প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ ৪০ বিলিয়ন ডলার
৮ অক্টোবর ২০২০ ২১:৫৬
ঢাকা: এক মাস আট দিন পর আরও এক নতুন উচ্চতায় উন্নীত হয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ। এবার প্রথমবারের মতো রিজার্ভ স্পর্শ করেছে ৪০ বিলিয়ন বা চার হাজার কোটি মার্কিন ডলারের সীমা। বাংলাদেশি মুদ্রায় (প্রতি ডলার ৮৪ টাকা ধরে) এর পরিমাণ তিন লাখ ৩৬ হাজার কোটি টাকা। এর আগে গত ১ সেপ্টেম্বর রিজার্ভ ৩৯ বিলিয়ন ডলারের সীমা স্পর্শ করেছিল।
বৃহস্পতিবার (৮ অক্টোবর) বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. সিরাজুল ইসলাম সারাবাংলাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
রিজার্ভের এই ঊর্ধ্বগতির পেছনে রেমিট্যান্স ও আমদানির প্রভাব তুলে ধরে সিরাজুল ইসলাম বলেন, প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৪০ বিলিয়ন ডলারের মাইলফলক অতিক্রম করেছে। এর একটি কারণ রেমিট্যান্স প্রবাহ। গত কয়েক মাসে রেমিট্যান্স যেভাবে বাড়ছে, সেই ধারাবাহিকতা বজায় ছিল। দ্বিতীয়ত, করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) সংক্রমণ পরিস্থিতির কারণে আমদানির পরিমাণ বাড়েনি। বরং এই সময়ে আমদানির জন্য যেসব এলসি খোলা হয়েছিল, সেগুলো ডেফার্ড হয়ে গেছে। ফলে বৈদেশিক মুদ্রায় কোনো অর্থ পরিশোধ করতে হয়নি। এতে করে রিজার্ভ বেড়ে গেছে।
রেমিট্যান্সের ক্ষেত্রে সরকারের নেওয়া উদ্যোগ তুলে ধরে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এই মুখপাত্র বলেন, সরকারের নানা উদ্যোগের কারণে রেমিট্যান্স প্রবাহ বেড়েছে। বিশেষ করে রেমিট্যান্সের ওপর সরকারের ২ শতাংশ প্রণোদনা ঘোষণা এবং হুন্ডি বন্ধে বাংলাদেশ ব্যাংকের বিভিন্ন পদক্ষেপের ফলে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভও দিন দিন বাড়ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানায়, গত কয়েক মাস ধরে বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ নতুন নতুন রেকর্ড তৈরি করছে। প্রতি মাসে গড়ে ৪ বিলিয়ন ডলার আমদানি ব্যয় হিসাবে বৈদেশিক মুদ্রার এই মজুত দিয়ে ১০ মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জুনের আগে দেশে বৈদেশিক মুদ্রার সর্বোচ্চ রিজার্ভ ছিল ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর— ৩৩ দশমিক ৬৮ বিলিয়ন ডলার। এরপর চলতি বছরের ৪ জুন প্রথমবারের মতো রিজার্ভ ৩৪ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করে। সে রেকর্ড অবশ্য স্থায়ী হয় মাত্র ২০ দিন। ২৪ জুন বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ পৌঁছে যায় ৩৫ বিলিয়ন ডলারে। এর ছয় দিন পর গত ৩০ জুন ৩৬ বিলিয়ন ডলারে এবং গত ২৮ জুলাই ৩৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের নতুন উচ্চতায় পৌঁছে যায় রিজার্ভ।
আরও পড়ুন-
- রিজার্ভ রেকর্ড ৩৪ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে
- টানা তৃতীয় মাসে রেমিট্যান্স-রিজার্ভে নতুন রেকর্ড
- রেকর্ড রেমিট্যান্সে রিজার্ভ এবার ৩৬ বিলিয়নের নতুন উচ্চতায়
- ৩৯ বিলিয়ন ডলারের নতুন উচ্চতায় বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ
- আড়াই মাসে যোগ ৪ বিলিয়ন ডলার, রিজার্ভ পেরলো ৩৮ বিলিয়ন
- ৩ সপ্তাহের ব্যবধানে রিজার্ভে নতুন রেকর্ড, এবার ছাড়াল ৩৫ বিলিয়ন
- রেমিট্যান্স-বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের রেকর্ডেও স্বস্তি পাচ্ছেন না অর্থনীতিবিদরা
এর ধারাবাহিকতায় গত ১৭ আগস্ট রিজার্ভ ৩৮ বিলিয়ন ডলার এবং পরদিন ১৮ আগস্ট বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৩৮ দশমিক ১৫ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছে। ১ সেপ্টেম্বর এর পরিমাণ দাঁড়ায় ৩৯ দশমিক ৪০ ডলার। এবার আজ ৮ অক্টোবর বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ প্রথমবারের মতো ৪০ বিলিয়ন ডলারের মাইলফলক অতিক্রম করলো।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানায়, মূলত প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সের ওপর ভর করেই রিজার্ভে একের পর এক নতুন রেকর্ড হচ্ছে। গত মে মাস থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রায় প্রতি মাসেই প্রবাসীরা রেকর্ড ভাঙা রেমিট্যান্স পাঠাচ্ছেন। সবশেষ সদ্য বিদায়ী সেপ্টেম্বর মাসেও প্রবাসীরা ২১৫ কোটি ১০ লাখ মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন। এটি দেশের ইতিহাসে একক মাস হিসেবে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স আহরিত মাস। এর আগে আগস্ট মাসে প্রবাসীরা ১৯৬ কোটি ৩০ লাখ ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছিলেন। সেপ্টেম্বর মাস এর পরিমাণকে অতিক্রম করায় আগস্ট এখন সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স আসার ক্ষেত্রে তৃতীয় স্থানে।
এখন পর্যন্ত একমাসে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স এসেছে এর ঠিক আগের মাস জুলাইয়ে। ওই মাসে প্রবাসীরা ২৬০ কোটি মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছিলেন দেশে। এর আগে গত মে মাস প্রবাসীরা ১৭৪ কোটি ৫০ লাখ মার্কিন ডলার ও জুন মাসে ১৮৩ কোটি ৩০ লাখ ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছিলেন। মে, জুন দুই মাসেই সেটি ছিল তখনকার রেকর্ড। পরের মাসগুলোতে সেই রেকর্ড ভেঙে গেছে।
আমদানি ব্যয় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ বাংলাদেশ ব্যাংক বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ রিজার্ভ রেমিট্যান্স