ই-পাসপোর্টে রূপান্তর: নভেম্বরেই বন্ধ হচ্ছে এমআরপি!
২৬ অক্টোবর ২০২০ ১০:১৭
ঢাকা: দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর অবশেষে ই-পাসপোর্টের যুগে প্রবেশ করেছে বাংলাদেশ। চলতি বছরেই এর কার্যক্রম শুরু হলেও করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) সংক্রমণের কারণে সেই কার্যক্রমে গতি আসেনি শুরুতে। তবে শুরুর ধাক্কা কাটিয়ে উঠতে সময় লাগেনি। বরং করোনা সংক্রমণের কারণে একটি বড় সময় পাসপোর্টের কার্যক্রম বন্ধ থাকায় বরং ই-পাসপোর্টের কার্যক্রম গুছিয়ে নেয় ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদফতর। আর সূত্র ধরেই দেশের ৬৯টি আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের মধ্যে এখন ৫২টিতেই চলছে ই-পাসপোর্টের কাজ। সংশ্লিষ্টরা আশাবাদী, নভেম্বরের মাঝামাঝি নাগাদ বাকি কার্যালয়গুলোতেও শুরু হবে নতুন যুগের পাসপোর্টের কার্যক্রম।
এদিকে, অত্যাধুনিক ই-পাসপোর্টের যুগে এসে মাত্র একদশক আগের ‘আধুনিক’ প্রযুক্তি মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট তথা এমআরপি এখন ‘পুরনো’ হয়ে পড়েছে। ফলে অধিদফতর একদিকে যখন পাসপোর্টের যাবতীয় কার্যক্রম ই-পাসপোর্টের আওতায় নিয়ে আসতে কাজ করছে, একইসঙ্গে তাদের কাজ করতে হচ্ছে এমআরপি’র কাজ যথাসম্ভব কমিয়ে আনার জন্যও।
ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদফতরের একাধিক সূত্র সারাবাংলাকে বলছে, এরই মধ্যে নতুন এমআরপি ইস্যু ও রি-ইস্যু কার্যক্রম কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। নভেম্বরের মাঝামাঝিতে যেমন শতভাগ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে ই-পাসপোর্টের কার্যক্রম শুরু হবে, তেমনি নভেম্বরের মধ্যেই এমআরপি বন্ধ করারও সিদ্ধান্ত হয়েছে অধিদফতরে।
রোববার (২৫ অক্টোবর) পাসপোর্ট অধিদফতরের একাধিক সূত্র ও কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
অধিদফতর বলছে, ই-পাসপোর্টের মাধ্যমে প্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করতে এখন থেকে আর নতুন মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট ইস্যু বা মেয়াদোত্তীর্ণ মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট রি-ইস্যু’র আবেদন গ্রহণ করা হবে না। বিদেশ গমনেচ্ছুক সবাইকে ই-পাসপোর্ট নিয়েই দেশের বাইরে যেতে হবে। এতে হয়রানি যেমন কমবে, তেমনই সময়ও সাশ্রয় হবে। ইমিগ্রেশনে আগের মতো অতিরিক্ত সময় ব্যয় করতে হবে না।
জানা যায়, ২০১০ সালের জুন মাসে হাতে লেখা পাসপোর্টের যুগ থেকে শতভাগ মেশিন রিডেবল পাসপোর্টের (এমআরপি) যুগে প্রবেশ করে বাংলাদেশ। তবে বিশ্বের সঙ্গে তাল মেলাতে বাংলাদেশও ই-পাসপোর্ট কার্যক্রম শুরুর উদ্যোগ নেয়। ২০১৬ সালে ই-পাসপোর্টের জন্য প্রকল্প হাতে নেয় সরকার। এ বছরের শুরুতে এসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মুজিববর্ষের উপহার হিসেবে ই-পাসপোর্টের কার্যক্রম উদ্বোধন করেন।
ই-পাসপোর্টে গুরুত্ব দেওয়ার বিষয়টি স্পষ্ট করেই তুলে ধরলেন ই-পাসপোর্ট প্রকল্প পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাইদুর রহমান খাঁন। তিনি সারাবাংলাকে বলেন, আমরা খুব শিগগিরই নতুন এমআরপির জন্য আবেদন ও পুরনো এমআরপি রি-ইস্যুর কার্যক্রম বন্ধ করে দেবো। এখন আমরা এমআরপি ছাপার কাজ কমিয়ে ই-পাসপোর্ট ছাপার কাজ বাড়িয়েছি, যেন গ্রাহকরা যথাসময়ে ই-পাসপোর্ট হাতে পান।
এই প্রকল্প পরিচালক বলেন, নতুন একটি সফটওয়্যারের সঙ্গে আমরা কাজ করছি। প্রথম দিকে কিছু সমস্যা ছিল, সেগুলো অনেকাংশে কমে এসেছে। আশা করছি সময়ের সঙ্গে আমাদের কাজের গতিও বাড়বে।
এক প্রশ্নের জবাবে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাইদুর বলেন, সারাদেশে আমাদের ৬৯টি আরপিও (আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস) রয়েছে। এর মধ্যে ৫২টিতে আমরা ই-পাসপোর্ট কার্যক্রম শুরু করতে পেরেছি। আগামী ১৫ নভেম্বরের মধ্যে বাকি ১৭টি আরপিওতেও ই-পাসপোর্টের কার্যক্রম চালু হবে। অর্থাৎ এই সময়ে দেশের যেকোনো পাসপোর্ট অফিস থেকেই ই-পাসপোর্ট গ্রহণ করা যাবে।
ই-পাসপোর্ট প্রকল্পের উপপরিচালক লে. কর্নেল মোহাম্মদ শরীফুল ইসলাম জানালেন, পাসপোর্ট পেতে যেন ভোগান্তি না পোহাতে হয়, তার জন্য সারা সর্বোচ্চ সেবা দিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। তিনি বলেন, এখানে প্রতিদিন ত্রুটিপূর্ণ আবেদন নিয়ে অসংখ্য পাসপোর্ট গ্রাহক আসছেন। তাদের আমরা নির্ভুলভাবে আবেদন এনরোলমেন্ট করতে সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছি। আমাদের লক্ষ্য— একজন ব্যক্তিকেও যেন পাসপোর্টে পেতে ভোগান্তি পোহাতে না হয়।
অধিদফতরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে এটুকু স্পষ্ট— দেশে এমআরপি’র দিন শেষ। এখন পাসপোর্ট করতে চাইলে ই-পাসপোর্টই করতে হবে। যাদের এমআরপি’র মেয়াদ উত্তীর্ণ হচ্ছে, তারাও আর নবায়ন করে এমআরপি পাবেন না। তাদেরও প্রকৃতপক্ষে ই-পাসপোর্টই নিতে হবে।
এদিকে, পাসপোর্ট আবেদনকারী অনেকেরই প্রশ্ন— এমআরপি’র বদলে ই-পাসপোর্ট পেলে বিদেশে যাওয়ার ক্ষেত্রে কোনো বাড়তি ঝামেলা পোহাতে হবে কি না। বিশেষ করে স্বল্পশিক্ষিত বা প্রান্তিক পর্যায়ের কেউ দেশের বাইরে যেতে চাইলে তাদের কোনো অসুবিধা হবে কি না।
এরকম আশঙ্কা একদম উড়িয়ে দিচ্ছেন পাসপোর্ট অধিদফতরের কর্মকর্তারা। তারা বলছেন, বরং ই-পাসপোর্ট বাড়তি সুবিধা নিয়ে আসবে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কর্মকর্তা বললেন, ই-পাসপোর্ট থাকলে ঝামেলা কম। যারা কম বোঝেন বা কিছু বোঝেন না, তাদের জন্য বরং ই-পাসপোর্ট থাকলে ইমিগ্রেশন পার হওয়া সহজ। ইমিগ্রেশনে যত ঝামেলা, সেগুলো এমআরপিতেই হয়ে থাকে। কারণ এমআরপি পাসপোর্ট থাকলে আলাদাভাবে ইমিগ্রেশন ফরম পূরণ করার প্রয়োজন হয়। ই-পাসপোর্ট থাকলে এর কিছুই করতে হবে না। ফলে ঝামেলা কমবে।