Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

চিঠি চালাচালিতে আটকে আছে মেক্সিকোয় বন্দি ৩৯১ বাংলাদেশির মুক্তি


২৬ জুলাই ২০২০ ১৪:৫২

ঢাকা: দুই মন্ত্রণালয়ের চিঠি চালাচালিতে আটকে আছে মেক্সিকোর জেলে বন্দি থাকা ৩৯১ বাংলাদেশির ভাগ্য। ওইসব ভাগ্যাহত বাংলাদেশিদের নাগরিকত্ব যাচাই করতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র থেকে স্বরাষ্ট্র করেই কেটে গেছে ছয় মাস। এখন করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে সে প্রক্রিয়াও থেমে আছে বলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।

জানা যায়, উন্নত জীবন আর ভালো আয়ের আশায় চরম ঝুঁকি নিয়ে দালালের হাত ধরে কয়েক হাজার বাংলাদেশি পাড়ি জমিয়েছেন মেক্সিকো। উদ্দেশ্য মেক্সিকোর পথ ব্যবহার করে যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়া। এই পথে আমেরিকা যাওয়ার সময় তারা মেক্সিকোর জেলে বন্দি হয়ে রয়েছে বলে জানা গেছে। তারা এখন দেশটির বিভিন্ন কারাগারে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছে। বছরের পর বছর কারাগারে থাকা এসব বাংলাদেশি নাগরিকদের ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেই। অনেকে ফিরতে চেয়েও পারছেন না। আটকে থাকাদের মধ্যে প্রায় চারশ জন যে বাংলাদেশের নাগরিক, সে প্রমাণও মেক্সিকো সরকারকে দেখাতে পারেনি।

বিজ্ঞাপন

সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, মেক্সিকোর কারাগারে বন্দি এমন ৩৯১ জন বাংলাদেশিকে নিজ দেশে ফেরত পাঠাতে ২০১৭ সালের জুন মাসে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে চিঠি পাঠায় ওই দেশের সরকার। এর দীর্ঘদিন পর তাদের নাগরিকত্ব যাচাই করতে গত বছরের মাঝামাঝি সময়ে মেক্সিকো থেকে চিঠি আসে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। এরপর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। ওই চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে একজন প্রতিনিধি চেয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ফিরতি চিঠি পাঠায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। তার কিছুদিন পরে সেই চিঠি প্রত্যাহার করার কথা উল্লেখ করে আরেকটি চিঠি পররাষ্ট্রে পাঠায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। ওই চিঠিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে যে প্রতিনিধি পাঠাতে বলা হয়েছিল, তা বাতিল করার জন্য বলা হয়।

বিজ্ঞাপন

এ প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলেছেন, ওই সমস্যা সমাধানে মেক্সিকো একটি প্রতিনিধি দল পাঠাতে চান তারা এবং সেখানে একটি পাসপোর্ট ও ভিসা উইং স্থাপনের পরিকল্পনা করা হয়েছে। ওই প্রতিনিধি দলই আটকে থাকা নাগরিকদের নাগরিকত্ব যাচাই করবে। সে কারণেই পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে আলাদা করে প্রতিনিধি না নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। আর এই চিঠি আদান প্রদান চলে গত বছরের মাঝামাঝি সময় থেকে।

এ বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মেক্সিকো প্রতিনিধি দল পাঠাতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দেরি করায় বিষয়টি ঝুলে যায়। আরও জানা যায়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নিজস্ব দল গঠনের জন্য একটি নোট অনুমোদন করে। সেখানে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি, পুলিশের বিশেষ শাখার প্রতিনিধিসহ গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর সদস্যদের রাখার সিদ্ধান্ত হয়। তবে সে দলটিরও মেক্সিকো যাত্রা থেমে যায়। এরপরে একবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে প্রতিনিধি চেয়ে পরে তা বাতিল করে আবারও প্রতিনিধি চেয়ে জরুরি চিঠি পাঠায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এমনি চিঠি আদান প্রদান চলতে থাকে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত।

এ প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক কর্মকর্তা জানান, বিষয়টি নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কারও কারও মতের অমিল থাকায় চূড়ান্ত হচ্ছে না। এর মধ্যে শুরু হলো করোনাভাইরাসের সংক্রমণ। যে কারণে এখন বিষয়টি নিয়ে আপাতত কাজ হচ্ছে না।

এ প্রসঙ্গে পররাষ্ট্র মন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন সারাবাংলাকে বলেন, ‘যারা আটকে আছেন তারা তো অবৈধ উপায়ে গিয়ে বন্দি হয়েছেন। এখন যে জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে তা সমাধান করতে কিছুটা সময় তো লাগবেই। তবে আমরা কাজ করছি।’

জানা যায়, যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার উদ্দেশ্যে মানবপাচারের রুট ব্যবহার করে। যেমন বাংলাদেশ থেকে আকাশ পথে দুবাই, ইস্তাম্বুল বা তেহরান যান বাংলাদেশিরা। সেখান থেকে বলিভিয়া বা স্পেন, গায়ানা, ব্রাজিলের দুর্গম পথ হয়ে যুক্তরাষ্ট্র যাওয়ার চেষ্টা করে। কখনো কখনো এর থেকেও বেশি ১০ থেকে ১২টি দেশ ঘুরে যুক্তরাষ্ট্রে ঢোকার জন্য পার্শ্ববর্তী দেশ মেক্সিকোতে প্রবেশ করে। আবার কলম্বিয়া, পানামা, কোস্টারিকা, নিকারাগুয়া এল সালভাদর, গুয়াতেমালা মেক্সিকো পৌঁছায়। পরবর্তীতে মেক্সিকো থেকে সুযোগ বুঝে সীমানা অতিক্রম করে আমেরিকা পৌঁছানোর চেষ্টা করেন তারা। আর তাদের এই দীর্ঘ জার্নির সঙ্গী থাকেন মানবপাচারের সঙ্গে যুক্ত সিন্ডিটেকের সদস্যরা। আর এ কাজের জন্য নেয় মোটা অংকের টাকা জনপ্রতি ২০ থেকে ৩০ হাজার মার্কিন ডলার।

এ প্রসঙ্গে রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্ট রিসার্চ ইউনিট- রামরু’র নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক ড. সি আর আবরার বলেন, ‘মানবপাচার থেমে নেই। ইউরোপ যাওয়ার জন্য লিবিয়া আর আমেরিকা যেতে মেক্সিকো রুট ব্যবহার করে। পাচারকারীরা সব সময় দুর্গম পথ বেছে নেয়। এ সব দুর্গম পথ পাড়ি দিতে গিয়ে অনেকে মৃত্যুবরণ করে। কেউ কেউ অসুস্থ হয়ে পড়েন। মানব পাচার বন্ধ করতে হলে আইনের কঠোর প্রয়োগ করতে হবে।’

জানা গেছে, মেক্সিকো সীমান্ত এলাকায় মার্কিন সীমান্তরক্ষী বাহিনী ১৯৯০ সাল থেকে এ পর্যন্ত সাত হাজারের মতো মরদেহ উদ্ধার করেছে। তবে এদের মধ্যে বাংলাদেশি ছিল কিনা  থাকলে কতজন তার সুর্নিদিষ্ট তথ্য পাওয়া যায়নি।

এ দিকে লিবিয়াসহ বেশ কয়েকটি দেশের কারাগারেও বহু বাংলাদেশি বন্দি রয়েছে। ইউরোপ, এশিয়াসহ বিভিন্ন উন্নত দেশে চাকরি দেওয়ার নাম করে দালালচক্র মানবপাচার রুটে নিয়ে যায়। কিন্তু পাচার হওয়া সেসব বাংলাদেশিদের ভাগ্য খারাপ তাই ইউরোপের বদলে তাদের ঠাঁই হয়েছে কারাগারে। মানবপাচার নিয়ে কাজ করা সংগঠনগুলো বলছে, এ সংক্রান্ত আইনের যথাযথ প্রয়োগ না হওয়ায় মানবপাচার রোধ করা যাচ্ছে না।

কারাগার প্রবাসী বাংলাদেশি বাংলাদেশি মেক্সিকো মেক্সিকোর কারাগার

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর