পরিবেশ ও শিক্ষার ‘মানে’ এগিয়েছে বাঁশবাড়িয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়
২৪ জুলাই ২০২০ ১৬:২৮
মেহেরপুর: আজকাল বেশিরভাগ মা-বাবাই সন্তানের ভালো ফলাফলের আশায় বেসরকারি স্কুলের প্রতি আগ্রহী হন। সরকারি স্কুলে ‘লেখাপড়ার মান’ নিয়ে প্রশ্ন তোলেন অনেকেই। তবে এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম চিত্র দেখা গেছে মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার বাঁশবাড়িয়া গ্রামে। বাঁশবাড়িয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়টি এলাকার অভিভাবকসহ সংশ্লিষ্টদের নজর কেড়েছে। শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশ ঘটাতে বিদ্যালয়ের নানা উদ্যোগ বেশ প্রশংসিত হচ্ছে স্থানীয়দের কাছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, বিদ্যালয়ের সীমানা প্রাচীরে বিভিন্ন শিক্ষাবিদ ও মনীষীদের বাণী শোভা পাচ্ছে। যা শিক্ষার্থী ও জ্ঞান পিপাসু মানুষকে মুগ্ধ করবে। এখানে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের জন্য রয়েছে ডিজিটাল হাজিরা ব্যবস্থা। প্রাক- প্রাথমিক পর্যায়ের জন্য বরাদ্দ রুমটির দেয়ালে শোভা পাচ্ছে শিশুদের উপযোগী বিভিন্ন দেয়াল লিখন। বিদ্যালয়ে রয়েছে দেশের বীর সন্তান মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর জন্য মুক্তিযুদ্ধ কর্ণার । এখানে একটি দ্বিতল ও একটি একতলা ভবন রয়েছে । সামনে রয়েছে বিশাল একটি খেলার মাঠ। বাচ্চাদের জন্য দোলনাসহ বেশ কয়েকটি রাইড রয়েছে খেলার জন্য ।
প্রধান শিক্ষক মোছাঃ নুরুন নাহার জানান, ১৯৯৫ সালে তিনি প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগদান করার পর থেকেই চেষ্টা করে যাচ্ছেন বিদ্যালয়কে একটি ব্যতিক্রমী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তুলতে। আর এ কাজে সহকারী শিক্ষক মাজহারুল ইসলামসহ সকল শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও বিদ্যালয়ের বর্তমান সভাপতি সাবেক পৌর কাউন্সিলর মোঃ শামসুদ্দীন শেখ সহযোগিতা করেছেন।
বিদ্যালয়ে আলাদা আইসিটি রুম আছে যেখানে ল্যাপটপ ও প্রজেক্টরের মাধ্যমে শিক্ষকরা আইসিটি জ্ঞান প্রদান করেন । জেলা প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগের শিক্ষার্থীরা যাতে অনলাইন ক্লাসের ভিডিও নিতে পারেন সেজন্য একটি ইউটিউব চ্যানেলের কার্যক্রম চালু করেছেন যা ইতিমধ্যে উদ্বোধন করেছেন মাননীয় জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী অধ্যাপক ফরহাদ হোসেন দোদুল ।
সহকারী শিক্ষক মাজহারুল ইসলাম বলেন, ‘বিদ্যালয় যাতে শিশুদের উপযোগী ও আকর্ষণীয় হয় সেদিকে লক্ষ্য রেখে চেষ্টা করেছি কাজ করার। প্রতিনিয়ত শিক্ষার্থীর অভিভাবকদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে পড়াশোনার খোঁজ খবর নেয়া হয়।’
কুষ্টিয়া- মেহেরপুর মহাসড়কে বাঁশবাড়িয়া বাজার সংলগ্ন দুই দশমিক ১০ একর জমির ওপর এ বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৩৫ সালে। সাতটি শ্রেণিকক্ষ, একটি উপকরণ রুম ও একটি ডিজিটাল কম্পিউটার রুম আছে। সাত জন নারী ও একজন পুরুষ শিক্ষক রয়েছেন। শিক্ষার্থীদের জন্য আছে স্বাস্থ্যসম্মত টয়লেট। হাত ধোয়ার জন্য রয়েছে পর্যাপ্ত বেসিন ও ওযুর জন্য আলাদা ব্যবস্থা ।
কয়েকজন অভিভাবক জানান, আগে সকলেই মনে করতেন বেসরকারী বিদ্যালয়ে শিক্ষাদান ভালো। কিন্তু এটা ঠিক যে, বাঁশবাড়িয়াতে যেভাবে শিক্ষার মান উন্নয়ন করা হচ্ছে কোন শিক্ষার্থী বেসরকারী বিদ্যালয়ে যাবে না। এ পরিবেশকে টিকিয়ে রাখার জন্য শিক্ষকদের প্রতি অনুরোধ জানান তারা।
গাংনী উপজেলা শিক্ষা অফিসার মোঃ আলাউদ্দীন বলেন, ‘বাঁশবাড়িয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় সত্যিই অসাধারণ কাজ করেছে। স্কুলের দেয়ালে বিভিন্ন শিক্ষাবিদ ও মনীষীদের বাণী লেখা হয়েছে। বাচ্চারা যেন পড়ায় মনোযোগী হয় সেকারণে নানা আয়োজনও রয়েছে।’