বিজ্ঞাপন

বিএনপি নয়, সরকারের সঙ্গে ‘খালেদা ইস্যু’ ডিল করছে পরিবার!

July 19, 2020 | 9:25 pm

আসাদ জামান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: খালেদার জিয়ার মুক্তির মেয়াদ বাড়ানো বা স্থায়ীভাবে সাজা মওকুফ, চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে পাঠানো, সর্বোপরি তার স্বাভাবিক জীবন নিশ্চিতের ব্যাপারে সরকারের সঙ্গে সমঝোতা বা দেনদরবার— কোনো কিছুই বিএনপি করছে না। এ ব্যাপারে সরকারের সঙ্গে সবধরনের যোগাযোগ, দেনদরবার, সমঝোতা, আলাপ-আলোচনা খালেদা জিয়ার পরিবারের পক্ষ থেকে করা হচ্ছে।

বিজ্ঞাপন

বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের বেশ কয়েকজন নেতার সঙ্গে আলাপ করে এসব তথ্য জানা গেছে। তারা বলছেন, খালেদা জিয়ার বিষয়টি তার পরিবারই দেখছে। তাছাড়া সরকারও চায় না খালেদা জিয়ার ব্যাপারে বিএনপির সঙ্গে বসতে। বরং পরিবারের জিম্মায় ছেড়ে দেওয়া খালেদা জিয়ার বিষয়টি পরিবারের সঙ্গেই ফয়সালা করতে চায় সরকার। সম্প্রতি বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও সারাবাংলাকে বলেন, ‘দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বিষয়টি তার পরিবারই দেখছে।’

করোনা মহামারির উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সরকারের নির্বাহী আদেশে শর্ত সাপেক্ষে গত ২৫ মার্চ ছয় মাসের জন্য ‘সাময়িক মুক্তি’ পান বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। মুক্তির পর থেকে গুলশানের ভাড়া বাসা ‘ফিরোজা’য় আছেন সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী। এরই মধ্যে কেটে গেছে প্রায় চার মাস।

মুক্তির আগের দিন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক জানিয়েছিলেন— ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারার উপধারা-১-এ বেগম খালেদা জিয়ার সাজা ছয় মাসের জন্য স্থগিত রেখে তাকে ঢাকার নিজ বাসায় থেকে চিকিৎসা গ্রহণ এবং এই সময়ের মধ্যে দেশের বাইরে না যাওয়ার শর্তে মুক্তি দেওয়া হচ্ছে। মুক্তির দিন রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেছিলেন— যেসব শর্তে খালেদা জিয়াকে ছয় মাসের জন্য সাময়িক মুক্তি দেওয়া হয়েছে, সেগুলো ভাঙলেই তার মুক্তির আদেশ বাতিল হয়ে যাবে।

বিজ্ঞাপন

সুতরাং নিজ বাসায় থেকে চিকিৎসা গ্রহণ এবং বিদেশে না যাওয়ার শর্ত পুরোপুরি মেনেই ‘সাময়িক মুক্তির’ সময় পার করছেন বেগম খালেদা জিয়া। আগামী ২৫ সেপ্টেম্বর তার সাময়িক মুক্তির মেয়াদ শেষ হবে। অর্থাৎ আগামী দুই মাস পর সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর ভাগ্য পুনঃনির্ধারণ হবে। তিনি বাসায় থাকবেন, না কারাগারে থাকবেন, নাকি উন্নত চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে যাবেন— সেটি চূড়ান্ত করতে হবে এই সময়ের মধ্যেই।

সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, খালেদা জিয়ার ভাগ্য নির্ধারণের বিষয়টি নিয়ে দলীয় ফোরামে আনুষ্ঠানিক কোনো আলোচনা নেই। দলীয় নেতারা বলছেন, আর আলোচনা করে কোনো লাভও নেই। কারণ, টানা সাড়ে ২৫ মাস কারাভোগের সময় বিএনপির পক্ষ থেকে বিরামহীন আইনি লড়াই, রাজপথে ‘শান্তিপূর্ণ’ কর্মসূচি, আন্তর্জাতিক পরিসরে খালেদার মুক্তির বিষয়টি তুলে ধরা, কূটনীতিকদের মাধ্যমে সরকারকে বোঝানোর চেষ্টা, দলকে সংগঠিত করে রাজপথে আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করা, সর্বোপরি বিভিন্নভাবে সরকারের সঙ্গে সমঝোতার চেষ্টা— কোনো কিছুতেই কাজ হয়নি।

অবশেষে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার ক্রমাবনতির দিকে গেলে বোন সেলিমা ইসলাম ও ছোট ভাই শামীম ইস্কান্দার সরকারের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা শুরু করেন। তাদের লিখিত আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সরকারের নির্বাহী আদেশে মুক্তি পান খালেদা জিয়া।

বিজ্ঞাপন

সূত্র মতে, এই মুক্তির মেয়াদ বাড়ানো, চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে নেওয়া সর্বোপরি ৭৫ বছর বয়সী খালেদা জিয়াকে যেন আর কারাগারে যেতে না হয়, সেজন্য সরকারের সঙ্গে দেন-দরবারের কাজটি অব্যাহত রেখেছে তার পরিবার। কোনো অবস্থাতেই খালেদা জিয়াকে আর কারাগারে যেতে দিতে চান না তারা। যেকোনো মূল্যে খালেদা জিয়াকে কারাগারের বাইরে রাখতে চান তার স্বজনেরা।

এ প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে সারাবাংলাকে বলেন, ‘সত্যি বলতে কী, বেগম খালেদা জিয়ার পুরো বিষয়টি ডিল করছে তার পরিবার। বিএনপি এ বিষয়টি এখন আর ডিল করছে না। দলীয়ভাবে তো অনেক চেষ্টা করেও আমরা কিছু করতে পারিনি। অবশেষে পরিবারের মধ্যস্থতায় সরকারের নির্বাহী আদেশে তিনি মুক্তি পেয়েছেন। এই মুক্তির মেয়াদ বাড়ানো, চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে নেওয়া— সব ব্যাপারেই সরকারের সঙ্গে এখন কথা বলছে তার পরিবার।’

সারাবাংলা/এজেড/পিটিএম

Tags: , , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন