Saturday 07 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

দেনার দায় থেকে বাঁচতে পুলিশের বিরুদ্ধে ছিনতাইয়ের অপবাদ


১১ অক্টোবর ২০২০ ১৩:২৬

চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রাম নগরীর কোতোয়ালী থানা পুলিশের বিরুদ্ধে ছিনতাইয়ের অভিযোগ এনে গ্রেফতার হয়েছেন এক মাছ বিক্রেতা। পুলিশ জানিয়েছে, দেনায় জর্জরিত ওই মাছ বিক্রেতা দায় থেকে নিজেকে বাঁচাতে পুলিশের বিরুদ্ধে তার ১ লাখ ১৩ হাজার টাকা ছিনতাইয়ের অভিযোগ আনেন, যা সম্পূর্ণ সাজানো।

রোববার (১১ অক্টোবর) ওই মাছ বিক্রেতার বিরুদ্ধে কোতোয়ালী থানায় প্রতারণার অভিযোগে একটি মামলা দায়ের হয়েছে বলে জানিয়েছেন নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি-দক্ষিণ) পলাশ কান্তি নাথ।

গ্রেফতার বাবলা দাশ (৩০) নগরীর লালখান বাজারের টাংকির পাহাড় লেইনের বাসিন্দা ধনঞ্জয় দাশের ছেলে।

কোতোয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মহসীন সারাবাংলাকে জানান, বাবলা ফিরিঙ্গিবাজারের আড়ত থেকে মাছ কিনে লালখান বাজারে নিয়ে বিক্রি করেন। গতকাল (শনিবার) সকালে মাছের আড়তদার সমবায় সমিতির সভাপতি আমিনুল হক বাবুল সরকার তাকে নিয়ে সিএমপি কমিশনারের কাছে গিয়ে অভিযোগ করেন, শুক্রবার রাতে লালখান বাজারের বাসা থেকে সিএনজি অটোরিকশা যোগে মাছ কিনতে যাবার সময় নগরীর ডিসি হিলের সামনে একদল পুলিশ তার গতিরোধ করে। তাকে অটোরিকশা থেকে নামিয়ে নীল রঙের একটি পুলিশের গাড়িতে তুলে নেয় পাঁচ পুলিশ সদস্য। তার কাছে থাকা এক লাখ ১৩ হাজার টাকা এবং একটি মোবাইল ফোন নিয়ে নেয় তারা। তার হাতে কিছু ইয়াবা ও অন্যহাতে টাকা দিয়ে ছবি তুলে। পরে দুই ঘণ্টা বিভিন্ন সড়কে ঘুরিয়ে তাকে মিউনিসিপ্যাল মডেল হাইস্কুলের সামনে নামিয়ে দেয়।

‘সিএমপি কমিশনার স্যারের নির্দেশে এই অভিযোগ তদন্তে আমরা কাজ শুরু করি। যেহেতু আমার থানায় কর্মরতদের বিরুদ্ধে অভিযোগ এসেছে, আমি থানার টহল টিম, ফোর্সসহ পুলিশের সকল সদস্যদের জিজ্ঞাসাবাদ করি। ডিসি হিল এবং মিউনিসিপ্যাল মডেল হাইস্কুলের সামনে থাকা সিসি ক্যামেরার ফুটেজ পর্যালোচনা করি। কিন্তু এমন ঘটনার কোনো সত্যতা পাওয়া যায়নি। এরপর এডিসি পলাশ স্যার বাবলাকে উনার অফিসে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। এর একপর্যায়ে তিনি স্বীকার করেন যে, দেনার দায় থেকে বাঁচতে নাটক সাজিয়েছিলেন’-বলেন ওসি মহসীন।

এডিসি পলাশ কান্তি নাথ সারাবাংলাকে বলেন, ‘গতকাল (শনিবার) রাত ৮টা থেকে আমি বাবলকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করি। বারবার সে অভিযোগের প্রতি অনড় থাকে। একপর্যায়ে তাকে সিসি ক্যামেরার ফুটেজও দেখানো হয়। রাত ১১টার দিকে সে স্বীকার করে যে, ধার-দেনা থেকে বাঁচার জন্য সে নাটক সাজিয়েছিল। তখন সে পুরো ঘটনা আমাদের কাছে খুলে বলে।’

বাবলাকে জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে তিনি জানান, মাছের ব্যবসার জন্য কয়েকমাস আগে বাবলা ৫০ হাজার টাকা সুদে ঋণ নেন। কিন্তু সেই টাকা তিনি সময়মতো পরিশোধ করতে না পারায় সুদ বাড়ছিল। তিনি নিয়মিত ফিরিঙ্গিবাজারের আড়তদার মো. আইনুদ্দিনের সরকার ফিশ ট্রেডিং থেকে মাছ কেনেন। সেখানে তার ১ লাখ ৭১ হাজার টাকা বকেয়া জমে যায়। আইপিএল জুয়া খেলেও অনেক টাকা লোকসান দিয়েছেন। তার স্ত্রী অন্তঃস্বত্তা। সম্প্রতি বাবা-মায়ের কাছ থেকে আলাদা হয়ে স্ত্রীকে নিয়ে বসবাস শুরু করেছেন তিনি। এতে তার নিয়মিত খরচও বেড়ে গেছে। সব মিলিয়ে দায়-দেনায় জর্জরিত হয়ে পড়েন তিনি।’

‘জিজ্ঞাসাবাদে বাবলা জানিয়েছেন, যে আড়ত থেকে মাছ কিনতেন, সেখানে টাকা বকেয়া থাকায় তারা খুবই নিম্নমানের মাছ তাকে গছিয়ে দিত। বিক্রির জন্য তার যতটুকু প্রয়োজন, তার চেয়ে অনেক বেশি মাছ তাকে নিতে বাধ্য করত। সম্প্রতি তাকে কয়েকমণ পচা লইট্যা মাছ এবং লবণ দেওয়া ইলিশ মাছ গছিয়ে দেয়। সেগুলো বিক্রি করতে না পেরে তার লোকসান হয়। শুক্রবার রাত তিনটার দিকে মাছ কেনার জন্য তিনি যখন ফিরিঙ্গিবাজারে যাচ্ছিলেন, তখন তার পকেটে ছিল মাত্র দুই হাজার ৭০০ টাকা। বাকিতে তাকে আড়তদার আর মাছ দেবেন না, এটা তিনি নিশ্চিত ছিলেন। তখন তিনি আড়তে গিয়ে ছিনতাইয়ের অভিযোগ করেন এবং যাতে পুলিশকেও জড়ানো হয়’-বলেন এডিসি পলাশ।

ছিনতাইয়ের নাটক সাজানোর কথা স্বীকারের পর বাবলাকে গ্রেফতার করা হয়েছে এবং আড়তদার আইনুদ্দিন বাদি হয়ে তার বিরুদ্ধে প্রতারণার মামলা করেছেন বলে জানিয়েছেন এডিসি পলাশ কান্তি নাথ।

ওসি মহসীন বলেন, ‘বড়ো ধরনের অপবাদের দায় থেকে কোতোয়ালী থানা পুলিশ রক্ষা পেয়েছে। এই অভিযোগের নেপথ্যের বিষয় উদঘাটনে যদি আমাদের দেরি হত, তাহলে এতক্ষণে প্রাথমিকভাবে টহল টিমকে অভিযুক্ত করে তদন্তের মুখোমুখি করা হত। আমার ওপরও দায় এসে পড়ত।’

কোতোয়ালী থানা ছিনতাই পুলিশের বিরুদ্ধে ছিনতাইয়ের অপবাদ মাছ বিক্রেতা


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর