৬৮ কোটি টাকার জলবায়ু প্রকল্পে ৩৭ কোটি টাকাই দুর্নীতি: টিআইবি
৫ নভেম্বর ২০২০ ১৮:০৩
ঢাকা: জলবায়ু পরিবর্তনে বিশেষ ভূমিকা রাখতে সরকারের গৃহীত সাতটি প্রকল্পে বরাদ্দ দেওয়া ৬৮ কোটি ১৬ লাখ টাকার মধ্যে ৩৭ কোটি ৭ লাখ টাকাই দুর্নীতি-অনিয়মের মাধ্যমে অপচয় করা হয়েছে বলে জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। জলবায়ু প্রকল্পগুলোর মধ্য থেকে বাছাই করা সাতটি প্রকল্প নিয়ে দুই বছর গবেষণা চালিয়ে এসব তথ্য ও অনিয়মের প্রমাণ মিলেছে বলে টিআইবি জানিয়েছে।
সোমবার (৫ নভেম্বর) সকালে এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান। ‘বাংলাদেশে জলবায়ু পরিবর্তন প্রশমন অর্থায়ন ও প্রকল্প বাস্তবায়নে সুশাসনের চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক গবেষণাটি সংবাদ সম্মেলনে উপস্থাপন করা হয়।
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান গবেষণার তথ্য তুলে ধরে বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত প্রকল্পগুলোর মধ্য থেকে যে সাতটি প্রকল্প নিয়ে গবেষণা করা হয়েছে, তাতে দেখা গেছে— এসব প্রকল্পে অর্থায়নের ক্ষেত্রে প্রায় ৫৪ শতাংশ অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। গবেষণায় অণুবীক্ষণ কিংবা পর্যবেক্ষণ করা প্রকল্পগুলোর প্রতিটিই সরকারের প্রকল্প। তারপরও বিধিমালা লঙ্ঘিত হচ্ছে। কারণ এসব প্রতিষ্ঠানগুলোর জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার কোনো ব্যবস্থা নেই। এমনকি এসব প্রকল্পে যুক্ত মহলগুলোর কাউকে জবাবদিহিতার আওতায় আনার দৃষ্টান্তও নেই। প্রকল্প প্রণয়ন, বাস্তবায়ন এবং অর্থায়নে যুক্ত যে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো আছে, তাদের মধ্যে পর্যাপ্ত কোনো সমন্বয় নেই।
ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, জলবায়ুর পরিবর্তনে জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে বহু অঙ্গীকার আমরা দেখেছি। কিন্তু এসব অঙ্গীকারের কার্যকর বাস্তবায়ন ঠিকমতো খুঁজে পাওয়া যায় না। এটি হচ্ছে মোটা দাগে আমাদের উৎকণ্ঠার একটি বিষয়।
তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় যে পরিমাণ অর্থ সহায়তা পাওয়ার কথা, সে তুলনায় মাত্র ৬ শতাংশ অর্থ আমরা পেয়েছি। এর মধ্যে ১৫ শতাংশই অনুদান। বাকিগুলো ঋণ ও অন্যান্য শর্তসাপেক্ষে ব্যবস্থাপনা করা হয়েছে। কিন্তু এসব অর্থায়নে বাস্তবায়ন করা প্রকল্পগুলোতে যে চিত্র উঠে এসেছে, তা সরকারের পক্ষ থেকে আন্তর্জাতিক অর্থায়ন নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে খুবই হতাশাব্যঞ্জ। অথচ সুযোগ থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশে জলাবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব প্রশমনের সেই সুযোগ নিতে পারেনি। এজন্য কারিগরি দক্ষতার ঘাটতি এবং সদিচ্ছার অভাবও অন্যতম সংকট বলে মনে করছে টিআইবি।
ড. ইফতেখারুজ্জামান আরও বলেন, পরিবেশের সুরক্ষায় আন্তর্জাতিক যে অঙ্গীকার, তার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় রয়েছে। পরিবেশ রক্ষায় আমাদের যে সাংবিধানিক অঙ্গীকার, তাকে যথাযথ গুরুত্ব না দিয়ে নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ উৎপাদন না করে উল্টো কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রকল্পে ব্যাপকভাবে বিনিয়োগ করা হচ্ছে। এতে জনগণের ওপর স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব বিস্তার করবে। গবেষণায় সেটি পরিষ্কারভাবে বুঝা যাচ্ছে। এর ফলে বিশেষ করে দেশের প্রতিবেশ, পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যে ঝুঁকি বাড়ছে। গবেষণা বলছে, বর্তমান সরকার যে কয়লাভিত্তিক প্রকল্পগুলো হাতে নিয়েছে, তাতে ১১৫ মিলিয়ন টন জীবাশ্ম বাড়বে।
তিনি আরও বলেন, আমরা দেখছি যে জলবায়ুতে ক্ষতিগ্রস্ত একটি দেশ বাংলাদেশ। সেই জায়গায় সমাধান না খুঁজে আমরা উল্টো দূষণকারী দেশে পরিণত হচ্ছি। আমরা যে সাতটি প্রকল্পকে দুর্নীতি ও সুশাসনের দিক থেকে পর্যবেক্ষণ করেছি, সেখানেই স্পষ্ট উঠে এসেছে— দুর্নীতি, সুশাসনের অভাব ও দক্ষতার ঘাটতি রয়েছে। যেসব প্রকল্পে গবেষণা করা হয়েছে, সেগুলোতে দেখা গেছে জনগণের তুলনায় রাজনৈতিক বিবেচনা গুরুত্ব বেশি পেয়েছে।
টিআইবি’র এই নির্বাহী পরিচালক বলেন, যেসব প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন, সেগুলো সক্ষমতা, প্রকল্পের প্রযোজ্যতা, জন অংশগ্রহণের ব্যবস্থা, স্থানীয়ভাবে প্রকল্পের চাহিদা বা গুরুত্ব বিবেচনা না করে রাজনৈতিক বিবেচনায় প্রণীত হচ্ছে এবং বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এর ফলে একদিকে আর্থিক অপচয়, অন্যদিকে প্রশমনের বাস্তবিক কোনো সুফল আমরা পাচ্ছি না। বরং একশ্রেণির প্রভাবশালী মহল অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে লাভবান হচ্ছে।
৫৪ শতাংশ আর্থিক দুর্নীতি অনিয়ম জলবায়ু পরিবর্তন জলবায়ু প্রকল্প টিআইবি দুর্নীতি ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলন সংবাদ সম্মেলন