারী নেতৃত্ব সুজন সুশাসনের জন্য নাগরিক