‘রিজেন্ট হাসপাতালের চেয়ারম্যানসহ দোষীদের বিরুদ্ধে মামলা হবে’
৭ জুলাই ২০২০ ০৯:৪৭
ঢাকা: নভেল করোনাভাইরাসে (কোভিড-১৯) আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসাসেবা দেওয়ার নামে প্রতারণাসহ তিনটি অভিযোগে রিজেন্ট হাসপাতালের চেয়ারম্যান মো. সাহেদকে এক নম্বর আসামি করে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে মামলা হবে বলে জানিয়েছেন র্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার আলম।
সোমবার (৬ জুলাই) উত্তরার রিজেন্ট হাসপাতালের নানা অনিয়মের বিরুদ্ধে অভিযান শেষে সারাবাংলাকে একথা বলেন র্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার আলম।
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট বলেন, ‘আমরা আজকে এখানে অনেক ধরণের প্রতারণার প্রমাণ পেয়েছি। আর এগুলো হয়েছে চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে। তাদের বাসায় গিয়ে নমুনা পরীক্ষার অনুমতি ছিল না কিন্তু তারা সেটি করেছে টাকা নিয়ে। এই নমুনা পরীক্ষা করাতে গিয়েও তারা জালিয়াতি করেছে ভুয়া রিপোর্ট দিয়ে। এ নিয়ে অনেক অভিযোগ আমাদের কাছে আসে। আজ আমার দুইজন সহকর্মীর কাছ থেকেও টাকা নিয়ে নমুনা পরীক্ষা করানো হয়েছে কোনো মানি রিসিট ছাড়াই। এসময় আমরা যে টাকা দিয়েছি তার নোট নম্বর টুকে রাখি। আমরা পরবর্তীতে হাসপাতালে অভিযানকালে এমন অনেক সনদ পেয়েছি যা নমুনা পরীক্ষা করা ছাড়াই বানানো হয়েছে।’
আইইডিসিআর, আইটিএইচ ও নিপসম থেকে ৪ হাজার ২০০ রোগীর বিনামূল্যে রিজেন্ট হাসপাতাল নমুনা পরীক্ষা করে এনেছে জানিয়ে সারোয়ার আলম সারাবাংলাকে বলেন, ‘তারা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে টাকার বিনিময়ে নমুনা পরীক্ষা করিয়েছে বলে আমরা প্রমাণ পেয়েছি। অথচ তাদের এ ধরনেরও কোনো অনুমতি দেওয়া হয়নি।’
তিনি বলেন, ‘রিজেন্ট হাসপাতালের সঙ্গে সরকারের সমঝোতা চুক্তিতে উল্লেখ ছিল এখানে ভর্তি হওয়া রোগীদের বিনামূল্যে চিকিৎসা দেওয়ার। এক্ষেত্রে সরকার এই ব্যয় বহন করবে কিন্তু তারা রোগী প্রতি লক্ষাধিক টাকা বিল আদায় করেছে। একদিকে তারা যেমন টাকা নিয়েছে অন্যদিকে সরকারের কাছে এক কোটি ৯৬ লাখ টাকার বেশি বিল জমা দিয়েছে। এই হাসপাতালে এখন পর্যন্ত প্রায় দুই শতের বেশি কোভিড আক্রান্ত রোগী চিকিৎসা নিয়েছে।’
ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার আলম বলেন, ‘আমরা আশা করছি এই ধরণের অপরাধের কারণে তাদের মারাত্মক শাস্তি হবে। আমরা চাই না এই কোভিড-১৯ নিয়ে কেউ কোনো প্রতারণার আশ্রয় নিক। এ অপরাধের সঙ্গে এই প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান মো. সাহেদ, ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মাসুদসহ বেশকিছু কর্মকর্তা জড়িত রয়েছেন। আমরা এখানে বিভিন্ন রকমের প্রতারণার জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে নিয়মিত ধারায় মামলা করাবো। তাদের প্রত্যেককে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে। কোভিড-১৯ পরিস্থিতি নিয়ে যাতে কেউ কোনো দুর্নীতি করতে না পারে সে বিষয়ে আমরা আরও অভিযান চালিয়ে যাবো।’
উল্লেখ্য, সোমবার বেলা ২ টা থেকে র্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার আলমের নেতৃত্বে একটি দল প্রথমে উত্তরার ১১ নম্বর সেক্টরের ১৭ নম্বর সড়কে অবস্থিত রিজেন্ট হাসপাতালে অভিযান চালায়। এর আগে র্যাবের আরেকটি দল রিজেন্ট হাসপাতালের মিরপুর শাখায় অভিযান পরিচালনা করে। অভিযানে আটজনকে আটক করা হয়।
উল্লেখ্য, ২১ মার্চ স্বাস্থ্য অধিদফতরে সরকারের সঙ্গে কোভিড-১৯ চিকিৎসা দেওয়ার বিষয়ে একটি সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষর করে রিজেন্ট হাসপাতাল। এরপর থেকে নানা রকম অভিযোগ আসছিল হাসপাতালটির বিরুদ্ধে।
সম্প্রতি ওভাল গ্রুপের জেকেজি হেলথকেয়ার নামের একটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধেও নমুনা পরীক্ষা নিয়ে প্রতারণার নানা রকম প্রমাণ পাওয়া যায়।
আরও পড়ুন:
পরীক্ষা ছাড়াই করোনার রিপোর্ট দিত রিজেন্ট হাসপাতাল
কোভিড চিকিৎসা নিয়ে প্রতারণা: রিজেন্ট হাসপাতালে র্যাবের হানা
মেয়াদোত্তীর্ণ লাইসেন্স নিয়েই রিজেন্ট হাসপাতালে করোনা চিকিৎসা!