প্রাথমিকে করোনার ধাক্কা সামলাতে আসছে ১২৮ কোটি টাকার প্রকল্প
৬ অক্টোবর ২০২০ ১০:১২
ঢাকা: প্রাথমিক শিক্ষায় করোনার ধাক্কা সামলাতে বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এজন্য ‘বাংলাদেশ কোভিড-১৯ স্কুল সেক্টর রেসপন্স (সিএসএসআর)’ শীর্ষক একটি প্রকল্প প্রস্তাব করা হয়েছে পরিকল্পনা কমিশনে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় হবে মোট ১২৮ কোটি ৪০ লাখ। এর মধ্যে বিশ্ব ব্যাংকের সহযোগী প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল পার্টনারশিপ ফর এডুকেশন (জিপিই) প্রকল্প সাহায্য হিসেবে দেবে ১২৬ কোটি ৫৩ লাখ। আর সরকারের ব্যয় হবে ১ কোটি ৮৭ লাখ টাকা। ২০২০ সালের জুলাই থেকে ২০২২ সালের জুন বাস্তবায়নের জন্য প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে প্রকল্পটি প্রস্তাব করা হয়েছে। এটি বাস্তবায়নের মাধ্যমে করোনাকালে প্রাথমিক শিক্ষায় যে ক্ষতি হয়েছে তা পুষিয়ে নেওয়ার পাশাপাশি স্কুলগুলোর সক্ষমতা বাড়ানো সম্ভব হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, দুই বছর মেয়াদী এই প্রকল্পে নতুন শিক্ষাবর্ষে বিদ্যালয়ে ভর্তি, লেখাপড়ার ক্ষতিপূরণে সহায়তা, শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষা সেবা দেওয়া, বর্তমান ও ভবিষ্যত সংকট মোকাবিলার জন্য বিদ্যালয় ব্যবস্থার প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরিসহ দূরশিক্ষণ কার্যক্রমকে একীভূত করার বিষয় থাকবে। এছাড়া প্রকল্পের আওতায় জরুরি পরিস্থিতিতে বা দীর্ঘ সময় স্কুলবন্ধ পরিস্থিতিতে কৌশল ও মানসম্মত কার্যপ্রণালী প্রণয়নে সবধরনের কারিগরি সহায়তা নিশ্চিত করা হবে। বিদ্যালয় খোলার পর ২০ হাজার প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় সুরক্ষা সামগ্রী দেওয়া হবে। আর পিছিয়ে থাকা শিক্ষার্থীদের জন্য থাকবে বিশেষ স্কিম।
এর বাইরে করোনা সংকট মোকাবিলা ও উত্তরণের জন্য বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনার প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বাড়ানো হবে। করোনাভাইরাস সংক্রান্ত ভবিষ্যত সংকট মোকাবিলার জন্য শিক্ষার্থীদের প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করা হবে। ২৫ লাখ শিক্ষার্থীকে একীভূত দূরশিক্ষণ যেমন: টিভি, রেডিও ও অনলাইন সহায়তা দেওয়া হবে। প্রকল্পের উদ্দেশ্য পূরণে ৩২ লাখ ৪০ হাজার শিক্ষার্থী প্রাক-প্রাথমিক ও প্রাথমিক স্তরের সরকারি বিদ্যালয়ে পুনঃভর্তি নিশ্চিত করা হবে।
প্রকল্প প্রস্তাব থেকে জানা যায়, প্রথম থেকে ৫ম শ্রেণি পর্যন্ত সকল বিষয়ের ডিজিটাল কন্টেন্ট তৈরি করা হবে। এই ডিজিটাল কন্টেন্ট ডাউনলোড করে মাল্টিমিডিয়া ক্লাসে প্রদর্শন করা হবে। ফলে শিক্ষার্থীরা আনন্দ নিয়ে তাদের শিখন শেষ করতে পারবে। দুর্গম ও প্রত্যন্ত এলাকার ১ লাখ ৫০ হাজার শিশুকে শিক্ষা উপকরণ দেওয়া হবে। শিক্ষকদের জন্য প্রশিক্ষন ম্যানুয়াল তৈরি, বিদ্যালয় বন্ধের কারণে শিক্ষার ক্ষতি পরিমাপ করতে ৩ লাখ ৫০ হাজার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন করা হবে। এছাড়া ২ লাখ শিক্ষককে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। এছাড়া ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে ফেরাতে উদ্যোগ নেওয়া হবে।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে প্রস্তাব পাওয়ার পর গত ২৭ আগস্ট প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা অনুষ্ঠিত হয়। সম্প্রতি ওই সভার কার্যবিবরণী জারি করেছে পরিকল্পনা কমিশন। কার্যবিরণীতে প্রকল্পটি থেকে বিদেশ প্রশিক্ষণ বাদ ও বিভিন্ন খাত থেকে ব্যয় কমানোর কথা উঠে এসেছে। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে প্রকল্পটি প্রক্রিয়াকরণের দায়িত্বপ্রাপ্ত পরিকল্পনা কমিশনের আর্থ-সামাজিক অকাঠামো বিভাগের সদস্য (সচিব) আবুল কালাম আজাদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘এই প্রকল্পে বিদেশ প্রশিক্ষণের সুযোগ ছিল সেটি বাদ প্রায় বাদ দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। তাছাড়া আরও অন্যান্য অনেক ব্যয়ই কমানো হয়েছে। অনুদানের টাকা বলে যেনতেনভাবে ব্যয় করা উচিৎ নয়।’
এদিকে পিইসি সভায় যুগ্ম-প্রধান (শিক্ষা) জানিয়েছেন, বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে কোভিড-১৯ মহামারি। এক্ষেত্রে বাংলাদেশে শিখন ও শেখানোয় আরও অবনতি ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। মহামারির কারণে গত ১৭ মার্চ থেকে ৩ কোটি ৮৬ লাখ শিক্ষার্থীর সরাসরি শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ হয়ে আছে। এছাড়া এই মহামারির কারণে অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দিতে পারে। যা বিদ্যালয়ের কার্যক্রম শুরু হওয়ার পরও বহুদিন থাকতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। পরিস্থিতি বিবেচনায় বিশ্বব্যাংকের সহযোগী প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল পার্টনারশিপ ফর ইডুকেশনের (জিপিই) সহযোগিতায় বাস্তবায়নের জন্য প্রকল্পটি প্রস্তাব করা হয়েছে।
পিইসি সভার শুরুতে সভাপতি আবুল কালাম আজাদ প্রস্তাবিত প্রকল্পের যৌক্তিকতা ও প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে জানতে চান। এর জবাবে মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি বলেন, ‘প্রস্তাবিত প্রকল্পের আওতায় ৩৫টি বিষয়ের ওপর ডিজিটাল কনটেন্ট তৈরির মাধ্যমে প্রাক-প্রাথমিক থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত মোট ২৫ লাখ শিক্ষার্থী দূরশিক্ষণের মাধ্যমে শিক্ষা প্রদান করা যাবে।’
প্রাক-প্রাথমিক থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের সুবিধা দেওয়ার ক্ষেত্রে এই প্রকল্পে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সংশ্লিষ্টতা জানতে চাইলে মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি বলেন, ‘মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের জন্য পৃথক কনটেন্ট তৈরি করা হবে। প্রাথমিক বিদ্যালয় পর্যায়ের কার্যক্রম অধিক হওয়ায় প্রকল্পটির কার্যক্রম বাস্তবায়নের প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় লিড মিনিস্ট্রি হিসেবে এবং মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ কো-অথরিটি হিসেবে কাজ করবে। স্কুল রি অপেনিং কনটেন্ট প্রস্তুত কার্যক্রম প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ যৌথভাবে সম্পাদন করবে।
এদিকে প্রকল্পটি প্রসঙ্গে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. আকরাম আল হোসেন বলেন, ‘করোনাভাইরাস পরবর্তী সময়ে বিদ্যালয় খোলার পর থেকেই প্রকল্পের মাধ্যমে সুবিধা পাবে শিক্ষার্থীরা। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, ইউনিসেফ, সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি) এবং স্বাস্থ্য অধিদফতরের দেওয়া স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে যেসব নির্দেশনা তৈরি হয়েছে তা বাস্তবায়নে অর্থ দেওয়া হবে।’
উল্লেখ্য, বর্তমানে দেশে মোট বিদ্যালয়ের সংখ্যা ১ লাখ ৩৪ হাজার ১৪৭ টি। এর মধ্যে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ৬৫ হাজার ৬২০টি। আর এই প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে ১ কোটি ৭৩ লাখ ৩৮ হাজার শিক্ষার্থী পড়াশুনা করছে।
করোনার ধাক্কা পরিকল্পনা কমিশন প্রকল্প প্রস্তাব প্রাথমিক শিক্ষা সিএসএসআর