এসডিজি বাস্তবায়নে অন্যতম চ্যালেঞ্জ করোনার আঘাত
২৭ আগস্ট ২০২০ ২১:৫০
ঢাকা: টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) বাস্তবায়নে অন্যতম বাধা হিসেবে দেখা দিয়েছে বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯)। এছাড়া প্রাকৃতিক দুর্যোগসহ আরও কিছু বিষয়ও এসডিজি অর্জনের ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
‘টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট: বাংলাদেশের অগ্রগতি প্রতিবেদন-২০২০’ শীর্ষক এক প্রতিবেদনে এ কথা বলা হয়েছে। গত চার বছরের এই মূল্যায়ন প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ (জিইডি)।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, দেশে দারিদ্র্য কমলেও বেড়েছে বৈষম্য। তবে সার্বিকভাবে নানা ক্ষেত্রে বাংলাদেশ অগ্রসরমান। বর্তমান পরিস্থিতিতে বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আন্তর্জাতিক সহায়তার পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ বিনিয়োগ বৃদ্ধি, করদাতার সংখ্যা বাড়ানো, বুদ্ধিদৃপ্ত কর সংগ্রহ ও ব্যবস্থাপনা কৌশল উন্নয়ন, সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) বৃদ্ধির পরিবেশ উন্নয়ন এবং মুক্ত বাণিজ্য অঞ্চলসহ (এফটিএ) বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে।
আরও পড়ুন- এসডিজি’র ৬ লক্ষ্যে অগ্রগতি, ৬ খাতে ‘দৃশ্যমান’ সাফল্য
বৃহস্পতিবার (২৭ আগস্ট) রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) সম্মেলন কক্ষে প্রতিবেদনটি আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করা হয়েছে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। বিশেষ অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের মুখ্য সমন্বয়ক (এসডিজি) জুয়েনা আজিজ, পরিকল্পনা বিভাগের সিনিয়র সচিব আসাদুল ইসলাম, পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন এবং ইউএনডিপির আবাসিক প্রতিনিধি সুদীপ্ত মুখার্জি। প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন জিইডি’র সদস্য (সিনিয়র সচিব) ড. শামসুল আলম।
প্রতিবেদন উপস্থাপন করে ড. শামসুল আলম বলেন, বাংলাদেশে দারিদ্র্যের হার কমছে। কিন্তু বৈষম্য বাড়ছে। একটি দেশ যখন উন্নতির দিকে যায়, তখন এটি স্বাভাবিকভাবেই হয়। কেননা অর্থনৈতিকভাবে যারা ওপরের দিকে আছেন তারা যেরকম বিনিয়োগ করতে পারেন, নিচের দিকে যারা আছেন তারা সেরকম পারেন না। ফলে উচ্চস্তরের দিকের মানুষরা বেশি লাভবান হন।
তিনি বলেন, কোভিড-১৯ মহামারি ও প্রাকৃতিক দুর্যোগে অনেক মানুষ দরিদ্র হয়ে পড়ছেন। তবে আশা করা হচ্ছে, করোনা পরিস্থিতি উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে উৎপাদনশীল কর্মকাণ্ডও দ্বিগুণ গতিতে বাড়বে। ফলে এখনকার ক্ষতি পুষিয়ে ওঠা সম্ভব হবে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, শিশুদের নিরাপত্তার সূচকগুলো তুলনামূলকভাবে খারাপ অবস্থানে আছে। এটা কাম্য নয়। আঞ্চলিক ও আয় বৈষম্য কমাতে কাজ করছে সরকার। একই পরিবারের সদস্য হয়ে এক ভাই খাবে, আরেক ভাই খেতে পারবে না— সেটি হতে পারে না। বৈষম্য মোকাবিলা করা আমাদের দায়িত্ব।
মন্ত্রী বলেন, প্রথম ধাক্কায় কিছু শ্রমিক বিদেশ থেকে ফিরেছে। কিন্তু কোভিড পরিস্থিতির উন্নতি হলে আবার সবগুলো দেশে সংস্কার হবে। তখন শ্রমিকের চাহিদা বাড়বে। ব্যবসার পরিবেশ উন্নত করতে আমরা ডুয়িং বিজনেস পরিস্থিতি নজরে রেখেছি। এক্ষেত্রে উন্নতির চেষ্টা চলছে। তথ্যের যে ঘাটতি আছে, তা দ্রুত পূরণের জন্য পরিসংখ্যান ব্যুরোকে কার্যক্রম চালাতে হবে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে জুয়েনা আজিজ বলেন, আমাদের অনেক কাজ হলেও প্রকৃত তথ্যের অভাবে সেগুলো প্রতিবেদনে প্রতিফলিত হচ্ছে না। বৈষম্য দূর করতে কাজ চলছে। উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। মানবসম্পদ উন্নয়ন, একশটি অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনসহ নানাভাবে কর্মসংস্থান তৈরির প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে।
মাসুদ বিন মোমেন বলেন, রোহিঙ্গা ও কোভিডের কারণে প্রবাসী শ্রমিকরা দেশে ফিরে আসাসহ নানা চ্যালেঞ্জ আমাদের রয়েছে। এসব মোকাবিলা করেই উন্নয়নকে এগিয়ে নিতে কাজ চলছে। এক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক, দেশীয় ও সব পক্ষ মিলেই এসডিজি বাস্তবায়নে কাজ করতে হবে।
সুদীপ্ত মুখার্জি বলেন, নগর দারিদ্র্য বাড়ছে। এ বিষয় গুরুত্ব দিতে হবে। সরকারের সামাজিক নিরাপত্তাসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা শহরেও বাড়াতে হবে।
১৭ এসডিজির বর্তমান চিত্র
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এসডিজির ১৭টি অভীষ্টের মধ্যে ‘দারিদ্র্য বিলোপে’র ক্ষেত্রে বাংলাদেশ পরিমিত ও সঠিক পথেই রয়েছে। এছাড়া আরও পাঁচটি লক্ষ্যকে ‘পরিমিত মাত্রায় দুর্বল’ হলেও ‘অগ্রসরমান’ হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে। এই পাঁচটি লক্ষ্য হলো— ক্ষুধামুক্তি; সুস্বাস্থ্য ও সামাজিক কল্যাণ; জেন্ডার সমতা ও নারীর ক্ষমতায়ন; সাশ্রয়ী, নির্ভরযোগ্য, টেকসই ও আধুনিক জ্বালানি; এবং অভিঘাত সহিষ্ণু অবকাঠামো, টেকসই শিল্পায়ন ও উদ্ভাবন।
প্রতিবেদনে ছয়টি লক্ষ্যের বর্তমান অবস্থাকে ‘দুর্বল ও স্থবির’ বলা হয়েছে সেগুলো হলো— স্থিতিশীল, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও টেকসই প্রবৃদ্ধি এবং শোভন কর্মসংস্থান; টেকসই নগর ও জনবসতি; জলবায়ু কার্যক্রম; শান্তি, ন্যায় বিচার ও কার্যকর প্রতিষ্ঠান; টেকসই উন্নয়নের জন্য বৈশ্বিক অংশীদারিত্ব; এবং জলজ জীবন।
প্রতিবেদনে বলা হয়, স্থলজ জীবনের লক্ষ্যটি খুবই দুর্বল ও অবনতিশীল অবস্থায় রয়েছে। আর তথ্য-উপাত্তের অভাবে যে চারটি লক্ষ্য মূল্যায়ন করা সম্ভব হয়নি সেগুলো হলো— নিরাপদ পানি ও পয়ঃনিস্কাশন; অন্তর্ভুক্তিমূলক ও সমতাভিত্তিক গুণগত শিক্ষা; অসমতা হ্রাস; এবং পরিমিত ভোগ ও টেকসই উৎপাদন।
যেসব খাতে অগ্রগতি
গত চার বছরে ১৭টি টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার (এসডিজি) মধ্যে একটি বাস্তবায়নে ব্যাপক অগ্রগতি দেখা গেছে। আরও পাঁচটি লক্ষ্য বাস্তবায়নও অগ্রসরমান। এর ফলে দারিদ্র্য নিরসনে এসেছে ব্যাপক সাফল্য। এছাড়া জাতীয় উচ্চ দারিদ্র্য রেখা ও নিম্ন দারিদ্র্য রেখার নিচে অবস্থানকারী জনসংখ্যা স্থিতিশীলভাবে কমছে। ছাড়া পাঁচ বছরের কম বয়সী খর্বকায় শিশুর অনুপাতের পাশাপাশি পাঁচ বছরের শিশু মৃত্যুর হারও ধারাবাহিকভাবে কমছে। এর বাইরেও প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করা শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়ছে, বার্ষিক জিডিপি প্রবৃদ্ধিতে ঊর্ধ্বগতি এসেছে এবং দেশের টেলিযোগাযোগ পদ্ধতির আধুনিকায়ন ঘটেছে। সারাবাংলা এর আগেই এ নিয়ে বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
অগ্রগতি প্রতিবেদন এসডিজি চার বছরের অগ্রগতি মূল্যায়ন জিইডি টেকসই অভীষ্ট লক্ষ্য ড. শামসুল আলম পরিকল্পনা কমিশন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ