‘প্রতারণা করে ৩ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে রিজেন্ট হাসপাতাল’
৭ জুলাই ২০২০ ১১:৩৯
ঢাকা: র্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার আলম বলেছেন, সরকার থেকে বিনামূল্যে কোভিড-১৯ টেস্ট করার অনুমতি নিয়ে রিপোর্ট প্রতি সাড়ে ৩ থেকে ৪ হাজার টাকা করে আদায় করত রিজেন্ট হাসপাতাল। এভাবে জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করে মোট ৩ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে হাসপাতালটি। এই সমস্ত অপরাধ ও টাকার নিয়ন্ত্রণ চেয়ারম্যান (রিজেন্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহেদ) নিজে করতেন।
সোমবার (৬ জুলাই) উত্তরার রিজেন্ট হাসপাতালের নানা অনিয়মের বিরুদ্ধে অভিযান শেষে ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন র্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার আলম।
সারোয়ার আলম বলেন, ‘করোনা উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালে আসা এবং বাড়িতে থাকা রোগীদের করোনার নমুনা সংগ্রহ করে ভুয়া রিপোর্ট দিতো রিজেন্ট হাসপাতাল। অনিয়ম, অপরাধ ও প্রতারণার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো চেয়ারম্যান নিজেই ডিল করেছেন, অন্যান্য কয়েকজন কর্মীও ছিল। চেয়ারম্যান পলাতক রয়েছেন। তার বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া হবে, জড়িত সবাইকে কঠিন শাস্তির মুখোমুখি করা হবে।’
অভিযানের বিষয়ে ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার আলম বলেন, ‘রিজেন্ট হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কয়েকটি অনিয়ম ও প্রতারণার প্রমাণ পেয়েছি আমরা। প্রথমত, করোনা টেস্টের জন্য আসা রোগীদের বিনামূল্যে নমুনা সংগ্রহ করার কথা ছিল রিজেন্টের। কিন্তু আমরা দেখলাম তারা প্রায় ১০ হাজার জনের কাছ থেকে নমুনা সংগ্রহ করেছে, প্রত্যেকের কাছ থেকে তারা টাকা নিয়েছে। দ্বিতীয়ত, এসব নমুনার অর্ধেকের বেশি পরীক্ষা না করেই রিপোর্ট দিয়েছে, যা সম্পূর্ণ প্রতারণা।’
তিনি আরও বলেন, ‘রিজেন্ট হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সরকারকে জানিয়েছে তারা কোভিড-রোগীদের ফ্রি চিকিৎসা দিচ্ছে। তারা সরকারের কাছে ক্ষতিপূরণও ক্লেইম করেছে। অথচ অনেক রোগীর কাছ থেকেও তারা দেড় লাখ-দুই লাখ, আড়াই লাখ টাকা পর্যন্ত বিল আদায় করেছে বলে আমরা প্রমাণ পেয়েছি।’
‘করোনায় ভুয়া রিপোর্টের ঘটনা বিশ্বে বাংলাদেশকে কলঙ্কিত করেছে’
তিনি আরও বলেন, ‘রিজেন্টকে কোভিড হাসপাতালের এই অনুমতি দেওয়ার আগে শর্ত ছিল এখানে যারা ভর্তি হবেন, তাদের নমুনা সংগ্রহ করে আইইডিসিআইআর, জনস্বাস্থ্য ইন্সটিটিউট থেকে ফ্রি অব কস্ট (বিনামূল্যে) পরীক্ষা করাবে। আর রিজেন্ট বাসায় বাসায় গিয়ে ১০ হাজারের বেশি নমুনা সংগ্রহ করেছে। এর মধ্যে ৪ হাজার ২৬৪ জনের নমুনা আইইডিসিআরসহ অন্যান্য দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান থেকে টেস্ট করিয়েছে। বাকি নমুনাগুলো টেস্ট না করে ভুয়া রিপোর্ট করেছে।’
রিজেন্ট হাসপাতালের অভিযানে নেতৃত্ব দেওয়া ম্যাজিস্ট্রের সারোয়ার আলম বলেন, ‘আমরা আইইডিসিআরে রিপোর্ট ক্রস চেক করে দেখেছি, রিজেন্ট এগুলো তাদের পাঠায়নি। ভুয়া রিপোর্টের জন্য সাড়ে তিন হাজার করে টাকা নিয়েছে। আমরা দেখলাম এখন পর্যন্ত রিজেন্ট হাসপাতাল ৩ কোটি টাকার মতো হাতিয়ে নিয়েছে।’
অভিযানে রিজেন্টের ৮ জন কর্মকর্তাকে আটক করা হয়েছে। তবে তাদের নাম-পরিচয় এখনও জানা যায়নি বলে জানানো হয় সংবাদ সম্মেলনে।
আরও পড়ুন:
পরীক্ষা ছাড়াই করোনার রিপোর্ট দিত রিজেন্ট হাসপাতাল
কোভিড চিকিৎসা নিয়ে প্রতারণা: রিজেন্ট হাসপাতালে র্যাবের হানা
মেয়াদোত্তীর্ণ লাইসেন্স নিয়েই রিজেন্ট হাসপাতালে করোনা চিকিৎসা!
কোভিড-১৯ টেস্ট নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট প্রতারণা রিজেন্ট হাসপাতাল