আজ থেকে গণপরিবহন আগের ভাড়ায়, সব সিটে যাত্রী
১ সেপ্টেম্বর ২০২০ ০৮:১০
ঢাকা: করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) সংক্রমণ বিবেচনায় তিন মাস অর্ধেক সিটে যাত্রী পরিবহন করেছে গণপরিবহনগুলো। যাত্রীদের এই সময়ে গুনতে হয়েছে কাগজে-কলমে ৬০ শতাংশ, বাস্তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে আগের তুলনায় দ্বিগুণ ভাড়া। করোনার সেই সংক্রমণের গতিতে কোনো পরিবর্তন না এলেও গণপরিবহনগুলো আজ মঙ্গলবার (১ সেপ্টেম্বর) থেকে ফিরছে সাবেক ভাড়ায়। আর সব সিটে যাত্রী তোলারও অনুমতি দিয়েছে সরকার। একইসঙ্গে আজ থেকেই আনুষ্ঠানিকভাবে চলবে মোটরসাইকেলে রাইড শেয়ারিং সেবাগুলোও।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্লাহ জানান, সব পরিবহন সংগঠন এবং সারাদেশে তাদের পরিবহন নেতাদের চিঠি দিয়ে আগের ভাড়ায় ফিরে যেতে নির্দেশ দিয়েছেন। এই নির্দেশ যাতে মানা হয় সেজন্য তারা নজর রাখবেন। কেউ নির্দেশ না মানলে সমিতি থেকে বাদ দেওয়াসহ কঠোর অবস্থানের কথা জানান খন্দকার এনায়েত উল্লাহ।
গত শনিবার (২৯ আগস্ট) বিআরটিএ ও বিআরটিসি’র ঢাকা সড়ক জোনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা শেষে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের গণপরিবহনের সাবেক অবস্থায় ফিরে যাওয়ার অনুমতির কথা জানান।
ওই দিন সড়ক পরিবহনমন্ত্রী ভিডিও বার্তায় বলেন, ১ সেপ্টেম্বর থেকে বাসগুলো সব সিটে যাত্রী তুলতে পারবে। যাত্রীরাও আগের ভাড়া দেবেন। তবে এর জন্য দু’টি শর্তও মানতে হবে বলে জানান তিনি। শর্ত দু’টি হলো— দাঁড়িয়ে যাত্রী নেওয়া যাবে না এবং যাত্রীদের মুখে মাস্ক থাকতে হবে। আর বাসের চালক, হেলপারসহ সংশ্লিষ্ট প্রত্যেক্যের জন্যও মাস্কের ব্যবহার বাধ্যতামূলক।
গণপরিবহনে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণের বাধ্যবাধকতার কথা তুলে ধরে ওবায়দুল কাদের বলেন, প্রতিটি গণপরিবহনকে অবশ্যই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। একটি ট্রিপ শেষ হলে বাস পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন তো বটেই, জীবাণুমুক্তও করতে হবে। তা না করলে শাস্তির ব্যবস্থা থাকবে বলে জানান মন্ত্রী।
এদিকে, গণপরিবহনের পাশাপাশি মোটরসাইকেলে রাইড শেয়ারিং সেবাও চালু হচ্ছে ১ সেপ্টেম্বর থেকে। এ ক্ষেত্রেও মোটরসাইকেল চালক ও যাত্রীকে অবশ্যই মাস্ক ব্যবহার করতে হবে এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। আনুষ্ঠানিকভাবে এতদিন এই সেবা বন্ধ থাকলেও গত জুন মাসে যখন থেকে গণপরিবহন চলতে শুরু করে, তখন থেকেই পরিমাণে কম হলেও মোটরসাইকেলে রাইড শেয়ারিং সেবা চালিয়ে গেছেন অনেকেই।
রাজধানীর দুয়েকটি রুটের কিছু গণপরিবহনকে অবশ্য শনিবার মন্ত্রীর ঘোষণার পর থেকেই সব সিটে যাত্রী তুলতে দেখা গেছে। রোববার ও সোমবার বেশিরভাগ গণপরিবহনই সে পথে হাঁটেনি।
সকালে রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে দেখা গেছে, আগের ভাড়া না নিলেও স্যানিটাইজার করা হচ্ছে না। যত্রতত্র যাত্রী উঠানো হচ্ছে। মাস্ক ছাড়াই অনেকে বাসে উঠে পড়ছেন।
এর আগে, গত ৮ মার্চ দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শনাক্ত হওয়ায় ২৬ মার্চ থেকে সব ধরনের গণপরিবহন বন্ধ করে দেয় সরকার। এপ্রিল ও মে মাসে সে নিষেধাজ্ঞা বহাল ছিল। পরে ৩১ মে থেকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে বাস, লঞ্চ ও রেল চলাচলের অনুমতি দেয় সরকার। তবে বাসে অর্ধেক আসন ফাঁকা রেখে বাকি অর্ধেক আসনে যাত্রী তোলার অনুমতি দেওয়া হয়। সে ক্ষেত্রে যাত্রীদের কাছ থেকে ৬০ শতাংশ বাড়তি ভাড়া নেওয়া যাবে বলে জানায় সরকার।
বাস্তবে জুন মাসের শুরু থেকেই দেখা গেছে, অনেক বাসই অর্ধেক আসনে যাত্রী তোলার বিধানটি মানেনি। গণপরিবহন কম থাকায় অনেক সময় যাত্রীরাও স্বাভাবিক সময়ের মতোই গন্তব্যে পৌঁছাতে বাসে ওঠার জন্য হুড়োহুড়ি করেছেন। অন্যদিকে, ৬০ শতাংশ বেশি ভাড়া আদায়ের অনুমতি থাকলেও অনেক রুটে অনেক বাসই দ্বিগুণ ভাড়া আদায় করেছে। এখন সব সিটে যাত্রী তোলার সুযোগ করে দিয়ে আগের ভাড়া ফিরে আসছে। তাতে করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি থাকলেও আগের ভাড়ায় ফেরত যাওয়ার সুযোগ করোনার এই সংকটকালে অনেককেই স্বস্তি দেবে।
আরও পড়ুন-
গণপরিবহন চলাচল শুরু, আসছে ট্রেন, ছেড়েছে লঞ্চ
বেশি যাত্রী তুলতে আগের ভাড়ায় ফিরতে চায় গণপরিবহন
করোনা প্রতিরোধ-নিয়ন্ত্রণে গণপরিবহনের জন্য যেসব স্বাস্থ্যবিধি
গণপরিবহনের বাড়তি ভাড়া কমাতে বিকেলে বৈঠক বিআরটিএতে
বাড়তি ভাড়া আদায়কারী গণপরিবহনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ
অর্ধেক সিটে যাত্রী আগের ভাড়া ওবায়দুল কাদের গণপরিবহন গণপরিবহন চালু গণপরিবহন বন্ধ বিআরটিএ রাইড-শেয়ারিং সব সিটে যাত্রী স্বাস্থ্যবিধি