বাংলাদেশে ফেসবুকের বিদেশি এজেন্ট নিয়োগ চুপিসারে!
৬ আগস্ট ২০২০ ২১:০১
ঢাকা: সরাসরি নয়, প্রতিনিধির মাধ্যমে বাংলাদেশে ব্যবসা কার্যক্রম চালাতে চায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক। আর এ জন্য অনেকটা চুপিসারে একটি বিজ্ঞাপনী সংস্থাকে নিয়োগ দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি; যারা বিদেশে বসে বাংলাদেশি বিজ্ঞাপন নিমার্ণ করবে এবং প্রচার করবে। কিন্তু বাংলাদেশে ফেসবুকের অফিস না থাকায় এখানকার টাকা বিদেশে পাচার হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ইতোমধ্যে সেটা হচ্ছেও। তাই বাংলাদেশকে নিজেদের প্রাপ্যটা বুঝে নিতে এখনই পদক্ষেপ নিতে হবে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
সম্প্রতি বেসরকারি এক টেলিভিশন চ্যানেলের একটি আলোচনা অনুষ্ঠানে বক্তারা এসব কথা বলেন। ওই অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে ছিলেন- পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান এবং গ্রে অ্যাডভার্টাইজিং লিমিটেডের ম্যানেজিং পার্টনার ও কান্ট্রি হেড গাউসুল আজম শাওন।
আরও পড়ুন- ‘বাংলাদেশে অফিস খোলার প্রতিশ্রুতি দিয়েও রাখেনি ফেসবুক’
বাংলাদেশে বর্তমানে সাড়ে ৩ কোটি ফেসবুক ব্যবহারকারী রয়েছে। ২১ সালে যা ১০ কোটিতে পৌঁছাবে। অনলাইনে বিজ্ঞাপনী বাজার প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা, যার মধ্যে অর্ধেক ব্যবসা করে ফেসবুক। কিন্তু বাংলাদেশে ফেসবুকের অফিস নেই। এমনকি কোনো ধরনের নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা করছে না তারা— এ বিষয়ে জানতে চাইলে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, ‘ফেসবুক, গুগল এবং আমাজন দেশে ব্যবসা করছে। যুক্তরাষ্ট্র কিছুদিন আগে এদের ডেকে অনেক প্রশ্ন করেছে এবং কীভাবে কাজ করতে হবে বলেছে। অনেক দেশ এসব টেকনোলজির সামনে দাঁড়াতে পারে না। এমনকি এগুলো থেকে এনবিআর কোনো রাজস্ব পায় কি না সে সম্পর্কে আমার ধারণা নেই। অনেকে বিদেশে বসে টাকা নিয়ে যাচ্ছে।’
আইন থাকলেও কেন কিছু করা যাচ্ছে না? জানতে চাইলে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ‘ফেসুবক যে রাজস্ব আয় করবে সেখান থেকে সারাবিশ্ব যেমন পাচ্ছে আমরাও যেন আমাদের প্রাপ্যটা পাই। সেজন্য আমাদের তৈরি হওয়া প্রয়োজন।’
এদের আটকানোর উপায় কী? জানতে চাইলে এম এ মান্নান আরও বলেন, ‘গুগলকে ১০ বিলিয়ন ডলার জরিমানা করে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। গুগল উচ্চ আদালতে গিয়ে সেটাকে ফিরিয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের মতো শক্তি এদের মোকাবেলা করতে হিমশিম খাচ্ছে। কিন্ত ভয় পেলে চলবে না। নিজেদের শক্তি সঞ্চার করতে হবে। আমাদের স্কিল এবং একটি আইন করে সংসদ থেকে এদের মোকাবিলা করতে পারি। সেইসঙ্গে বিদেশি সংস্থাগুলোর সাথে বসে আমাদের একটি গাইডলাইনে যেতে হবে। পথ আছে। আর সে পথেই আমাদের এগোতে হবে।’
বিজ্ঞাপনী সংস্থাগুলো মনে করছে এর মাধ্যমে বিদেশে টাকা পাচার হতে পারে। কিন্তু সেটি কীভাবে? জানতে চাইলে গ্রে অ্যাডভার্টাইজিং লিমিটেডের ম্যানেজিং পার্টনার ও কান্ট্রি হেড গাউসুল আজম শাওন বলেন, ‘এরা খুব শক্তিশালী। ফেসবুকের প্রতিনিধি যখন বাংলাদেশে আসে তখন সরকারের পক্ষ থেকে বারবার এখানে অফিস স্থাপনের কথা বলা হয়েছে। এমনকি ফেসবুককে বাংলাদেশে কোম্পানি খুলতে বলা হয়। কারণ কোম্পানি না খুললে বাংলাদেশ সরকার কোনো রেভিনিউ নিতে পারবে না। কিন্তু তারা সেটা করেনি। বরং তারা বাংলাদেশে একটি অথোরাইজড ডিলার নিয়োগ দিয়েছে। এর মানে হচ্ছে, আপনি চাইলে বিদেশি কার্ড ব্যবহার করে বাংলাদেশ থেকে টাকা নিয়ে যেতে পারবেন।’
শাওন বলেন, ‘সরকারের পক্ষ থেকে বারবার জঙ্গি তৎপরতা, প্রচার আইন এবং ট্যাক্সের কথা বলা হয়েছে ফেসবুককে। কিন্তু তারা সেটি না করে চালাকি করল। অপরদিকে যে এইচটিটিপুলকে নিয়োগ দেওয়া হলো, তারা আসলে কারা? আমরা তো জানি না তাদের! এমনকি কেউ বলতেও পারবে না এরা কারা? ফেসবুক সরকারের কথা শুনতে এসেছিল। তারা সরকারের আদেশ অমান্য করে যদি এটা করে, তাহলে আমাদের উচিত হবে বাংলাদেশে তাদের একটা বিজ্ঞাপনও প্রচার করতে না দেওয়া।’
এইচটিটিপুল বিজ্ঞাপন নিমার্ণ করবে এবং প্রচারও করবে। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশের বিজ্ঞাপনী সংস্থাযর জনশক্তি ক্ষতিগস্ত হবে। এ বিষয়ে গাউসুল আজম বলেন, ‘এখানে এটাতে তেমন সমস্যা হবে না। কিন্তু যেটা করতে হবে, যেখানেই বাংলাদেশের বিজ্ঞাপন চলবে তার জন্য সরকারকে রেভিনিউ দিতে হবে। সেইসঙ্গে বিজ্ঞাপনগুলো মনিটরিং করতে হবে। ফেসবুক যে বিজ্ঞাপনগুলো চলে, সেগুলো কীভাবে যায়? সোর্স কী? কোন দিক থেকে যায়? এগুলো বিষয়ে ফেসবুকের সঙ্গে কথা বলতে হবে। বাংলাদেশ থেকে যে বিজ্ঞাপন বুকিং দেওয়া হবে সেগুলো ঠিকভাবে ট্যাক্স দিয়ে নিতে হবে। সেজন্য মনিটরিং সেল থাকতে হবে। তাহলে পাচার রোধ করা যাবে।’