Tuesday 15 Jul 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ভোটের হাওয়া ঘুরেছে, পাল্লা এবার বাইডেনের পক্ষে


৫ নভেম্বর ২০২০ ০১:২০ | আপডেট: ৫ নভেম্বর ২০২০ ০৮:৫৭
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বদলে গেছে ভোটের হাওয়া। এ যেন পেন্ডুলাম। দোলক একবার এদিকে যায় তো আরেকবার যায় ওদিকে। উত্তেজনার পারদ যেন তুঙ্গে। এবারের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের পরিস্থিতিটা এমনই। শেষ পর্যন্ত পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে, ‘টানটান উত্তেজনা’টাও যেন কিছুটা ম্লান পরিস্থিতি বোঝাতে। ইংরেজিতে যাকে বলে ‘নেইল বাইটিং ফিনিশিং’, ঠিক তেমন পরিস্থিতিই তৈরি হয়েছে এই নির্বাচন ঘিরে। আর সবশেষ পরিস্থিতি বলছে, এবার বর্তমান প্রেসিডেন্ট রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ছাড়িয়ে ডেমোক্রেট প্রার্থী জো বাইডেনের পক্ষেই পাল্লা কিছুটা হেলে পড়েছে।

বুধবার (৪ নভেম্বর) বাংলাদেশ সময় দিবাগত রাত সোয়া ১টায় মার্কিন বার্তা সংস্থা এপি’র হিসাব বলছে, উইসকনসিনে সারাদিন পিছিয়ে থেকেও শেষ পর্যন্ত জয়ের পর জো বাইডেনের পক্ষে এরই মধ্যে ইলেকটোরাল কলেজ জমা হয়েছে ২৪৮টি। বিপরীতে ট্রাম্পের ঝুলিতে এখন পর্যন্ত রয়েছে ২১৪টি ইলেকটোরাল কলেজ।

বিজ্ঞাপন

অনেকেই বলতে পারেন, ভোটগণনার শুরু থেকেই তো বাইডেন এগিয়ে রয়েছেন। একবারের জন্যও ট্রাম্প তাকে স্পর্শ করতে পারেননি ইলেকটোরাল কলেজের হিসাবে। তাহলে এই উত্তেজনাটা এলো কোথা থেকে? প্রকৃতপক্ষে কেবল এই ইলেকটোরাল কলেজের সংখ্যা দিয়ে নির্বাচনের উত্তেজনাটা ঠিক বোঝা যাবে না। এর জন্য যেসব রাজ্যের ভোটগণনা এখনো শেষ হয়নি, সেই রাজ্যগুলোতে ক্ষণে ক্ষণে চিত্র পাল্টে যাওয়ার পরিস্থিতি বুঝতে হবে।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন নিয়ে আরও খবর-

ফ্লোরিডা-টেক্সাস ফের ট্রাম্পের দখলে, বাইডেনকে ধরে ফেলছেন ট্রাম্প

শুরু থেকে যদি ভোটগণনার চিত্র দেখা যায়, বাইডেন যখন ইলেকটোরাল কলেজ দুইশ স্পর্শ করে ফেলেছেন, তখন ট্রাম্পের ঝুলিতে ইলেকটোরাল কলেজ মাত্র একশ’র ঘর স্পর্শ করছে। দেখতে দেখতে বাইডেন ২২৪টি ইলেকটোরাল কলেজে পৌঁছে যান। ট্রাম্প তখনো দেড়শ’র কাছেও যাননি। তবে এখান থেকেই আবার শুরু হয় ট্রাম্পের অগ্রযাত্রা।

বাইডেনকে ২২৫-এ স্থির রেখেই ট্রাম্প পৌঁছে যান ডাবল সেঞ্চুরির ল্যান্ডমার্কে। দেখতে দেখতে ইলেকটোরাল কলেজের ব্যবধান নামিয়ে আনেন ১২টিতে। অর্থাৎ ২১৩টি ইলেকটোরাল কলেজ জমা করেন ট্রাম্প। ভোটগণনা শেষ না হওয়া বাকি রাজ্যগুলোতে তখন বেশ বড় ব্যবধানে এগিয়ে ছিলেন ট্রাম্প। অর্থাৎ বাইডেন বরাবরই এগিয়ে থাকলেও ট্রাম্পের সম্ভাবনাকেই তখন বেশি মনে হচ্ছিল। তবে কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে সেই চিত্রও বদলে গেছে।

বুধবার মধ্যরাতের চিত্র বলছে, বাইডেনের ২৪৮টি ইলেকটোরাল কলেজের বিপরীতে ট্রাম্পের ইলেকটোরাল কলেজ ২১৪টি। আর মাত্র ৭৬টি ইলেকটোরাল কলেজের হিসাব বাকি আছে। আর রাজ্য বাকি আছে সাতটি। এই সাতটি রাজ্যের ফলই চূড়ান্ত হিসাবে বলবে, কে শেষ হাসি হাসবেন।

বাইডেনের পাল্লা ভারী যে হিসাবে

যে ছয়টি রাজ্যে ভোটগণনা এখনো চলছে, তার মধ্যে দুইটি রাজ্যে এখন পর্যন্ত এগিয়ে রয়েছেন ডেমোক্রেট বাইডেন। দু’টিতেই অবশ্য ভোটের ব্যবধান খুব সামান্য। নেভাদায় বাংলাদেশ সময় দুপুর পর্যন্ত ৩ শতাংশ ভোটের ব্যবধানে এগিয়ে থাকলেও বর্তমানে ট্রাম্পের সঙ্গে বাইডেনের ব্যবধান মাত্র শূন্য দশমিক ৬ শতাংশ। এখনো ৩৩ শতাংশ ভোট গণনা বাকি আছে।

এদিকে, মিশিগানের পরিস্থিতি বাইডেনের জন্য খুবই সন্তোষজনক। সারাদিন এই রাজ্যে পিছিয়ে থাকার পর এখন বাইডেনই রয়েছেন এগিয়ে। ৯৬ শতাংশ ভোটগণনা শেষে মিশিগানে বাইডেন এগিয়ে রয়েছেন শূন্য দশমিক ৯ শতাংশ ভোটের ব্যবধানে।

দুইটি রাজ্যেই ব্যবধান ১ শতাংশের কম হওয়ার কারণে ভোটগণনার পরিমাণ কম বাকি থাকলেও ব্যবধান অতিক্রম করা খুবই সম্ভব ট্রাম্পের পক্ষে। তবে যেভাবে বাইডেন পেছনে থেকে এসে এগিয়ে গেছেন, তাতে ট্রাম্পের সম্ভাবনা এই দুইটি রাজ্যে তেমন কেউ দেখছেন না।

এই দুইটি রাজ্যের মধ্যে নেভাদায় ছয়টি ও মিশিগানে ১৬টি ইলেকটোরাল কলেজ রয়েছে। অর্থাৎ দুই রাজ্য মিলিয়ে ইলেকটোরাল কলেজ রয়েছে ২২টি। ২৭০টি ইলেকটোরাল কলেজের ম্যাজিক্যাল ফিগারে পৌঁছাতে এখনকার পরিস্থিতিতে ঠিক এই ২২টি ইলেকটোরাল কলেজই বাইডেনের জন্য যথেষ্ট। ফলে এগিয়ে থাকা দুইটি রাজ্য নিশ্চিত হলে হোয়াইট হাউজও চার বছরের জন্য নিশ্চিত হবে বাইডেনের জন্য।

মেইল ইন ব্যালটে বাজিমাত?

শুরু থেকেই ডেমোক্রেটরা এই নির্বাচনে ‘মেইল ইন ব্যালট’ বা আগাম ভোটে গুরুত্ব দিয়ে আসছিলেন। নির্বাচনে ভোটগণনায় এসে দেখা যাচ্ছে, সেই ‘মেইল ইন ব্যালট’ই সম্ভবত কথা বলছে বাইডেনের পক্ষে। ব্যাটলগ্রাউন্ড বা সুইং স্টেট উইসকনসিন ও মিশিগানে দীর্ঘ সময় পিছিয়ে থাকলেও পরে মেইল ইন ব্যালটের কল্যাণেই এগিয়ে গেছেন বাইডেন। অথচ দুপুর পর্যন্ত ভোটগণনা বাকি থাকা ব্যালটগ্রাউন্ড বা সুইট স্টেটগুলোর প্রায় সবগুলোতেই এগিয়ে ছিলেন ট্রাম্প। একে একে মেইল ইন ব্যালট গণনা শুরু হতেই এগিয়ে যেতে থাকেন বাইডেন।

এদিকে, সুইং স্টেটের মধ্যে এখন পেনসিলভ্যানিয়া রয়েছে সবার দৃষ্টিতে। ২০টি ইলেকটোরাল কলেজের এই রাজ্যে এখন পর্যন্ত ট্রাম্প এগিয়ে রয়েছেন ৮ শতাংশ ভোটের ব্যবধানে। তবে এখানকার ৩৬ শতাংশ ভোটগণনা এখনো বাকি। ধারণা করা হচ্ছে, এর প্রায় পুরোটাই মেইল ইন ব্যালট। সেক্ষেত্রে মিশিগান বা উইসকনসিনের মতো শেষ পর্যন্ত পেনসিলভ্যানিয়াতেও বাইডেন এগিয়ে যেতে পারেন— এমন সম্ভাবনা কেউ উড়িয়ে দিচ্ছেন না। আর সেটা বাস্তব হলে তো কথাই নেই। আগের ২৭০ থেকে তখন বাইডেন একলাফে চলে যাবেন ২৯০-তে। অর্থাৎ ট্রাম্পের সব সম্ভাবনা একেবারেই উড়িয়ে দিতে পারবেন ডেমোক্রেটদের এই প্রার্থী।

ট্রাম্পের কি তবে কোনো সম্ভাবনাই নেই?

চূড়ান্ত ফল না আসা রাজ্যগুলোতে চলমান পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে, অর্থাৎ যে রাজ্যে যিনি এগিয়ে রয়েছেন তিনিই বিজয়ী হলে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের জন্য আসলে কোনো সুযোগ থাকবে না। কারণ ২৭০টি ইলেকটোরাল কলেজ নিশ্চিত হবে বাইডেনের। ট্রাম্পকে ২৬৮টি ইলেকটোরাল কলেজ নিয়ে আক্ষেপে পুড়তে হবে। তবে কি ট্রাম্পের কোনো সম্ভাবনাই নেই?

খাতা-কলমের হিসাব বলছে, ট্রাম্পের সেই সম্ভাবনাকে বাস্তবে রূপ দিতে হলে সেই পথে ‘যদি-কিন্তু’ একটু বেশিই। প্রথমত, যে চারটি রাজ্যে তিনি এগিয়ে রয়েছেন, সেগুলোকে কোনোভাবেই হারাতে পারবেন না তিনি। এ ক্ষেত্রে আলাস্কাতে তিনি কিছুটা হলেও নিরাপদ ব্যবধানে এগিয়ে রয়েছেন। প্রায় অর্ধেক ভোটগণনা বাকি থাকলেও বাইডেনের ৩৩ শতাংশের বিপরীতে ট্রাম্পের পক্ষে রয়েছে ৬২ শতাংশ ভোট। অর্থাৎ প্রায় দ্বিগুণ ব্যবধানে এগিয়ে ট্রাম্প।

এদিকে, জর্জিয়াতে ৫ শতাংশ ভোটগণনা বাকি রয়েছে। এ অবস্থায় তিনি এগিয়ে রয়েছেন ১ দশমিক ৭ শতাংশ বা প্রায় ৮২ হাজার ভোটের ব্যবধানে। নর্থ ক্যারোলাইনাতে ৯৪ শতাংশ ভোটগণনা শেষে ট্রাম্প এগিয়ে রয়েছেন ১ দশমিক ৪ শতাংশ বা প্রায় ৭৭ হাজার ভোটের ব্যবধানে। এই দুইটি রাজ্যে ব্যবধান ধরেই রাখতে হবে ট্রাম্পকে।

পেনসিলভ্যানিয়া রাজ্যটি নিয়ে সবচেয়ে বেশি দুশ্চিন্তায় থাকতে হচ্ছে ট্রাম্পকে। আগেই বলা হয়েছে, এই রাজ্যে এখন পর্যন্ত ৮ শতাংশ ব্যবধানে এগিয়ে থাকলেও ৩৬ শতাংশ ভোট গণনা করা বাকি, যার বেশিরভাগই সম্ভবত মেইল ইন ব্যালট। অর্থাৎ এই ৩৬ শতাংশের বড় একটি অংশ ডেমোক্রেটদের দখলে যেতে পারে। তা সত্ত্বেও যদি এই রাজ্যটিতে যদি জয় ধরে রাখতে পারেন ট্রাম্প, সেটিও আসলে তার জয় নিশ্চিত করার জন্য যথেষ্ট নয়।

ট্রাম্পকে যদি জিততেই হয়, তাহলে বাইডেন এগিয়ে থাকা যেকোনো একটি রাজ্যে জয় ছিনিয়ে আনতে হবে ট্রাম্পকে। এ ক্ষেত্রে নেভাদা ও মিশিগান— দুইটি রাজ্যেই বাইডেনের সঙ্গে তার ভোটের ব্যবধান খুবই কম। উইসকনসিনে তো ট্রাম্প ফের ভোটগণনার দাবি তুলেছেন। সেক্ষেত্রে যেকোনো একটি রাজ্যে ট্রাম্প জয় ছিনিয়ে আনতে পারলেই বাইডেনকে ছিটকে পড়তে হবে, ট্রাম্পই পৌঁছে যাবেন ২৭০টি ইলেকটোরাল কলেজের ম্যাজিক ফিগারে।

বুধবার সকাল থেকেই যেভাবে ভোটের হাওয়া বইছে, তাতে করে যুক্তরাষ্ট্রের ডেমোক্রেট ও রিপাবলিক শিবিরে উত্তেজনার চোরাস্রোত থামার সুযোগ পাচ্ছে না— এটি বলাই যায়। কেবল মার্কিনিরা নয়, গোটা বিশ্বই এই নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে রয়েছে। পরতে পরতে নির্বাচনি চিত্রের ভোলবদলে তাদের উত্তেজনার পারদও যে নামার সুযোগ পাচ্ছে না— সেটিও বলাই বাহুল্য। বিভিন্ন রাজ্যের সবশেষ খবরগুলো বলছে, শেষ পর্যন্ত বৃহস্পতিবার (৫ নভেম্বর) ভোর বা সকালে গিয়ে হয়তো এই উত্তেজনা প্রশমেনের সুযোগ মিলবে। তার আগ পর্যন্ত হিসাব-নিকাশ চলতে থাকুক বাইডেন-ট্রাম্পকে ঘিরে।

ইলেকটোরাল কলেজ ব্যাটলগ্রাউন্ড স্টেট মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন-২০২০ মেইল ইন ব্যালট সুইং স্টেট

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর