জেকেজির ভুয়া স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রশিক্ষণ দিতেন ডা. সাবরিনা
১৩ জুলাই ২০২০ ০২:১৫
ঢাকা: ১৫ হাজার ৪৬০ জনকে করোনার ভুয়া রিপোর্ট দেওয়ার অভিযোগে জেকেজির ‘চেয়ারম্যান’ ডা. সাবরিনা আরিফ চৌধুরী নামে পরিচিত ডা. সাবরিনা শারমিন হুসাইনকে জিজ্ঞাসাবাদের পর গ্রেফতার দেখিয়েছে তেজগাঁও থানা পুলিশ। আর এই সব ভুয়া রিপোর্টের কথা তিনি জানতেন বলে পুলিশের কাছে স্বীকার করেছেন। এমনকি এ নিয়ে আরিফ চৌধুরীর সঙ্গে নাকি চিৎকার-চেঁচামেচিও করেছেন তিনি। এছাড়া জেকেজির ভুয়া স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রশিক্ষণ দিতেন বলেও তিনি স্বীকার করেছেন।
রোববার (১২ জুলাই) রাজধানীর তেজগাঁও থানায় জিজ্ঞাসাবাদের সময় ডা. সাবরিনা পুলিশকে এসব তথ্য জানান। এদিকে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শামীমুর রশীদ তালুকদার জানান, আদালতের সময় শেষ হয়ে যাওয়ায় ভুয়া রিপোর্টের মামলায় ডা. সাবরিনাকে আজ রাতে থানা লকাপেই কাটাতে হবে। সোমবার (১৩ জুলাই) সকালে তাকে রিমান্ড চেয়ে আদালতে পাঠানো হবে।
এর আগে রোববার দুপুরে ডা. সাবরিনা আরিফকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তেজগাঁও বিভাগের উপ-কমিশনারের কার্যালয়ে ডেকে নেওয়া হয়। সেখানে প্রায় আড়াই থেকে তিন ঘণ্টা তাকে জেকেজির কেলেঙ্কারির বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাকে তেজগাঁও থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
আরও পড়ুন: ডা. সাবরিনা বরখাস্ত
জিজ্ঞাসাবাদের পর তেজগাঁও বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) হারুন অর রশীদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘জেকেজি গ্রুপের হিমু ও তার স্ত্রী তানজিনাকে গ্রেফতার করার পর তারা জানায়, বাড়িতে গিয়ে তারা স্যাম্পল কালেকশন করেন। তানজিনা নার্স হওয়ায় সে দিনের বেলায় স্যাম্পল কালেকশন করতো। কিন্তু সেই স্যাম্পল আর পরীক্ষাগারে পাঠানো হতো না। সেগুলো তানজিনা ফেলে দিত। আর হিমু একজন গ্রাফিক্স ডিজাইনার হওয়ায় সে সার্টিফিকেট বানিয়ে ওইসব স্যাম্পলের ভুয়া রিপোর্ট সরবরাহ করতো। এর জন্য তারা পাঁচ হাজার টাকা ফি নিত এবং বিদেশি হলে একশ ডলার। হিমু ও তানজিনাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে এগুলোর সঙ্গে জেকেজি গ্রুপ জড়িত বলে তারা তথ্য দেয়। তারপর জেকেজির সিইও আরিফুল হকসহ ছয়জনকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের কাছ থেকেই জেকেজির চেয়ারম্যান ডা. সাবরিনা সম্পর্কে তথ্য পাওয়া যায়।’
এক প্রশ্নের জবাবে ডিসি বলেন, ‘অনেক বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। আরও অনেক বিষয়ে জানার বাকি আছে। আদালতের কাছে চার দিনের রিমান্ডের আবেদন করা হবে। রিমান্ডে পেলে বিস্তারিত জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।’
জানতে চাইলে একই জোনের একজন (নাম প্রকাশ না করার শর্তে) অতিরিক্ত উপ-কমিশনার বলেন, ‘সাবরিনাকে যা কিছুই জিজ্ঞেস করা হয়েছে, তার সবকিছুই প্রথমে অস্বীকার করেছেন। প্রশ্ন-পাল্টাপ্রশ্ন করায় সাবরিনা এলোমেলো উত্তর দিয়েছেন। তিনি জেকেজির ভুয়া স্বাস্থ্য কর্মীদের প্রশিক্ষণ দিতেন, তা স্বীকার করেছেন। ভুয়া রিপোর্ট দেওয়া হচ্ছে, তাও তিনি জানতেন বলে এক পর্যায়ে স্বীকার করেছেন। ভুয়া রিপোর্ট নিয়ে আরিফ চৌধুরীর সঙ্গে বেশ কয়েকবার চিৎকার-চেঁচামেচিও করেছেন সাবরিনা। এরপরও তাদের সেই কার্যক্রম থামেনি- সেটাও বলেছেন তিনি।’
আরও পড়ুন: জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ডা. সাবরিনা গ্রেফতার
ডা. সাবরিনা জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশের কাছে দাবি করে, আরিফের সঙ্গে তিনি সংসার করছেন না। জেকেজির সিইও আরিফ চৌধুরী এ মুহূর্তে তার স্বামী নন। তারা বেশ কিছুদিন ধরে আলাদা থাকছেন। ডিভোর্স লেটার পাঠিয়েছেন তিনি। একমাস আগে লেটার পাঠালেও আরও দুই মাস লাগবে ডিভোর্স কার্যকর হতে। জীবনে কোনো অনৈতিক কাজ করা তো দূরের কথা, অবৈধ কাজকে তিনি কখনও প্রশ্রয়ও দেননি বলে দাবি করেন।
এদিকে পুলিশ জানিয়েছে, জেকেজি হেলথ কেয়ার থেকে ২৭ হাজার রোগীকে করোনা টেস্টের রিপোর্ট দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ১১ হাজার ৫৪০ জনের করোনার নমুনা আইইডিসিআরের মাধ্যমে সঠিক পরীক্ষা করানো হয়েছিল। বাকি ১৫ হাজার ৪৬০ জনের ভুয়া রিপোর্ট তৈরি করা হয়, যা জব্দ করা ল্যাপটপে পাওয়া গেছে।
আরও পড়ুন:
করোনা পরীক্ষা নিয়ে জেকেজি হেলথকেয়ারের প্রতারণার জাল
সরকারি খরচে বেসরকারি ‘প্রতারণা’ জেকেজি হেলথ কেয়ারের
সরকারি চাকরি করেও ছিলেন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান জেকেজি’র চেয়ারম্যান
গ্রেফতার চেয়ারম্যান জেকেজি ডা. সাবরিনা আরিফ চৌধুরী ভুয়া রিপোর্ট ভুয়া স্বাস্থ্যকর্মী লকাপ