Saturday 07 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

চসিকের ঘাড়ে ৮০০ কোটি টাকার দেনা, কমেছে বাজেটও


৪ আগস্ট ২০২০ ১৮:৫৩

চট্টগ্রাম ব্যুরো: পাঁচ বছর দায়িত্ব পালনকালে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনকে দেনার দায় থেকে বের করতে পারেননি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন। বরং প্রায় ৮০০ কোটি টাকা দেনার দায় চসিকের ঘাড়ে চাপিয়ে মেয়াদ শেষে বিদায় নিচ্ছেন তিনি। সাধারণ তহবিল, কর্মকর্তা-কর্মচারিদের ভবিষ্যত তহবিল, অবসরে যাওয়াদের আনুতোষিক ও ঠিকাদারদের বিলসহ সব খাতেরই বেহাল অবস্থা।

এজন্য অবশ্য মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন দায়ী করেছেন পৌরকর পুনর্মূল্যায়নে বাধা পাওয়ায় চসিকের আয় বাড়াতে না পারাকে। ২০১৫ সালে মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর তিনি গৃহকর পুর্নমূল্যায়নের মাধ্যমে আয় বাড়ানোর একটি উদ্যোগ নিয়েছিলেন। কিন্তু সাবেক মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী এই প্রক্রিয়ার বিরুদ্ধে রাজপথে জোরালো আন্দোলন গড়ে তোলেন। ফলে সেই উদ্যোগ ভেস্তে যায়।

তবে চসিকের কর্মকর্তাদের মতে, রাজস্ব কম আদায় হওয়া, সক্ষমতা যাচাই না করে বিভিন্ন প্রকল্প নেওয়া, আয়ের চেয়ে ব্যয় বেশি হওয়া এবং প্রশাসনিক দক্ষতার অভাবে এই বিপুল পরিমাণ দেনার দায় তৈরি হয়েছে।

২০১৫ সালের ২৮ এপ্রিল অনুষ্ঠিত চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপির সাবেক মেয়র এম মনজুর আলমকে হারিয়ে নির্বাচিত হয়েছিলেন নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন। ৫ আগস্ট মেয়রের নেতৃত্বাধীন নির্বাচিত পরিষদের দায়িত্ব গ্রহণের পাঁচবছর মেয়াদ পূর্ণ হচ্ছে। এর মধ্যে চসিকের প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন নগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি খোরশেদ আলম সুজন।

মেয়র নাছিরের মেয়াদের শেষ বাজেট ঘোষণা করা হয়েছে মঙ্গলবার (৪ আগস্ট)। ২০২০-২১ অর্থবছরের ঘোষিত বাজেটে ১০টি খাতে ৭৯০ কোটি ৬০ লাখ টাকার বকেয়া দেনার হিসাব দিয়েছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন।

সবচেয়ে বেশি বকেয়া আছে ঠিকাদারদের বিল বাবদ, ৩৯০ কোটি টাকা। থোক বরাদ্দ বকেয়া আছে ১২৫ কোটি টাকা। সাধারণ তহবিলে দেনা আছে ১৬৮ কোটি টাকা। কর্মকর্তা-কর্মচারিদের ভবিষ্য তহবিলে টাকা জমা দিতে না পারায় দেনার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩৫ কোটি টাকা। আর যেসব কর্মকর্তা-কর্মচারি এরই মধ্যে অবসরে গেছেন, তাদের আনুতোষিকও ঠিকমতো পরিশোধ করতে পারেনি চসিক। এ খাতে বকেয়ার পরিমাণ ৪৫ কোটি টাকা।

বিদ্যুৎ বিল বকেয়া আছে ২৫ কোটি টাকা। দুই দশক আগে নেওয়া দুটি প্রকল্পে চসিককে দেওয়া সরকারের ঋণ বাবদ বকেয়া আছে ২০ লাখ টাকা। বাংলাদেশ মিউনিসিপ্যাল ডেভেলপমেন্ট তহবিলে ৩০ লাখ এবং ঠিকাদারদের স্থায়ী জামানত তহবিল থেকে চসিকের খরচ বাবদ দেনা জমেছে ২০ লাখ টাকা। এছাড়া বিবিধ দেনার পরিমাণ ২ কোটি টাকা।

জানতে চাইলে চসিকের প্রধান হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা মো. সাইফুদ্দিন সারাবাংলাকে বলেন, ‘অনুমোদিত বকেয়া দেনার শতভাগ পরিমাণ হচ্ছে ৭৯০ কোটি ৬০ লাখ টাকা। তবে এখনও হিসাব পাওয়া যায়নি এমন দেনাও আছে। সব মিলিয়ে ৮০০ কোটি টাকার মতো হতে পারে। তবে পুরো দেনাই যে গত পাঁচবছরে জমেছে তা নয়। আগের আমলের দেনাও রয়েছে।’

বাজেট বক্তব্যে মেয়র নাছির জানিয়েছেন, সাবেক মেয়র এম মনজুর আলমের কাছ থেকে তিনি যখন দায়িত্ব নিচ্ছিলেন, তখন দায়-দেনার পরিমাণ ছিল ২৯৫ কোটি ২৬ লাখ ৯৩ হাজার ১৭৪ টাকা। সে হিসেবে, মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের আমলে আরও প্রায় ৫০০ কোটি টাকা দেনা জমেছে।

আরও পড়ুন

আমলা নয়, চসিকের দায়িত্ব থাকছে রাজনৈতিক ব্যক্তির হাতেই!

জানা গেছে, ১৯৯৪ সালে প্রথম নির্বাচিত মেয়র হিসেবে এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী দায়িত্ব নেওয়ার সময় সিটি করপোরেশনের দেনা ছিল ২৫ কোটি টাকা। তিনি ২০১০ সালে ১৫০ কোটি টাকার দেনা রেখে দায়িত্ব হস্তান্তর করেছিলেন এম মনজুর আলমের কাছে।

বাজেট বক্তব্যে মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেন, ‘সিটি করপোরেশনের আয় বাড়াতে আইনের সুযোগকে কাজে লাগিয়ে পৌরকর পুর্নমূল্যায়ন করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু দুর্ভাগ্য, এটা করতে গিয়ে বাধাগ্রস্ত হয়েছি। আমার প্রয়াসটা ব্যর্থ হয়েছে। তাতে শেষ পর্যন্ত চট্টগ্রামই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যদি সে চেষ্টায় সফল হতাম, তাহলে বর্তমানে যে রাজস্ব আদায় হচ্ছে, তা এতদিনে দ্বিগুণ বা তিনগুণ হয়ে যেত। প্রত্যাশিত উন্নয়ন কর্মকাণ্ডও করা সহজ হত।’

আর্থিক সক্ষমতার ঘাটতির কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর কর্মকর্তা-কর্মচারিদের প্রায় ২০ শতাংশ বৈশাখি ভাতা এবং নতুন পে-স্কেল ঘোষণা করা হয়। কার্যকর করতে গিয়ে প্রশাসনের ব্যয় প্রায় দ্বিগুণ বেড়ে যায়। এটা আমার ওপর চাপ তৈরি করেছে।’

২০২০-২১ অর্থবছরে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন ২ হাজার ৪৩৬ কোটি ৩০ লাখ ৪২ হাজার টাকার বাজেট পাস হয়েছে। বাজেটে আয়-ব্যয়ের খাত আগের অর্থবছরের মতোই। ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে চসিক ২ হাজার ৪৮৫ কোটি ৯১ লাখ ৭৮ হাজার টাকা বাজেট ঘোষণা করা হয়েছিল। কিন্তু বাস্তবায়ন হয়েছে মাত্র ৫৮ শতাংশ। গত অর্থবছরের চেয়ে এবার বাজেটের পরিমাণ সামান্য কমেছে।

বাজেট ঘোষণা শেষে বিদায়ী মতবিনিময় সভায় মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেন, ‘আগামীকাল (বুধবার) এই পরিষদের মেয়াদ শেষ হবে। দায়িত্ব পাওয়ার পর কাউন্সিলরদের সঙ্গে নিয়ে সামর্থ্যের শতভাগ উজাড় করে দিয়ে নগরবাসীর সেবা করার চেষ্টা করেছি। আইনের মধ্যে থেকে সততা, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার মাধ্যমে দায়িত্ব পালন করার চেষ্টা করেছি। অগোচরে কোনো ভুলত্রুটি থাকলে, কোনো ব্যর্থতা থাকলে সেটার দায় আমি নিজের কাঁধে নিলাম। সফলতার সবটুকু নগরবাসীকে দিলাম।’

চসিকের প্রশাসক পদে খোরশেদ আলম সুজনের দায়িত্ব পাওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘তিনি (সুজন) আমার দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক সহকর্মী। উনার মূল্যায়ন হয়েছে। আমি খুবই খুশি। উনাকে আমি শতভাগ সহযোগিতা করব।’

৮০০ কোটি টাকা চসিক টপ নিউজ দেনা বিদায় মেয়র নাছির


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর