বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইট খুলে জালিয়াতি, গ্রেফতার আরও ২
১৭ নভেম্বর ২০২০ ১৮:৩৪
চট্টগ্রাম ব্যুরো: মিথ্যা ঘোষণায় আমদানি করা পণ্য খালাসের জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ভুয়া ওয়েবসাইট খুলে জালিয়াতির অভিযোগে আরও দু’জনকে গ্রেফতার করেছে সিআইডি। এ নিয়ে এই জালিয়াতির ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলায় পাঁচ জনকে গ্রেফতার করা হলো।
সোমবার (১৬ নভেম্বর) রাতে তাদের গ্রেফতারের পর মঙ্গলবার (১৭ নভেম্বর) বিকেলে দু’জন আদালতে দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন সিআইডির চট্টগ্রাম অঞ্চলের বিশেষ পুলিশ সুপার মুহাম্মদ শাহনেওয়াজ খালেদ।
গ্রেফতার দু’জন হলেন— আতিকুর রহমান রাসেল ও রাহাত হায়দার চৌধুরী রানা। এদের মধ্যে রাসেলকে নগরীর আগ্রাবাদ এবং রানাকে বড়পোল এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন সিআইডির এই কর্মকর্তা।
আরও পড়ুন- বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ভুয়া ওয়েবসাইট খুলে কাস্টমসের সঙ্গে জালিয়াতি
এর আগে গ্রেফতার তিন জন হলেন— চট্টগ্রামের সিঅ্যান্ডএফ প্রতিষ্ঠান খান এন্টারপ্রাইজের মালিক গোলাম মওলা খান ও তার ছোট ভাই গোলাম রসুল খান এবং ভুয়া ওয়েবসাইট সৃজনকারী আবুল খায়ের পারভেজ। এই তিন জনও আদালতে জবানবন্দি দেন।
ঢাকার চকবাজারের মেসার্স সিয়াম এন্টারপ্রাইজ চলতি বছরের শুরুর দিকে ১৩ হাজার ৫২০ কেজি চীনাবাদাম ও ৪ হাজার ৫১০ কেজি জলপাই আমদানির ঘোষণায় একটি চালান নিয়ে আসে চট্টগ্রাম বন্দরে। তাদের মনোনীত সিঅ্যান্ডএফ প্রতিনিধি চট্টগ্রামের খান এন্টারপ্রাইজ চালানটি খালাসের জন্য ২৩ এপ্রিল কাস্টমসে বিল অব এন্ট্রি দাখিল করে। কিন্তু গোপন সংবাদে সন্দেহজনক পণ্যের উপস্থিতির তথ্য থাকায় কাস্টমসের এআরআই শাখা চালানটির খালাস স্থগিত করে শতভাগ কায়িক পরীক্ষা করেন। এতে দেখা যায়, ওই চালানে আনা হয়েছে উচ্চশুল্কের ২১ হাজার ৬০ কেজি শিশুখাদ্য গুঁড়োদুধ।
ঘোষণা বর্হিভূত পণ্য আনায় কাস্টমস কর্তৃপক্ষ আমদানিকারককে শুল্ক বাবদ ৬৫ লাখ টাকা, শতভাগ জরিমানা বাবদ আরও ৬৬ লাখ টাকা এবং ১০ লাখ টাকা বিমোচন জরিমানা দেওয়ার আদেশ দেয়। এছাড়া আমদানি পণ্যের চালানটি খালাসের জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বা আমদানি রফতানি প্রধান নিয়ন্ত্রকের দফতরের ক্লিয়ারেন্স পারমিট কাস্টমসে জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়।
আরও পড়ুন- বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ভুয়া ওয়েবসাইট, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা
গত ১১ অক্টোবর আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান সিয়াম এন্টারপ্রাইজের পক্ষ থেকে সিঅ্যান্ডএফ প্রতিষ্ঠান খান এন্টারপ্রাইজ বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একটি ছাড়পত্র সনদ কাস্টমসে দাখিল করে। ১৩ অক্টোবর এ সংক্রান্ত বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একটি চিঠিও দাখিল করে প্রতিষ্ঠানটি। এতে বিএসটিআই’র ছাড়পত্র এবং কাস্টমসের আরোপিত জরিমানা ও শুল্ক পরিশোধ সাপেক্ষে চালানটি ছাড় দেওয়ার জন্য বলা হয়।
কাস্টমসের এআরআই শাখা যাচাই-বাছাই করে দেখতে পায়, পণ্যছাড়ের জন্য জমা দেওয়া ক্লিয়ারেন্স পারমিটে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের যে ওয়েবসাইটের ঠিকানা ব্যবহার করা হয়েছে, সেটি ভুয়া। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অফিশিয়াল ওয়েবসাইট হচ্ছে www.mincom.gov.bd। কিন্তু আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানটি www.mincomgov.com নামে একটি ওয়েবসাইট খুলে পণ্যছাড়ের ভুয়া অনুমোদন পত্র জমা দেয় বলে শনাক্ত করেন কাস্টমস কর্মকর্তারা।
এরপর গত ২৯ অক্টোবর নগরীর বন্দর থানায় চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসের সহকারী শুল্ক কর্মকর্তা সুজয় দেবনাথ বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেন। আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান ঢাকার সিয়াম এন্টারপ্রাইজের মালিক এবং সিঅ্যান্ডএফ প্রতিনিধি চট্টগ্রামের খান এন্টারপ্রাইজের মালিককে মামলায় আসামি করা হয়। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২২ (২) ও ২৩ (২) এবং দণ্ডবিধির ৪২০, ৪৬৮ ও ৪৭১ ধারায় মামলাটি দায়ের হয়। ওই মামলা তদন্তে নেমে সিআইডি তিন জনকে গ্রেফতারের পাশাপাশি জালিয়াতির রহস্য উদঘাটন করে।
সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার শাহনেওয়াজ খালেদ সারাবাংলাকে জানান, খান এন্টারপ্রাইজের মালিক গোলাম মওলা খানকে গ্রেফতারের পর জিজ্ঞাসাবাদে তিনি জানান, তার ভাই গোলাম ফারুক খান প্রতিষ্ঠানটির ব্যবসায়িক কার্যক্রম দেখাশোনা করেন। গ্রেফতারের পর গোলাম ফারুক জানান, খান এন্টারপ্রাইজের লাইসেন্স ব্যবহার করে রাসেল ও রানা নামে দু’জন চট্টগ্রাম বন্দর থেকে পণ্যছাড় করানোর ব্যবসা করেন।
রাসেল ও রানাকে খুঁজতে গিয়ে সিআইডি কর্মকর্তারা নগরীর মোগলটুলি এলাকার বাসিন্দা আবুল খায়ের পারভেজের সন্ধান পান, যিনি চট্টগ্রাম বন্দর-কাস্টমসকেন্দ্রিক ভুয়া নথিপত্র সৃজন করে জালিয়াতির সঙ্গে যুক্ত আছেন। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ভুয়া ওয়েবসাইটটিও তিনি সৃজন করেছেন জানতে পেরে তাকে গ্রেফতার করা হয়।
জিজ্ঞাসাবাদে পারভেজ জানান, ওয়েবসাইট তৈরি করলেও তার কাছে তথ্য আপলোড করার জন্য ডোমেইন ছিল না। তিনি নগরীর ও আর নিজাম রোডের ইশরাত টেকনোলজি নামে একটি প্রতিষ্ঠান থেকে ২ হাজার ৮শ টাকায় ডোমেইন কেনেন ও ১ হাজার ৬০০ টাকায় হোস্টিং স্পেস ভাড়া নেন। ইশরাত টেকনোলজির মালিক মাহবুবুর রহমান আগ্রাবাদের ক্লিক সফট বিডি নামে একটি প্রতিষ্ঠানের মালিক মোশাররফ হোসেনের কাছ থেকে ডোমেইন রেজিস্ট্রেশন করান। সেই ডোমেইনের কন্ট্রোল প্যানেলের পাসওয়ার্ডও দেওয়া হয় পারভেজকে। পরে সেই ওয়েবসাইটের মাধ্যমে ভুয়া ছাড়পত্র সনদ তৈরি করে দেওয়া হয় রাসেল ও রানাকে।
গ্রেফতার তিন জনের সঙ্গে সাক্ষী হিসেবে মাহবুবুর রহমান এবং মোশাররফ হোসেনও আদালতে জবানবন্দি দেন। সেই তথ্যের ভিত্তিতে গ্রেফতার করা হয়েছে রাসেল ও রানাকে।
শাহনেওয়াজ খালেদ বলেন, ‘রাসেল ও রানা’র কোনো সিঅ্যান্ডএফ লাইসেন্স নেই। তারা অন্যজনের লাইসেন্স ব্যবহার করে মূলত মধ্যস্বত্ত্বভোগী হিসেবে ব্যবসা করেন। চট্টগ্রাম বন্দর থেকে পণ্য ছাড় করাতে বিভিন্নসময় জালিয়াতিরও আশ্রয় নেন তারা।’
গ্রেফতার জালিয়াতি পণ্য খালাস বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ভুয়া ওয়েবসাইট ভুয়া ওয়েবসাইট খুলে জালিয়াতি মিথ্যা ঘোষণা