২ মাস পর খালেদার ঠিকানা কোথায়— কারাগার, ফিরোজা না লন্ডন?
২৬ জুলাই ২০২০ ২৩:৫২
ঢাকা: বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসের উদ্ভূত পরিস্থিতির মধ্যে ছয় মাসের জন্য শর্ত সাপেক্ষে মুক্তি পেয়েছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসন সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। এরই মধ্যে পেরিয়ে গেছে চার মাস। প্রশ্ন উঠছে— বাকি দুই মাস পর তিনি কোথায় থাকবেন? কারাগারে ফিরবেন? নাকি বর্তমানে যেখানে আছেন, সেই গুলশানের ভাড়া বাসা ‘ফিরোজা’তেই থাকবেন খালেদা জিয়া? নাকি সরকারের ‘আনুকূল্যে’ লন্ডনে ছেলের কাছে যাওয়ার সুযোগ পাবেন তিনি?
দলীয় সূত্রমতে, যেহেতু ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারার উপধারা-১ অনুযায়ী খালেদা জিয়ার সাজা ছয় মাসের জন্য স্থগিত রেখে তাকে ঢাকার নিজ বাসায় থেকে চিকিৎসা গ্রহণ এবং এই সময়ের মধ্যে দেশের বাইরে না যাওয়ার শর্তে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, শর্ত ভাঙলেই মুক্তির আদেশ বাতিল হয়ে যাবে। এদিকে, আইনমন্ত্রী গণমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন, সরকার অনুমতি দিলে খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়েও চিকিৎসা দেওয়া যাবে। খালেদা জিয়ার পরিবার ও বিএনপি নেতাদের বিশ্বাস, সেই অনুমতি তারা পাবেন। ফলে সাময়িক মুক্তির মেয়াদের ছয় মাস শেষে কারাগার ফিরোজা বা লন্ডন— যেকোনো স্থানেই খালেদা জিয়ার থাকার সমান সম্ভবনা রয়েছে।
আরও পড়ুন- বিএনপি নয়, সরকারের সঙ্গে ‘খালেদা ইস্যু’ ডিল করছে পরিবার!
কিন্তু খালেদা জিয়ার পরিবার ও দল কোনো অবস্থাতেই তাকে আর কারাগারে যেতে দিতে চায় না। ‘ফিরোজা’য় থেকে পাশের হাসপাতাল ইউনাইটেডে চিকিৎসা গ্রহণ অথবা লন্ডনে ছেলের বাসায় থেকে যুক্তরাজ্যের ভালো কোনো হাসপাতালে চিকিৎসা গ্রহণের ব্যবস্থা পাকা করতে সরকারের উচ্চ মহলের সঙ্গে কথাবার্তা শুরু করেছেন সংশ্লিষ্টরা। এই কথাবার্তা ও বোঝাপড়ার ওপরই খালেদা জিয়ার ভাগ্য নির্ধারণ হবে।
সূত্রমতে, বিএনপির সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের বিশ্বাস, বিশেষ কোনো পরিস্থিতি তৈরি না হলে খালেদা জিয়াকে আর কারাগারে নেবেন না প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কিন্তু মুক্তির সময় যে দু’টি শর্ত দেওয়া হয়েছে, সেগুলো বহাল থাকলে পছন্দের হাসপাতালে চিকিৎসা অথবা চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে যাওয়া খালেদা জিয়ার পক্ষে সম্ভব হবে না। সে কারণে ওই দুই শর্ত শিথিল এবং ‘সাময়িক’ মুক্তিকে স্থায়ী মুক্তিতে রূপান্তরিত করতে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন খালেদা জিয়ার ভাই শামীম এস্কান্দার ও বোন সেলিমা ইসলাম।
আরও পড়ুন- ‘সাময়িক মুক্তির’ ৯০ দিন, শর্তের ব্যাপারে সচেতন খালেদা!
জানা গেছে, করোনা সংকট মোটামুটি উন্নতির দিকে গেলে প্রাথমিক অবস্থায় ইউনাইটেড হাসপাতালেই চিকিৎসা নিতে চান খালেদা জিয়া। এতে করে ‘বাসায় থেকে চিকিৎসা গ্রহণের শর্ত’ কিছুটা ভঙ্গ হলেও এ ব্যাপারে সরকারের পক্ষ থেকে খুব একটা আপত্তি আসবে না বলেই ধারণা বিএনপি নেতাদের। পরিবারের সদস্যরাও তাই মনে করেন। কিন্তু ইউনাইটেড হাসপাতালে কোভিড-১৯ রোগীর চিকিৎসা এবং সম্প্রতি অগ্নি দুর্ঘটনার কারণ সেখানে যাওয়াটা নিরাপদ বোধ করছেন না সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া।
সম্প্রতি খালেদা জিয়ার বোন সেলিমা ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমরা তো তাকে ইউনাইটেড হাসপাতালে ট্রিটমেন্টের জন্য নিতে চাই। কিন্তু করোনার কারণে সেখানে নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। করোনা সংকট কেটে গেলে বিষয়টি বিবেচনা করা হবে।’
সম্প্রতি খালেদা জিয়ার চিকিৎসক বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, ‘উনার যে অবস্থা, তাতে ভালো কোনো হাসপাতালে নিজের পছন্দের চিকিৎসককে দিয়ে ট্রিটমেন্ট করানো খুবই দরকার। মুক্তিতে শর্ত যাই থাকুক, বাসার পাশের হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে গেলে সরকার বাধা দেবে— এমনটি মনে হয় না। কিন্তু করোনার কারণে আমরা তো তাকে কোথাও নিতে পারছি না। এই মুহূর্তে বাসা-ই তার জন্য নিরাদপদ স্থান।’
কিন্তু আগামী দুই মাসের মধ্যে যদি করোনা পরিস্থিতির উন্নতি না হয়, তাহলে খালেদা জিয়া ইউনাইটেড হাসাপাতালে চিকিৎসা নিতে পারবেন না। আবার সরকারের তরফ থেকে তার মুক্তির মেয়াদ না বাড়ালে ‘ফিরোজা’তেও থাকতে পারবেন না। তাকে ফিরতে হবে কারাগারে।
দলীয় সূত্রমতে, এমন জটিল সমীকরণের মধ্যে পরিবারের পক্ষ থেকে চেষ্টা করা হচ্ছে, যেকোনো মূল্যে খালেদা জিয়ার মুক্তির মেয়াদ বাড়াতে হবে এবং করোনা পরিস্থিতি উন্নতি হলে যত দ্রুতসম্ভব খালেদা জিয়াকে লন্ডন পাঠাতে হবে। সেখানে বড় ছেলের স্ত্রী ডা. জুবাইদা রহমানের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসা গ্রহণ এবং নাতনীদের সঙ্গে সময় কাটালে খালেদা জিয়া দ্রুত আরোগ্য লাভ করবেন বলে বিশ্বাস তাদের।
তাই পরীবারের পক্ষ থেকে আপ্রাণ চেষ্টা চালানো হচ্ছে, আগামী দুই মাসের মধ্যেই অর্থাৎ সাময়িক মুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই খালেদা জিয়ার ‘স্থায়ী মুক্তি’র ব্যবস্থা করা এবং সরকারকে রাজি করিয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে দেশের বাইরে পাঠানো।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে সারাবাংলাকে বলেন, ‘পরিবারের পক্ষ থেকে সরকারের সঙ্গে আলোচনা করা হচ্ছে। তারা চেষ্টা করছে উন্নত চিকিৎসার জন্য বেগম খালেদা জিয়াকে দেশের বাইরে নেওয়ার। সরকার অনুমতি দিলে হয়তো ম্যাডামকে লন্ডন নিয়ে যাওয়া হবে।’
এর আগে অবশ্য আইনমন্ত্রী মিডিয়াকে বলেন, ‘চিকিৎসার জন্য বিদেশ যাইতে চাইলে খালেদা জিয়াকে অবশ্যই সরকারের অনুমতি নিতে হবে। সরকার অনুমতি দিলে তিনি বিদেশে যেতে পারবেন।’
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সব দিক বিবেচনায় আগামী দুই মাস পর কারাগার, লন্ডন, ‘ফিরোজা’— সব ক’টিতে থাকার সমান সম্ভবনা রয়েছে বেগম খালেদা জিয়ার। তবে সবকিছু নির্ভর করছে প্রধানমন্ত্রীর ওপর। তিনি যেখানে রাখতে চান, সেখানেই থাকতে হবে সাবেক প্রধানন্ত্রীকে। কিন্তু খালেদা জিয়ার দল বিএনপি ও তার পরিবার চায়, ৭৫ বছর বয়সী খালেদা জিয়া যেন লন্ডনেই থাকতে পারেন। তা না হলেও যেন অন্তত ‘ফিরোজা’য় তার অবস্থান নিশ্চিত হয়। তাকে কোনো অবস্থাতেই আর কারাগারে ফিরে যেতে দিতে চান না তারা।
গত ২৪ মার্চ নির্বাহী আদেশে সাজা স্থগিত করে দুই শর্তে খালেদা জিয়াকে ছয় মাসের জন্য মুক্তি দেওয়ার সিদ্ধান্ত জানায় সরকার। বাকি প্রক্রিয়া শেষ করে ২৫ মার্চ বিকেল সোয়া ৪টায় বিএসএমএমইউ হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হয় খালেদা জিয়াকে। গত বছরের এপ্রিল থেকে কারাবন্দি খালেদা জিয়া এই হাসপাতালেই চিকিৎসাধীন ছিলেন। পরে ছোট ভাই শামীম ইস্কান্দারের জিম্মায় তিনি গুলশানের বাসা ‘ফিরোজা’য় পৌঁছান। এরপর থেকে সেখানেই অবস্থান করছেন তিনি।
কারাগার খালেদা জিয়া ফিরোজা বিএনপি চেয়ারপারসন লন্ডন সাময়িক মুক্তি স্থায়ী মুক্তি